প্রবাস

সব প্রস্তুতি সম্পন্ন : শিগগিরই কর্মী নেবে মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। শিগগিরই রফতানি শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ‘জিটুজি প্লাস’ ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ হবে দেশটিতে। একটি সূত্রে জানা গেছে, বায়োমেট্রিক পরীক্ষার পর অনলাইনে কর্মীর নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে একজন কর্মীর নিয়োগে দীর্ঘ সময় লাগলেও নতুন এ ডিজিটাল পদ্ধতিতে দুই সপ্তাহের মধ্যেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক নিয়োগ নিশ্চিত করা হবে। মালয়েশিয়ায় নতুন এ পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগের কারিগরি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে বেস্টিনেট ও সিনারফ্লাক্স নামের দুটি কোম্পানি।বেস্টিনেট ও সিনারফ্লাক্সের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও দু’দেশের সরকারের পক্ষ থেকে কর্মী নিয়োগে চূড়ান্ত ঘোষণার পরই শিগগিরই শুরু হবে শ্রমিক নেয়া।বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়াতেও দালালচক্রের থাবায় প্রতারণার কারণে শ্রমবাজারটি বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। বর্তমানে দু’দেশের সরকার কর্মী নিয়োগে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। নতুন পদ্বতিতে দালালচক্র সুবিধা না করতে পারে।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ অনলাইনে কর্মী নিয়োগ হবে সে দেশে। মালয়েশিয়া সরকার সে দেশের ৫টি প্রতিষ্ঠানকে কর্মী নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনুমোদন দিয়েছে। বেস্টিনেট, সিনারফ্ল্যাক্স, ইউকেএসবি, এস-ফাইভ, বায়োটেক নামের পাচঁটি ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠান তদের কর্মী নেয়ার সব কাজ সম্পন্ন করেছে।এ দিকে মালয়েশিয়া সরকার যে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে কর্মী নেয়ার অনুমতি দিয়েছে তাদের প্রক্রিয়া সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশ থেকে ৮ সদস্য বিশিষ্ট সাংবাদিক টিম মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন।একটি সূত্রে জানা গেছে, মোট ১২ ধাপ অনুসরণ করে বাংলাদেশ থেকে অনলাইন পদ্ধতিতে কর্মী নেয়া হবে। আর অনলাইন প্রক্রিয়ায় কর্মী নেয়া শুরু হলে জালিয়াতি আর অনিয়মের কোনো সুযোগ থাকছে না। অভিবাসন ব্যয় কমে যাওয়ার পাশপাশি মালয়েশিয়ায় এসে কর্মীরা কাজের নিরাপত্তা, বীমা সুবিধাসহ আইএলও সব সুযোগ সুবিধা পাবে।মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, অনলাইন প্রক্রিয়ার প্রথমেই মালয়েশিয়ায় কোনো কোম্পানি কিংবা কারখানার মালিক কর্মীর চাহিদাপত্র অনলাইনে তাদের সরকারের কাছে আবেদন করবেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিরা কারখানার বাস্তবতা যাচাই করে রিপোর্ট দেবে এবং চাহিদাপত্র ঠিক হলে মালয়েশিয়ান সরকার কর্মী নেয়ার অনুমোদন দেবে। এরপর মালয়েশিয়ার সরকারই কর্মী নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিকে মনোনীত করবে। পরে সেই চাহিদাপত্র বাংলাদেশে মালয়েশিয়ান দূতাবাসে যাবে। মনোনীত রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী বাছাই, মেডিকেলসহ ১২টি ধাপ পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নেয়া হবে।এ ব্যাপারে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহিদুল ইসলাম  বলেন, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের দ্বার যেকোনো সময় খুলছে। মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা পেলেই কর্মী নিয়োগ শুরু হবে। এবার নতুন পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগে প্রতারণা বন্ধ হবে। কর্মীর চাকরির নিরাপত্তা থাকবে।‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে কবে নাগাদ বাংলাদেশ থেকে কর্মী আসা শুরু হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে কুয়ালালামপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলর সায়েদুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের দিক থেকে একদম প্রস্তুত রয়েছি। মালয়েশিয়া সরকার যখন চাইবে কর্মী আসা শুরু হবে।তিনি বলেন, যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি ক্লিন ইমেজের, এমনকি যাদের ট্রাক রেকর্ড ভালো তারাই ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ পাবে।সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনতে কারিগরি সহায়তাকারী বেস্টিনেট ও সিনারফ্লাক্স-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে কর্মী মালয়েশিয়া এলে প্রথমে তিন বছরের জন্য ভিসা দেয়া হবে। পরে এক বছর করে ৫ বছর মালয়েশিয়ায় থাকতে পারবেন তারা। ভিসা নবায়ন ফি মালিকপক্ষ বহন করবে। মালিকপক্ষ চাইলে কর্মীরা সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কোম্পানিতে কাজ করতে পারবে।অনলাইন পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানো হলে কর্মীর অভিবাসন ব্যয় প্রায় অর্ধেকের বেশি কমে যাবে। মালিকপক্ষের ডিমান্ড লেটার ইচ্ছা করলেই কেউ বিক্রি করতে পারবে না। এখন সঠিক প্রক্রিয়ায় মেডিকেল হবে, ভুয়া মেডিকেল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর মেডিকেল করার জন্য ২৫টি সেন্টার নির্মাণ করা হবে। আর একজন কর্মী বিদেশ যেতে ৬ মাস থেকে ৯ মাস অপেক্ষা করতে হবে না। দুই সপ্তাহের মধ্যেই অনলাইন প্রক্রিয়ায় কর্মী যেতে পারবে।আগে ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ কর্মীর কোনো বীমা ছিল না, এখন শতভাগ বীমা নিশ্চিত করা হবে কর্মীদের। বীমা না হলে কর্মী নেয়া সাপোর্ট করবে না অনলাইন প্রক্রিয়া। আর আগে কর্মী মারা গেলে কিংবা আহত হলে কোনো কর্মী সুযোগ-সুবিধা পেতো না। এখন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। মালয়েশিয়ায় প্রায় ৮০ হাজার চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান আছে, তারা বৈধ শ্রমিকের অপেক্ষায় আছে। বাজার খুললেই এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।বেস্টিনেটের প্রতিষ্ঠাতা দাতো শ্রী মোহাম্মদ আমিন বিন আব্দুল নুর বলেন, ‘নতুন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগে শ্রমিকের নিরাপত্তা, বীমা, বেতন-ভাতাসহ সব সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এখন কর্মীরা বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় এলে এসব সুযোগ-সুবিধা চাকরিতে যোগদানের দিন থেকেই পাবেন। বাংলাদেশের কর্মীরা এর আগে নানা ঝুঁকিপূর্ণ পথে মালয়েশিয়ায় এসেছে। এতে বিভিন্ন সময় শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য হঠাতে ই-টেন্ডারিংয়ের মতোই অনলাইনে কর্মী নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মালয়েশিয়া সরকার।উল্লেখ্য, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ রেখে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী ম্যানুফ্যাকচারিং, কনস্ট্রাকশন, এগ্রিকালচারসহ ৫টি খাতে বিপুলসংখ্যক কর্মী নেয়ার ঘোষণা দেয় দেশটি। তবে চুক্তির পরদিনই মালয়েশিয়া সরকার বিদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ রাখে। কিছুদিন পরে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তির আলোকে শিগগিরই শুরু হচ্ছে শ্রমিক রফতানি।বিএ

Advertisement