অর্থনীতি

অলস পড়ে আছে ১২০ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা অলস নগদ অর্থ (তারল্য) পড়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ উন্নয়ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মঞ্জুর হোসেইন।জুলাই-ডিসেম্বর’২০১৪ এর ঘোষিত মুদ্রানীতির উপর বৃহস্পতিবার বিআইডিএসের সেমিনারে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মঞ্জুর হোসেইন।বিআইডিএসের মহা-পরিচালক মোস্তফা কামাল মুজেরির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।মঞ্জুর হোসেইন বলেন, তারল্য কমানোর জন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৬ শতাংশ সি.আর.আর. নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতেও তারল্য তেমন কমছে না। উচ্চ সুদহার, ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ কমে যাওয়া, আর্থিক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ প্রদানে বিভিন্ন ধরনের বাঁধা নিষেধ আরোপের কারণে তারল্য বাড়ছে।অতিরিক্ত তারল্য বেশিদিন পুঞ্জিভূত থাকলে তা ব্যাংকিং খাত এবং সামগ্রীক অর্থনীতির জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।মঞ্জুর হোসেইন বলেন, দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৬৫ শতাংশের বেশি। তাই বর্তমান মুদ্রানীতিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না।বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, টেকসই অর্থনীতির জন্য মুদ্রানীতি প্রণয়নের চেষ্টা করেছি। দ্রব্যের মূল্য, বেকার সমস্যা, পাবলিক গ্রোথ ইত্যাদি বিবেচনায় মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হবে। দেশের বর্তমান অর্থনীতির সাথে সমন্বয় করে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হলে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।বিদেশি ঋণ সম্পর্কে তিনি বলেন, শুধুমাত্র এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড প্রতিষ্ঠানকেই বিদেশি ঋণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে বিদেশি ঋণ নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো ঝামেলা হবে না।গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারির ফলে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে। গত ২ বছরে আমরা ২টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়েছি;দুর্নীতির দায়ে একজন প্রধান নির্বাহীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাছাড়া অনলাইন নজরদারি বাড়ানোর ফলে ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম কমেছে।বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মুদ্রানীতি করে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব নয়। প্রাইভেট সেক্টরে নির্ধারিত গ্রোথের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চেষ্টা করতে হবে। ব্যাংকিং খাতে প্রতিযোগিতা নেই বলেই অধিক তারল্য থাকার পরও ঋণ সুদের হার কমাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। বিদেশি ঋণকে উৎসাহিত করে দেশীয় ব্যাংকের সুদের হার কমানো সম্ভব নয়।তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ এ.বি.এম. মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কোনো চেষ্টা করা হয়নি। প্রতিযোগিতা না থাকায় ব্যাংকিং খাতে সুদহার কমছে না। এবারের মূদ্রানীতি গ্রহণযোগ্য তবে তা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা দেখার বিষয়।সেন্টার ফর পলিসি ডাইলগ (সিপিডি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিদেশি ঋণ নেওয়া হয় লন্ডন ইন্টার ব্যাংক লেনদেনের (লাইবর) সুদহারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে। কিন্তু লাইবর রেট ওঠা নামা করায় ঋণের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সমস্যা তৈরি করতে পারে। সুতরাং এ বিষয়ে চিন্ত-ভাবনার সময় এসেছে।

Advertisement