দেশজুড়ে

রাজশাহীতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে আলুচাষ

রাজশাহীতে এবার আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। গত মৌসুমে আলুর ভালো ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় এবারও আলু চাষ করেছেন চাষিরা। সবমিলিয়ে এ বছর জেলায় ৪২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আলুচাষ হয়েছে । এখন জেলার আলু খেতগুলোয় পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। সামনে ঘন কুয়াশার আশঙ্কা থাকলেও তথ্য সেবা নিয়ে কৃষকদের পাশে রয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। রাজশাহী জেলা কৃষি দফতরের তথ্য মতে, এ মৌসুমে জেলায় ৪০ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আলুচাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর বেশি। বেশি আলুচাষ হয়েছে জেলার পবা, মোহনপুর, বাগমারা, দুর্গাপুর, তানোর ও গোদাগাড়ি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারো আলুর বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছে চাষিরা। জেলার পবা উপজেলার মৌগাছি এলাকায় গিয়ে দেখা গেলো আলুচাষিদের কর্মযজ্ঞ। যতদূর চোখ যায় কেবল আলুখেত। খেতে কাজ করছেন চাষিরা। কেউ সেচ দিচ্ছেন, কেউ টপ ড্রেসিং (আলু গাছের সারিতে মাটি তুলে দেয়া ও সরিয়ে দেয়ার কাজ) করছেন। আবার কেউ দিচ্ছেন রাসায়নিক সার। কেউ বা ছত্রাক, রোগ-বালাই ও ঘন কুয়াশার হাত থেকে ফসল বাঁচাতে কীটনাশক স্প্রে করছেন।আলুচাষিরা জানিয়েছেন, গত মৌসুমের শুরুতে আলুর দাম তুলনামূলক কম ছিল। শুরুতে প্রতি বস্তা (৮৫ কেজি) এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হলেও শেষে বিক্রি হয়েছে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকায়। শুরুতেই যারা কম দামে আলু বিক্রি করে দিয়েছেন তারা লোকসান গুণেছেন। ২৮টি কোল্ড স্টোরে সংরক্ষণ করা যায় প্রায় ৩৬ লাখ বস্তা আলু। কিন্তু উৎপাদন মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় কোল্ড স্টোরে জায়গা হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে চাষিরা পানির দামে বিক্রি করেছেন আলু। কিন্তু শেষ দিকে এসে যারা আলু বিক্রি করেছেন তারা কয়েকগুণ লাভ করেছেন। রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত আলুচাষি পবার বড়গাছি এলাকার রহিমুদ্দিন সরকার জানান, কয়েকবছর ধরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকছে। এছাড়া  আলুচাষে ব্যবহার হচ্ছে ভাল মানের বীজ। ফলে কাঙ্খিত ফলন মিলছে। এতে প্রতিবছরই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে আলুচাষ। তিনি এ বছর ১২৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন ভালো হওয়ার আশা করছেন রহিমুদ্দিন। এদিকে, রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে, চলতি জানুয়ারিতে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে অন্তত একটি মাঝারি (৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) অথবা তীব্র (৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে। এ মাসে ঘনকুয়াশাও পড়তে পাড়ে। গড়ে সূর্যকিরণ পড়তে পারে পৌনে ছয় থেকে ছয় ঘণ্টা। দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়তে পারে। হতে পারে স্বাভাবিক ১১ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত। আর এ কারণেই আলুচাষিদের ভাবনায় লেট ব্লাইট। এ মোড়ক খেতে ধরলে কমে যেতে পারে উৎপাদন। এ নিয়ে চাষিদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি জানান, রোগবালায় এড়াতে এখন থেকেই চাষিরা সতর্ক রয়েছেন। বাণিজ্যিক চাষিরা  আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। মূলত বৃষ্টিপাত কিংবা তাপমাত্রা বেড়ে গেলে লেট ব্লাইট ছড়ায়। এ রোগ দেখা দিলেই ইউরিয়া সার প্রয়োগ বন্ধ করে দিতে হবে। সপ্তাহ খানেক সেচ দেয়া যাবে না। এমনকি তরল সার প্রয়োগও বন্ধ রাখতে হবে।মোড়ক ঠেকাতে ঘন কুয়াশায় ম্যানকোজেব ম্যাটালিক্সিল (ম্যাটারিল, ম্যাটাটিকি, ম্যালিডিডু ও সিকিউর) গ্রুপের ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে। আলু ক্ষেতের যে কোনো রোগ বালাই দমন সংক্রান্ত তথ্য দিতে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে রয়েছেন বলে জানান তিনি। এ বছর আলুচাষিদের কেউ কেউ পাতায় তরল সার প্রয়োগ করছেন। কৃষিবিদদের বরাত দিয়ে এসব চাষি জানিয়েছেন, পাতায় তরল সার প্রয়োগ করলে পুরোটাই গাছ সহজেই শোসন করে। তবে শেকড়ে প্রয়োগ করলে অপচয় হয়। ফলিয়ারি ফিডিং নামের এ প্রযুক্তি এখনো জনপ্রিয়তা পায়নি মাঠে। সার সাশ্রয়ী এ প্রযুক্তি নিজ উদ্যোগে চাষিরা প্রয়োগ করছেন।বিষয়টি স্বীকার করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি বলেন, পাতার মাধ্যমে খাদ্য প্রদান কৌশলকে ফলিয়ারি ফিডিং বলা হয়। এ প্রযুক্তি আধুনিক কৃষিকে অনেক দূর গিয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো এটি রয়েছে গবেষণা পর্যায়ে। বিভিন্ন ফসলে তরল সারের প্রয়োগমাত্রা ভিন্ন। ফলও আলাদা। ফলে চাষিদের ব্যাপকভাবে এটিতে উদ্বুদ্ধ করা যাচ্ছে না। তবে কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে সীমিত পরিসরে এ প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছেন। আরএআর/পিআর

Advertisement