জাতীয়

কর্মদিবসে ফুটপাতে হকার বসতে দেয়া হবে না

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছেন, সাপ্তাহিক কর্মদিবসে রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল ঢাকার কোনো এলাকায় জনগণের চলাচলের পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। অফিস ছুটির দেড় ঘণ্টা পর অবস্থানভেদে হকাররা তাদের ব্যবসা করতে পারবে। বুধবার সকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত হকার্স পুনর্বাসন ও হলিডে মার্কেট চালু প্রসঙ্গে হকারদের সঙ্গে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।সাঈদ খোকন বলেন, লাইনম্যানধারীরা আসলেই চাঁদাবাজ। হকার নেতাদের তালিকা অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এই চাদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন হকারদের আইডি কার্ডের একটা প্রস্তাব এসেছে আমরা সেটা চালু করতে পারি।আমরা সাপ্তাহে একদিন হলিডে মার্কেট নির্ধারণ করেছি। কথা এসেছে সাপ্তাহে মাত্র একদিন হলিডে মার্কেটে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করলে অন্যরা অন্যদিন কি করবে? একদিনের ব্যবসা দিয়ে তো সাত দিন চলবে না। আমরা শুক্রবারের পাশাপাশি শনিবারও হলিডে মার্কেট চালু করে দিতে পারি। এক্ষেত্রে শনিবার যেসব এলাকায় অফিস আদালত ছুটি সেসব এলাকায় আমরা হলিডে মার্কেট চালু করে দিতে পারি।মেয়র বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে হকারদেরকে রাস্তায় বসতে দেয়ার জন্য একটা প্রস্তাব এসেছে। আপাততকালীন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে হকাররা ফুটপাতে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে। কিন্তু সাপ্তাহিক কর্মদিবসে দিনের বেলায় ফুটপাত এবং রাস্তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। কর্মদিবসে দিনের বেলায় গুলিস্তান ও তার আশপাশের এলাকায় কোনো হকার বসতে দেয়া হবে না। এটা আমাদের সিদ্ধান্ত। এটা নিশ্চিত করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএসসিসিকে সহযোগিতা করবে।খোকন বলেন, এ সিদ্ধান্ত আগামী রোববার থেকে কার্যকর হবে। যদি কোনো হকার এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে তাহলে সিটি কর্পোরেশনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সিটি কর্পোরেশনকে সহযোগিতা করবে।মেয়র বলেন, যারা তালিকাভুক্ত হকার তারা যদি ইচ্ছা করেন পেশা পরিবর্তণ করে চাকরি বা বিদেশ যেতে চান তারা আমাদের কাছে আবেদন করতে পারেন। আমরা সরকার বা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে তাদের বিদেশ যাওয়া বা চাকরির জন্য সুপারিশ করব। যদি স্থানীয়ভাবে তাদের চাকরির জন্য কোনো সুযোগ থাকে তাহলে আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা ব্যবস্থা নেবো। মেয়র বলেন, আজকের এই সিদ্ধান্ত আগামী রোববার থেকে কার্যকর করা হবে। এ বিষয়ে ডিএমপি ডিএসসিসির প্রয়োজন অনুযায়ী সার্বিক সহযোগিতা করবে। এদিকে মতবিমিনয় সভায় হকারদের আগে পুনর্বাসন করে পরে উচ্ছেদ বা অন্য সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি জানিয়েছেন হকার নেতারা। তারা বলেন, সিটি কর্পোরেশন মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান করে হকার্সদের উচ্ছেদ করে। কিন্তু তারাতো গরীব কোথায় যাবে? তাদের আগে পুনর্বাসন করেন, পরে উচ্ছেদ।বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা মহানগরে ৮ থেকে ৯ লাখ হকার রয়েছে। দক্ষিণে ৫ থেকে ৬ লাখ হকার আছে। এখানে সবাই গরিব, নিরীহ। এদের সামান্য আয়।তিনি বলেন, ‘আমরা চাই রাস্তায় কোনো হকার থাকবে না। কিন্তু রাস্তার ওপরে যে জায়গাটা আছে সেখানে কিছু স্থান দিতে হবে। কার্ডের মাধ্যমে হকার চিহ্নিত করতে হবে।’তিনি আরও বলেন, ‘আজ হকারা একটা স্থান নিতো এক লাখ, দুই লাখ টাকায়। এরা কারা। এদের চিহ্নিত করেন। হকার উচ্ছেদ করা যাবে না। এরা কোথায় যাবে? এরা মা-বাবা-ছেলে নিয়ে ঢাকায় থাকে।’বাংলাদেশ ছিন্নমূল হকার্স লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন মজুমদার বলেন, ‘হকার পুনর্বাসন একটা বিরাট কঠিন কাজ। আমরা বলেছি- ঢাকাকে তিলোত্তমা শহর বানাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। রাস্তা দখলের জন্য হকাররা দায়ী নয়। এজন্য প্রশাসনের দৃষ্টি দিতে হবে। আগে হকার পুনর্বাসন করেন। এরপর উচ্ছেদ।’জাতীয় হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি আরীফ চৌধুরী বলেন, হকারদের পুনর্বাসন করতে হবে। হলিডে মার্কেট নিয়ে হকাসদের মধ্যে একটা অসন্তোষ দেখা দিয়েছি। হকাররা হলিডে মার্কেটে গেলে ফুটপাতে বসতে পারবে কিনা?তিনি বলেন, হকারদের পরিকল্পনামাফিক বসাতে হবে। হলিডে মার্কেটগুলো অন্যান্য ফুটপাতের মধ্যে চলে আসে কিনা?বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এমএ কাশেম বলেন, ‘প্রতিটি ফুটপাতে একজন করে লাইনম্যান চাঁদাবাজ থাকেন। একটা ফুটপাতে ১০০জন থাকলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করেন একজন লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজ। এই লাইনম্যানকে নিয়ন্ত্রণ করেন কথিত প্রশাসনের লোক। এই লাইনম্যানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।তিনি জানান, হকার ট্রাফিক পুলিশ গঠন করতে হবে। তাকে কার্ড দিতে হবে। তারা সিটি কর্পোরেশন থেকে কার্ড নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বসবে। এজন্য একটা আইন করতে হবে। যদি আইন তৈরি করা না যায় তাহলে দিনদিন হকার বাড়বে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুল ওহাব ভুইয়া, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডো এমকে বখতিয়া প্রমুখ।এমএসএস/এমআরএম/এমএস

Advertisement