ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর টেস্টে সম্মানজনক একটা অবস্থানই প্রত্যাশা ছিল সবার। ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভের সবুজ উইকেট পেসারদের স্বর্গরাজ্য। এই উইকেটে টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পাওয়ার পর একটা শঙ্কাই ভর করছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের হৃদয়ে। তবে তামিমের ব্যাটে ভর করে সে শঙ্কা কাটতে শুরু করে। অবশেষে সাকিব-মুশফিকের রেকর্ড জুটির পর সেই শঙ্কা কেটে গিয়ে আশা আশায় বসতি গড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের সমর্থকরা। সাবেক অধিনায়ক এবং সর্বকনিষ্ট টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান মোহাম্মদ আশরাফুলও মনে করেন, এখন বাংলাদেশের জয় পাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। বরং, তার মতে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি এখন। টেস্টে দুর্দান্ত একটি দিন কাটানোর পর জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে মোহাম্মদ আশরাফুলকে মনে হলো বেশ মুগ্ধ বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে। নিজেই বললেন, ‘খুবই চমৎকার খেলেছে বাংলাদেশ। টেস্ট ম্যাচে, বিশেষ করে প্রথম ইনিংসে- নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এমন ব্যাটিং, সত্যিই দুর্দান্ত। টেস্ট ম্যাচ এমন হলে কতই না ভালো লাগে! প্রথম ইনিংসে আমি আশা করেছিলাম সাড়ে তিনশ’ প্লাস হলেই আমরা একটা ভালো অবস্থানে যেতে পারবো। এখন যেহেতু ৫৪২ রান করে ফেলেছি, আগামীকাল যদি আরও ৬০টা রান অন্তত করতে পারে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা, তাহলে এই ম্যাচে আমরা আর হারবো না। হয় ড্র হবে, নয়তো জিততে পারবো। আমার মতে, জয়ের সম্ভাবনাই এখন বেশি ‘মুশফিকের সঙ্গে নিজের ২৬৭ রানের একটি রেকর্ড জুটি ছিল আশরাফুলের। আজ দেখলেন সাকিব-মুশফিকের জুটি। এই অসাধারণ জুটিটার কথা বলতে তিনি বললেন, ‘খুবই চমৎকার একটি জুটি। দুজনই যেভাবে খেলেছে, সাকিব যেমন অনেকটা আক্রমণাত্মক থাকে, মুশফিক যেভাবে বল বাছাই করে খেলেছে, মারার বল মারে- ঠিক সেভাবেই এই ম্যাচে খেলেছে। তারা তাদের নিজেদের সবচেয়ে শক্তিশালী দিকটা দিয়েই খেলেছে আজ। এটাই হলো সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। কেউ বাজে ক্রিকেট খেলেনি।’ উইকেটকে ব্যাটিং বান্ধব বললেন আশরাফুল। তারওপর তামিম-মুমিনুলের দারুণ শুরুর পর এমন একটা স্কোর প্রত্যাশাই করেছিলেন তিনি। আশরাফুল বলেন, ‘নিউজিলান্ডের মাটিতে তাদের বোলারদের বিপক্ষে খেলা খুবই কষ্টকর। সেখানে বাংলাদেশের এমন ব্যাটিং, সত্যিই অসাধারণ। তবে আমি বলবো, উইকেটটা ছিল চমৎকার। পুরোপুরি ব্যাটিং বান্ধব উইকেট। প্রথমে তামিম-মুমিনুল যে ব্যাটিং করেছিল, তখনও মনে হয়েছিল উইকেটে যথেষ্ট সহযোগিতা আছে। আজ আর কোনো সংশয় ছিল না। খুবই চমৎকার উইকেট। দুর্দান্ত আউটফিল্ড।’ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি বাজে ব্যাটিংয়ের পর এমনটা খুবই প্রত্যাশিত ছিল সবার কাছে। সেটাই বললেন আশরাফুল, ‘খুবই ভালো একটা জুটি গড়েছে সাকিব-মুশফিক দুজনই। আবার এমন এক সময়ে, যখন আমরা ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে বাজে ব্যাটিং করে এসেছি। ওই দুই সিরিজে প্রতিদিনই ভালো একটা শুরুর পর ধারাবাহিকতা তৈরি হচ্ছিল; কিন্তু আমরা সেগুলো ধরে রাখতে পারিনি, হারিয়ে ফেলেছি। আজ সেটা আর হারাইনি। ধরে রাখতে পেরেছিলাম। ভাগ্যও ছিল সঙ্গে । সাকিব দু’তিনটা সুযোগ পেয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা, তারা খেলেছেও অসাধারণ।’ বাংলাদেশ যে অনেক এগিয়ে গেছে, এ ব্যটিংই হলো তার বড় প্রমাণ। আশরাফুলও মানেন এই কথা। তিনি বলেন, ‘এই মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা আছে আমার। ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিলাম। সে তুলনায়, বাংলাদেশ এখন অনেক বেশি এগিয়েছে। এগুনোটাই স্বাভাবিক। যখন আমরা খেলেছি, তখন এতগুলো পারফরমার দলে ছিল না। এখন আমাদের দলে অনেক ভালোমানের ব্যাটসম্যান রয়েছে। ২০টার বেশি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা আছে বেশ কয়েকজনের। তিনজন তো আছে, যাদের ৪০টার বেশি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা আছে।’ নিজের রেকর্ড ভেঙেছে। আশরাফুলের সে আক্ষেপ নেই। কারণ রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্য। তিনি বলেন, ‘আমাদের রেকর্ডটা আগেই ভেঙেছে তামিম আর ইমরুল। কারণ, আমি আর মুশফিক সর্বোচ্চ ২৬৭ রানের জুটি গড়েছিলাম। সেটা ভেঙে তামিম-ইমরুল করেছিল ৩১২ রান। তবে পঞ্চম উইকেট জুটিতে আমার আর মুশফিকেরটা ছিল এতদিন সর্বোচ্চ। সেটা ভেঙেছে সাকিব-মুশফিক। রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙ্গার জন্য। এটা কোনো সমস্যা নয়। আমাদের রেকর্ড ভেঙেছে- এটা স্বাভাবিক। অন্য দিক দিয়ে দেখলে দেখবেন, মুশফিক প্রথমে ২০০ রান করেছিল। এরপর তামিম করলো ২০৬। এখন সাকিব করলো ২০১৭। রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্য।’আইএইচএস
Advertisement