২০০০ সালের ২৬ জুন টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু। অভিষেকেই প্রথম ইনিংসে চারশত রান করে ভারতকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। এর প্রায় পাঁচ বছর পর ২০০৫ সালের ১০ জানুয়ারি প্রথম টেস্ট জয়। মাঝে আরও বেশ কয়েকবার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। তবে স্বপ্নের পূর্ণতা পেয়েছিল হাবিবুল বাশারের হাত ধরে। জিম্বাবুয়েকে ২২৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম টেস্ট জয়ের উচ্ছ্বাসে মেতেছিল টাইগাররা। দীর্ঘ এক যুগ পরে স্মৃতি হাতড়ে বাশার শোনালেন সেই ম্যাচ জয়ের গুরুত্বের কথা।‘জয়টা তখন আমাদের বড্ড বেশি প্রয়োজন ছিল। এর আগে আমরা বেশ কিছু ম্যাচ জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও হাতছাড়া করেছি। তাই এ ম্যাচটা আমরা জিতবো বলেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে মাঠে নেমেছিলাম। এছাড়াও জিম্বাবুয়ের প্রথম সারির দল খেলতে না আসায় অভিজ্ঞতায় আমরাই ছিলাম এগিয়ে। সে ম্যাচ না জিতলে আমরা আরও পিছিয়ে পড়তাম।’- মুঠোফোনে জাগোনিউজের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই বললেন প্রথম টেস্টের জয়ী দলের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার।চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে সেদিন বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ করে ৪৮৮ রান। এরপর জিম্বাবুয়েকে প্রথম ইনিংসে ৩১২ রানে অলআউট করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয় ২০৪ রানে। ৩৮১ রানের বিশাল লক্ষ্যই ছিল জিম্বাবুয়ের সামনে। শুরুতে তাপস বৈশ্যর জোড়া আঘাতের পরও শেষ দিনে বাংলাদেশের হুমকি হয়ে উঠছিলেন ব্রেন্ডন টেলর এবং হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। তবে ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট খেলতে নামা এনামুল হক জুনিয়রের ভেল্কিতেই কুপোকাত জিম্বাবুয়ে। সঙ্গে পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজার আঘাত। ২২৬ রানের বড় জয় দিয়েই প্রথম টেস্ট জয়ের আনন্দে মাতে বাংলাদেশ।‘শেষদিনে টেলর ও মাসাকাদজা হুমকি হয়ে উঠছিল। আমরা চেষ্টা করেছিলাম তাদের দ্রুত ফিরিয়ে দিতে এবং পেরেছিলামও। সেদিনের সে জয়টা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গিয়েছিল। যদিও এরপর আমরা সেভাবে জয়ের ধারা ধরে রাখতে পারিনি। তবে বেশকিছু ম্যাচে জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়েছিলাম।’প্রথম টেস্ট জয়ে দুই ইনিংসে মোট ১২টি উইকেট নিয়ে জয়ের নায়ক এনামুল হক জুনিয়র। কম যাননি হাবিবুল বাশার সুমনও। দুই ইনিংসেই ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন তিনি। তবে প্রথম ইনিংসে আউট হয়েছেন নার্ভাস নাইনটিজের শিকার হয়ে। সেঞ্চুরি তুলে নিতে পারলে হয়তো প্রথম জয়ের মর্যাদাটা আরও রঙিন হতো অধিনায়কের জন্য। যদিও এ নিয়ে কোন আক্ষেপই কাজ করেনি তার মনে। জয়ের আনন্দ ছাপিয়ে গিয়েছিল তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে না যাওয়ার কষ্টকে।‘আমি সে ম্যাচের দুই ইনিংসের হাফসেঞ্চুরি করেছিলাম। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির খুব কাছাকাছি গিয়েছিলাম। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হয়নি। এ নিয়ে তখন আমার কোন আক্ষেপই ছিল না। আসলে জয়ের আনন্দে এতটাই বিভোর ছিলাম যে, একবারও মনে আসেনি। সবচেয়ে বড় কথা দুই ইনিংসেই আমার রানটা দলের জন্য খুব প্রয়োজনীয় ছিল। বিশেষকরে দ্বিতীয় ইনিংসে আমার ফিফটি না হলে হয়তো এতো বড় লিড দিতে পারতাম না। সে ক্ষেত্রে ফলাফল হয়তো অন্যরকম হতেও পারতো। তবে ক্যারিয়ারের এ পর্যায়ে এসে মনে হয় সেদিনের সে সেঞ্চুরিটা আমার পাওনা ছিল।’প্রথম টেস্ট জয়ের পর গত একযুগে বাংলাদেশের জয় মোট আটটি টেস্টে। দ্বিতীয় জয়টিও পেয়েছে তারা প্রথম টেস্ট জয়ের সাড়ে চার বছর পর। সীমিত ওভারের ক্রিকেটের মত তেমন আগায়নি ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরনো সংস্করণ। এটা খুব ভালো করেই জানেন বাশার। কারণ বর্তমান দলের অন্যতম নির্বাচকই তিনি। তবুও আশায় বুক বাঁধছেন চলতি বছরেই অন্য বাংলাদেশকে দেখা যাবে। সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়কে উদাহরণ হিসেবে দেখছেন তিনি।‘টেস্ট ক্রিকেটে ১৬-১৭ বছর পার করার পরও হয়তো আমরা সেভাবে জয় পাইনি। তবে তেমন টেস্ট ম্যাচও কিন্তু খেলিনি। আর ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন আমরা অনেক বদলে গিয়েছি। কদিন আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কিন্তু ভালো খেলেই জিতেছি। এর আগে গত দুই বছরে আমাদের টেস্ট ক্রিকেটের ফলাফল কিন্তু খুব খারাপ নয়। অর্থাৎ দলে এখন আত্মবিশ্বাস এসেছে যে, আমরাও টেস্ট জিততে পারি। আশাকরি আগামী মৌসুমগুলোতে আমাদের অনেক জয় আসবে।’প্রথম টেস্ট জয়ের একযুগ পূর্তির ঠিক দুদিন পরেই ওয়েলিংটনে কিউইদের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। সীমিত ওভারের ছয়টি ম্যাচে হেরে কোণঠাসা হলেও টেস্ট ক্রিকেটে ভালো খেলার সামর্থ্য আছে বলে মনে করেন বাশার। দল হিসেবে ভালো খেলার আশায় আছেন প্রথম টেস্ট জয়ী দলের এ অধিনায়ক।আরটি/আইএইচএস/পিআর
Advertisement