বিশেষ প্রতিবেদন

আনিকার চিরকুট : ‘শামীম তোমার একটা ভুলেই এতো বড় ঘটনা’

অভাবের সংসারে ঝগড়া-বিবাদ থাকেই। তাই বলে সন্তানকে হত্যাসহ নিজের আত্মহত্যার মতো বড় সিদ্ধান্ত মানতে পারছে না এলাকাবাসী। যদিও আনিকার চিরকুট সেটাই বলছে, যা ভাবেনি কেউ। নিজের হাতে দুই সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পর নিজেও ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। সন্তান হত্যা ও নিজের আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নয় বলেও চিরকুটে লিখেছেন আনিকা।রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন দিয়াবাড়ির ২৯/১ ভাড়া বাসায় (ছাপড়া ঘর) দুই সন্তান মেয়ে শামিমা (৬) ও ছেলে আবদুল্লাহকে (৩) হত্যার পর মা আনিকা (২৫) আত্মহত্যা করেন।পরে খবর পেয়ে দারুস সালাম থানা পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘরের দরজার ছিটকিনি ভেতর থেকে লাগানো ছিল। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, মা আত্মহত্যার আগে নিজের দুই সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।নিহত আনিকার বাবার বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুর। আর স্বামী শামীম হোসেনের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মোকসেদপুর থানার ভাবড়াশুড় গ্রামে। দারুস সালাম থানার অফিসার (ওসি তদন্ত) ফারুকুল আলম জাগো নিউজকে জানান, সংবাদ পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় গৃহবধূ আনিকার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বিছানায় চাদর ও কম্বলে মোড়ানো অবস্থায় রক্তাক্ত দুই সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।তিনি বলেন, আলামত হিসেবে ঘর থেকে রক্ত মাখা বালিশ, চাদর, ওড়না, কাপড়-চোপড়ের সঙ্গে একটি চিরকটু উদ্ধার করা হয়।মিরপুর বিভাগের দারুস সালাম জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) সৈয়দ মামুন মোস্তফা জাগো নিউজকে জানান, সম্ভবত চিরকুটটা আনিকার হাতের লেখা। সেখানে তিনি মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী না করলেও স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া ও অভিমানের বিষয়টি তুলেছেন। এ ব্যাপারে স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকের চেষ্টা চলছে।চিরকুটে আনিকা : ‘শামীম তোমার ভুলেই এতো বড় ঘটনা’চিরকুটে আনিকা তার স্বামী শামীমকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ‘শামীম তোমার একটা ভুলের জন্য এত বড় ঘটনা, তুমি ভেবেছ আমি শুধু শুনবো তা। তুমি সবার কথা ভাবো আমাদের কথা ভাবো, আমি সবাইকে ছেড়ে যাচ্ছি। থাকবো, না পৃথিবী ছেড়ে।আর বলেছিলাম না, আমি যেখানে ওরাও সেখানে একটাই কষ্ট মা ভাই বোন নানি আর ওনেকের (অনেকের) মুখ দেখতে পালাম (পারলাম) না। ছেলে মেয়ে নেয়ে (নিয়ে) গেলাম সবাই ভালো থাকো।’মাকে উদ্দেশ্য করে আনিকা চিরকুটে লেখেন, ‘আমি এই দুই হাত দিয়ে ওদের খাওয়াছি (খাওয়াইছি), তেল দিছি আর আজ আমি সেই হাত দিয়ে মারলাম আমাক (আমাকে), তোমারা মাপ করে দেও (দিও), আমাদের কপলে (কপালে) এ ছিল ওরা দুই জন নিষ্পাপ, আমার মৃত্যুর জন্য কেও (কেউ) দাই (দায়ী) না। ইতি আনিকা।’ সঙ্গে দুই সন্তানের নামও লিখেছেন তিনি।জেইউ/এসএইচএস/পিআর

Advertisement