আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিম মানুষের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে অবস্থার আলোকে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাজিল করেছেন। কেননা এ কুরআন মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য দিক-নির্দেশনামূলক গাইড।আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদেরকে কুরআনের বিধি-বিধান পরিপূর্ণভাবে পালনের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। শয়তান তথা ইসলাম বহির্ভূত বিষয়াবলীর অনুসরন ও অনুকরণ করতে নিষেধ করেছেন এবং বিতাড়িত শয়তান মানুষের সুস্পষ্ট দুশমন তা উল্লেখ করেছেন এ আয়াতে। আল্লাহ তাআলা বলেন-আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণসুরা বাকারার ২০৮ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে উদ্দেশ্য করে ইসলামের বিধান পরিপূর্ণভাবে পালনের নিদের্শ প্রদান করেছেন।পূর্ববর্তী আয়াতে এসেছে, যারা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে জীবন উৎসর্গ করেছে; তাদের এসব পূণ্যাত্মা ত্যাগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। আর এ আয়াতে ওইসব লোকদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যারা ইসলাম গ্রহণ করা সত্ত্বেও ভুলবশতঃ ইসলামের পাশাপাশি অন্য ধর্মের কিছু কিছু বিধান মেনে চলতো।হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ অধিকাংশের মতে এ আয়াতটি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম, আসাদ ইবনে ওবায়েদ সা’লাবা প্রমুখ ব্যক্তিদের সম্পর্কে নাজিল হয়েছে।তাঁরা ইসলাম গ্রহণের পরও পূর্ববর্তী ইয়াহুদি ধর্মের ন্যায় শনিবারের পবিত্রতায় বিশ্বাস করতো। ইয়াহুদিদের জন্য হারাম করা উটের গোশতকে ইসলাম গ্রহণের পরও নিজেদের জন্য উটের গোশতকে হারাম মনে করতো।তাঁদের ধারণা ছিল, ইসলামে উটের গোশত খাওয়া আবশ্যক বা ফরজ নয়। অতএব আমরা যদি শনিবারের প্রতি সম্মান প্রদশন করি এবং উটের গোশত হালাল মনে করে তা বর্জন করি, তাহলে উভয় দিকই রক্ষা পায়।অর্থাৎ দ্বীন ইসলামও ঠিক থাকবে আবার হজরত মুসা আলাইহিস সালামের শরিয়তের প্রতিও শ্রদ্ধাবোধ থাকবে। তখনই আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাজিল করেন।আয়াতের হুকুম হলো-কোনো ধরনের ব্যতিক্রম ও সংরক্ষণ ছাড়াই, কিছু অংশকে বাদ না দিয়ে এবং কিছু অংশকে সংরক্ষিত না রেখে জীবনের সমগ্র পরিসরটাকে ইসলামে আওতাধীন করা।মানুষের চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ, মতবাদ, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা, আচরণ, ব্যবহারিক জীবন, লেনদেনসহ মানুষের জীবনের সব প্রচেষ্টা ও কর্মের পরিসরকে পুরোপুরি ইসলামের কর্তৃত্বাধীন করা।জীবনের কিছু অংশে ইসলামি অনুশাসন মেনে চলা আর কিছু অংশে ইসলামি অনুশাসনের বাইরে থাকা। এমনটি যেন না হয় সে ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট ভাষায় কুরআনের এ আয়াতের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছেন।এ আয়াতে সবচেয়ে বড় শিক্ষা- ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান। আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করার কথা বলেছেন।শুধু কতগুলো আক্বিদা-মতাদর্শ অথবা গুটি কয়েক বিধি-বিধান পালনের নাম ইসলাম নয়; বরং ইসলাম হচ্ছে একটি সার্বজনীন স্বীকৃত জীবন ব্যবস্থা। যা মানব জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তার শাখা-প্রশাকা বিস্তৃত।সুতরাং ইসলামে কিছু বিধি-বিধান পালন করা আর কিছু ছেড়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। তাই প্রত্যেককে ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করতে হবে। শয়তানের পদাংক অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এটাই আল্লাহর হুকুম তথা ইসলাম ও মুসলমানদের ঈমানের একমাত্র দাবি।পড়ুন- সুরা বাকারার ২০৭ নং আয়াতপরিষেশে...যেহেতু ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য ঈমান ও ইখলাসের দাবি হলো প্রতিটি মানুষের দ্বীন ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ। ইসলামে প্রবেশ করার পর পূর্ববর্তী জীবনের সব কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে ফিরিয়ে রাখা।তাই আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর হুকুম পালন করে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে নিজেদেরকে বিরত রেখে তার পরিপূর্ণ আনুগত্য করার মাধ্যমে পরকালের কল্যাণ লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/পিআর
Advertisement