ফিচার

দিয়াশলাই কেমন করে এলো!

দিয়াশলাই শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত দীপশলাকা- হিন্দি দিয়াশলাই থেকে। দিয়াশলাই তৈরির চেষ্টা শুরু হয় ১৬৮০ সালে। হামবুর্গের হেজিস ব্র্যান্ড সাদা ফসফরাস আবিষ্কারের পর আয়ারল্যান্ডের রবার্ট বয়েল দেখতে পান যে, সাদা ফসফরাসের সঙ্গে গন্ধক মিশালে মিশ্রণটি জ্বলে উঠে আগুনের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এতে রাসায়নিক বিক্রিয়া তীব্র হয়। আগুনও নিয়ন্ত্রণে রাখা কষ্টকর হয়। এ কারণে এ পদ্ধতি বাতিল হয়ে যায়।১৮২৮ সালে লন্ডনের স্যামুয়েল জোম্বা ক্লোরো পটাশ নামে গাঢ় সালফিউরিফ এসিডের বিক্রিয়া ঘটিয়ে দিয়াশলাই তৈরি করেন। প্রমিথিউসের স্মরণে নাম রাখেন প্রমিথিয়াল ম্যাচ। স্যামুয়েলের দিয়াশলাইতে ছোট কাচের বিডে আলাদা-আলাদা খোপে এসিড আর রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত কাগজ থাকত। আগুন জ্বালানোর প্রয়োজন হলে ওই বিডটি ভাঙতে হতো। এতে মিশ্রণটিতে রাসায়নিক বিক্রিয়া হতো। ফলে কাগজে আগুন ধরে যেত। একই সময়ে ইংল্যান্ডের জন ওয়াকার পটাশিয়াম ক্লোরেট এবং অ্যান্টিমনি সালফাইডের মিশ্রণে ঘষে ব্যবহারের উপযোগী প্রথম দিয়াশলাই লুসিফার তৈরি করেন।এরপর ১৮৩০ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী শার্শ সোটিয়া সাদা ফসফরাস দিয়ে তৈরি করেন ঘর্ষণ দিয়াশলাই। এ দিয়াশলাইয়ের সুবিধা এবং অসুবিধা দুটিই ছিলো। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়াতে এ দিয়াশলাই জ্বালানো গেলেও পকেটে রাখা যেত না। একটু বেশি তাপ মাত্রাতেই (৩৫হ্ন সে.) নিজে নিজে জ্বলে উঠত এ দিয়াশলাই। এর ধোঁয়া ছিলো বিষাক্ত। এরপর ১৮৪৫ সালে আন্তনভন স্ক্রুটারের ‘লাল’ ফসফরাস আবিষ্কার করেন। এটি ছিলো এক যুগান্তকারী ঘটনা। কারণ এটি দাহ্য হলেও বাতাসে জ্বলে উঠত না। আর এর বিষক্রিয়াও ছিলো কম। লাল ফসফরাস ব্যবহার করার পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় সাদা ফসফরাসের দিয়াশলাই। এর প্রধান কারণ সাদা ফসফরাসের দিয়াশলাই ব্যবহারে কারখানা কর্মীরা দাঁতের ও চোয়ালের রোগে আক্রান্ত হতো। ১৮৫৫ সালে নিরাপদ দিয়াশলাইয়ের প্রচলন করেন সুইডেনের জে.ই.লুন্ডস্ট্রম।মানুষের হরেকরকম শখের মধ্য দিয়াশলাইয়ের বাক্স ও মার্কা জমানো অন্যতম একটি শখ। ১৯৯২ সালে জাপানের তেইচি ইয়েসি জাওয়া ৭৫ বছর ধরে ১৫০টি দেশের ৭ লাখ দিয়াশলাই মার্কা জমিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে নাম লিখিয়েছেন। দিয়াশলাইয়ের বক্স ও মার্কা জমানোর শখকে বলা হয় ‘ফিলুমেরি’। যারা এগুলো সংগ্রহ করেন তাদের বলা হয় ফিলুমেনিস্ট।এইচএন/আরআই

Advertisement