নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজে সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়ার পর এখন টেস্টেই কিছু করে দেখানোর পালা বাংলাদেশের। ১২ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথমটি খেলতে এখন ওয়েলিংটনে বাংলাদেশ দল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে মাঠে নামার আগে আজ (মঙ্গলবার) ১০ জানুয়ারি দিনটিকে প্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করতে পারে মুশফিকুর রহীমের দল। একযুগ আগে এদিনই যে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা!প্রথমবারের মত টেস্ট জয়ের স্বপ্ন নিয়েই সেদিন মাঠে নেমেছিল হাবিবুল বাশার সুমনের টিম বাংলাদেশ। এর ঠিক ১০ মাস আগেই (১০ মার্চ, ২০০৪) জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে গ্র্যান্ড ফ্লাওয়ার-অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারদের শক্তিশালী দলটিকে ওয়ানডেতে ৮ রানে হারিয়ে ৫ বছরের জয়ের ক্ষরা কাটিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই জিম্বাবুয়ে দল যখন ফিরতি সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসলো, তখন তারা ছিল একরকম বিধ্বস্ত একটি দল। বর্ণবাদসহ নানা জটিলতায় অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার-গ্র্যান্ড ফ্লাওয়ার-হিথ স্টিকরা দেশের হয়ে আর না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ সময় তাতেন্দা তাইবুর নেতৃত্বে জিম্বাবুয়ে দল ঢাকায় আসে দুই ম্যাচের টেস্ট ও ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে। জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশের শক্তির পার্থক্য তাই কমে আসে অনেকটাই। বাংলাদেশ ওই সিরিজেই প্রথম টেস্ট এবং একই সঙ্গে সিরিজ জয় করে। ওয়ানডেতেও ৩-২ এ জিতে রঙ্গিন পোশাকেও প্রথমবারে মত সিরিজ স্বয়ের আনন্দে মাতে টাইগাররা। সেই সিরিজ থেকে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে আলাদা একটি রোমাঞ্চ যেমন তৈরি হয়েছিল, একই সঙ্গে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন এক অধ্যায়। চট্টগ্রামের এম.এ. আজিজ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে প্রথম টেস্ট ম্যাচটি শুরু হয়েছিল ৬ জানুয়ারি। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিন থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। দুর্দান্ত শুরু করেন জাভেদ ওমর-নাফিস ইকবালের উদ্বোধনী জুটি। ৯১ রানে পড়ে বাংলাদেশের প্রথম উইকেট, ফিরে যান জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লু। দুই রানের ব্যাবধানে ফিরে যান নাফিস ইকবালও। তবে এরপরই বাংলাদেশের ক্রিকেটের মিস্টার ফিফটিখ্যাত অধিনায়ক হাবিবুল বাশার উইকেটে আসেন এবং ৯৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে বড় ইনিংসের ভিত গড়ে দেন। ১৪টি চারে সাজানো ইনিংসটির পথে তৃতীয় উইকেটে আশরাফুলের সঙ্গে গড়েন ৬০ রানের জুটি। চতুর্থ উইকেটে রাজিন সালেহকে সঙ্গে নিয়ে গড়েন ১১৯ রানের জুটি। বাংলাদেশ তাদের প্রথম দিন শেষ করে ৪ উইকেটে ২৮০ রান নিয়ে। হবিবুল ফিরে গেলেও প্রথম দিনটি অপরাজিত থেকে শেষ করেন রাজিন সালেহ এবং আফতাব আহমেদ।দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশ স্কোর বোর্ডে আরও ২০৮ রান যোগ করে। ৪৮৮ রানে শেষ হয় বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস। রাজিন সালেহ আউট হন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৯ রান করে। খালেদ মাসুদ ৪৯, মোহাম্মদ রফিক ৬৯ ও মাশরাফি ৪৮ রানের ইনিংস খেলেন।জিম্বাবুয়ে তাদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪ উইকেটে ৮৪ রান করে দ্বিতীয় দিন শেষ করে। তৃতীয় দিনে তাদের ৩১২ রানে গুঁড়িয়ে দেয় বাংলাদেশের বোলাররা। কিংবদন্তি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক তুলে নেন ৫ উইকেট। মাশরাফি ৩টি ও তাপস বৈশ্য ১ উইকেট নেন।প্রথম ইনিংসে ১৭৬ রানে লিড পাওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে ২০৪ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। এই ইনিংসেও হাবিবুল বাশারের ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৫৫ রান। ফলে ৩৮০ রানের টার্গেট পায় তাতেন্দা তাইবুর জিম্বাবুয়ে। এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চতুর্থ দিনই ৪৬ রান তুলতে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে সফরকারীরা। ২০০৫ সালের ৯ জানুয়ারি রাতে তাই এক সুখ স্বপ্ন নিয়ে নিদ্রায় যায় সমগ্র বাংলাদেশ।পরের দিন সেই স্বপ্ন মুঠোয় এসে ধরা দেয় এনামুল হক জুনিয়রের হাত ধরে। ৬ উইকেট তুলে নিয়ে জিম্বাবুয়েকে ১৫৪ রানে গুঁড়িয়ে দিতে বড় অবদান রাখেন তিনি। আর তাতেই বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের পাশে লেখা থাকে ২২৬ রানের বড় এক জয়। নিজেদের ৩৫তম টেস্টে এসে প্রথম জয়ের দেখা পায় টিম বাংলাদেশ। সাগর পাড়ের শহর চট্টগ্রামের আনন্দ গর্জন সেদিন মিশে গিয়েছিল গোটা দেশে। লাল সবুজের পতাকা হাতে সাদা পোশাকে প্রথমবারের মত বিজয় উদযাপনে মেতেছিল টাইগাররা।সেই দিনের স্মৃতি কি আজ বাংলাদেশ দলের কারও মনে পড়ে? এক যুগ আগের সেই দলটির কেউই এখনকার টেস্ট দলে নেই। মাশরাফি এখনও খেললেও, তিনি অনানুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট ছেড়ে দিয়েছেন আরও অর্ধযুগ আগে। তবে যারা আছে তারা নিশ্চই সেই প্রথম জয়টিকে বুকে লালন করে থাকেন। এক যুগ আগে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের সেই আনন্দকে মনে করে বৃহস্পতিবার ওয়েলিংটনে ঘুরে দাড়াতেই পারে মুশফিকুর রহীমরা। এমন ক্ষণে এই স্বপ্ন ক্রিকেট অনুরাগীরা দেখতেই পারে।আইএইচএস/আরআইপি
Advertisement