আজকের খেলাটা ছিল প্রথম টেস্ট ম্যাচ। প্রত্যাশিতভাবেই শুরুটা হয়েছে আমাদের। এর আগেই একবার আলোচনা করেছিলাম, দলটা নিউজিল্যান্ডে রয়েছে প্রায় এক মাস হয়ে গেছে এবং এতদিনে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলার কারণে কন্ডিশনের সঙ্গে অনেকটা অভ্যস্ততা তৈরি হয়ে গেছে। তবুও প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংস দেখে আমাদের একটু অবাকই হতে হয়েছে। অবাক হলাম এ কারণে, যে লোকটাকে আমরা পুরো সফরে দলের সঙ্গে রেখে একটি ম্যাচও খেলাইনি, বাংলাদেশের ক্রিকেটে যাকে একমাত্র টেস্ট খেলোয়াড় মনে করা হয়- সেই মুমিনুল হককে আজকের আগে কোথাও তাকে খেলাইনি আমরা। একটা প্র্যাকটিস ম্যাচেও না। ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে তো না-ই। সেই মুমিনুল আজ যে খেলা দেখিয়েছে, সেটা ছিল সত্যিই দেখার মতো। ধারা ভাষ্যকাররা যখন বলছিলেন, মুমিনুলের ব্যাটিং যেন ক্যারিবীয় কিংবদন্তি আলভিন কালিচরনের মতো এবং তার মতোই ছোট্ট একটা বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান, তখন গর্বে আমার বুকটা ভরে উঠেছিল। তবে ওই সময় গর্বে যতটা বুক ভরে উঠছিল, ততটাই আফসোস লাগছিল, যে এমন একজন সলিড ক্রিকেটারকে আমরা ফিফটি ফিফটি কিংবা টি-টোয়েন্টির মতো ক্রিকেটে একটি ম্যাচেও ট্রাই করে দেখলাম না।যেখানে ব্যাটসমস্যানরা একের পর এক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছিল, সেখানে মুমিনুল একমাত্র ব্যাটসম্যান যে উইকেট ধরে খেলতে পারে এবং আমরা সেটা আবারও দেখতে পেলাম। একই সঙ্গে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে যে একাদশ নির্বাচনে ভুল ছিল তার আবারও প্রমাণ পেলাম। তামিমের ইনিংসটার দিকে তাকালে মনে হবে যেন, সে খুব আক্রমণাত্মক খেলা খেলেছে; কিন্তু আমি বলবো যে সে একটা ভালো ভিত গড়ে দিয়ে এসেছে। এটা তার নিজস্ব স্টাইল। যদিও টেস্ট ম্যাচে এমন স্টাইল হওয়া উচিত নয়। তারপরও আমি বলবো, কন্ডিশনকে জয় করে সে দারুণ শুরু করে দিয়ে এসেছে। ইমরুলকে দেখে মনে হয়েছে তার ভেতর আত্মবিশ্বাসের চরম অভাব বিরাজ করছে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সুন্দর সেট হয়ে আউট হয়ে গেছে। তারপরও মুমিনুল আর মাহমুদউল্লাহ জুটিটা বেশ ভালো একটা অবস্থান গড়ে দিয়েছে। যদিও সারাদিনে বৃষ্টির কারণে অর্ধেক খেলাই হয়নি। তারপরও আমি বলবো যে, দিনটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। আমাদের পক্ষে ফিফটি এবং ওদের পক্ষে ফিফটি। আমি বলবো, আজকের দিনটা ড্র। দু’দলই সমান সমান।নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদি এবং নেইল ওয়েগনারকে দেখে মনে হলো, তারা খুবই আক্রমণাত্মক। তাদের লাইন এবং লেন্থ ছিল দারুণ। উইকেট এবং কন্ডিশনের সহায়তা নিয়ে তারা খুব ভালো বোলিং করছিল। তারপরও আমি বলবো, আমাদের ব্যাটসম্যানরা সুন্দর ট্যাকল দিয়েছে তাদেরকে। বিশেষ করে মুমিনুল। তার কথায় আবারও ফিরে এলাম। তাকে দেখে মনে হয়েছে, সে একজন কমপ্লিট ব্যাটসম্যান। তার মত এমন একজন কমপ্লিট ব্যাটসম্যান কিন্তু বাংলাদেশের যে কোনো ফরম্যাটের জন্য তৈরি। তাকে শুধু শুধু টেস্ট ব্যাটসম্যানের দোহাই দিয়ে বাইরে বসিয়ে রেখেছি অন্য ফরম্যাটগুলোতে। নিজেকে সে আবারও প্রমাণ করেছে, যে কোনো পরিস্থিতিতে, যে কোনো বোলারের সামনে সে উইকেট ধরে রেখে ভালো খেলতে পারে। টি-টোয়েন্টি ফ্রাঞ্চাইজি লিগ বিপিএলেও কিন্তু দারুণ ব্যাটিং করেছিল সে।মুমিনুলের ব্যাটিং দেখে এবং তাকে যেভাবে ট্রিট করা হয় শুধুমাত্র টেস্ট খেলোয়াড় হিসেবে- তাতে মনে হলো বাংলাদেশে শুধু কী একটাই টেস্ট খেলোয়াড়? এটা তো সম্পূর্ণ ভুল। এখানে প্রশ্ন জাগে, দল নির্বাচনে নির্বাচকদের কতটা ভুমিকা থাকে এবং সেখানে কোচের কতটুকু নিয়ন্ত্রণ থাকে? প্রথম টেস্টের মাত্র প্রথম দিন শেষ হয়েছে। মাথায় রাখতে হবে, এখনও কিন্তু চারদিন বাকি আছে। আবহাওয়াকে আমি বড় একটা সহায়ক বলবো না। কারণ, বাজে আবহাওয়ার মধ্যেও ব্যাটসম্যানরা ভালো ব্যাট করেছে। প্রথম দিনের ধাক্কাটা যখন আমরা সহ্য করে ফেলেছি, তখন আশা করবো যে, পরের দিনগুলোতেও এভাবে ব্যাট করবে বাংলাদেশ। যদিও আমাদের টপ অর্ডারে তিনজন আউট হয়ে গেছে। তারপরও মুমিনুল, সাকিবের পর মুশফিক, সাব্বিরের ওপর আমাদের যথেষ্ট ভরসা আছে, ইনশাআল্লাহ তারা ভালো খেলবে।তবে দিনের শুরুতে একাদশ দেখে খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। সবই ঠিক ছিল; কিন্তু এই দলে পেসার রুবেলকে খুব আশা করেছিলাম। তার নাম না দেখে হতাশই হতে হলো। কারণ দলে যে তিনজন পেসারকে নেয়া হয়েছে এদের সর্বমোট অভিজ্ঞতা হলো দুটি মাত্র টেস্ট। তাসকিন আর শুভাশিসের অভিষেক হলো। কামরুল ইসলাম রাব্বি খেলেছে দুই ম্যাচ। টেস্টে এত অনভিজ্ঞ পেস অ্যাটাক নিয়ে আর কোনো দল খেলতে নামে কি না আমার সন্দেহ আছে। রুবেলকে না নেয়ার কোনো কারণই দেখছি না। যেখানে সে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে দারুণ বোলিং করেছে। বলে গতি আছে, লাইন লেন্থ আছে, সুইং আছে, সর্বোপরি অভিজ্ঞতা আছে। তারপরও এমন কী সমস্যা হলো যে তাকে দলে নেয়া হলো না? শুভাশিস বা রাব্বি এমন কী ভালো পারফরম্যান্স তার চেয়ে বেশি করে ফেলেছে যে রুবেলকে বাইরে রাখতে হবে? এটা ছিল পুরোপুরি ভুল এবং একটি আনস্মার্ট সিদ্ধান্ত। বোলিংয়েই হয়তো আমরা এর খেসারত দেখতে পাবো। দ্বিতীয় দিনের জন্য আমার প্রত্যাশা থাকবে, যতক্ষণ পারা যায় মুমিনুল-সাকিব জুটি যেন টেনে নিয়ে যায়। আশা করবো, আবহাওয়া যদি ভালো থাকে, তাহলে দ্বিতীয় দিন লাঞ্চ পর্যন্ত অন্তত যেন এই জুটিটা টিকে থাকে। তবে কাল সকালে ওরা (নিউজিল্যান্ড) দারুণ একটা আঘাত হানবে আমাদের ওপর। এ কারণে আশা করবো মুমিনুল এবং সাকিব যদি লাঞ্চ পর্যন্ত ব্যাট করতে পারে কিংবা আরও ২০-২২ ওভার ব্যাট করতে পারে, তাহলে নিশ্চিত আমরা সাড়ে তিনশ থেকে চারশ পর্যন্ত যেতে পারবো এবং আমরা বেশ আত্মবিশ্বাসী এ দলটা নিয়ে। এই টেস্টে ভালো করতে হলে, সাড়ে তিনশ থেকে চারশ করতেই হবে।আইএইচএস/এমএস
Advertisement