খালি চোখে সবাই দেখলো, জানলো এবং পরিসংখ্যানের খাতায় লেখা থাকবে ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ডের কাছে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের তুলোধুনো হওয়ার দিন। বাংলাদেশের মাটিতে দুই দুইবার ‘বাংলাওয়াশের’ পর ঘরের মাঠে এটা ব্ল্যাক-ক্যাপসদের প্রতিশোধ পূরণেরও দিন। অন্যদিকে মাশরাফি বাহিনীর এটা হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডোবারও দিন। কেউ কেউ লজ্জা কথাটা বারবার বলছেন। তাদের কাছে প্রশ্ন, নিউজিল্যান্ডের মতো দল যখন বাংলাদেশের কাছে পরপর দুইবার নাকাল, তখন নিউজিল্যান্ডের মিডিয়া কি সেটাকে লজ্জায় ডোবার দিন বলে অভিহিত করেছিল? নিশ্চয়ই না। তাই বাংলাদেশের তিন ম্যাচ পরপর হারাও তেমনি লজ্জায় ডোবার না। যাদের লজ্জা দেওয়ার কথা, তারা মানে কিউইরা তো একবার ঐ ‘লজ্জা’ শব্দটি ব্যবহার করেনি। বলছেন। হ্যাঁ, এটা সত্য, তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের পর এবার তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টির সব ম্যাচ হারলো বাংলাদেশ। এটা বড় ব্যর্থতা।একটি বাক্যই বলে দেয় অধিনায়ক মাশরাফি নিজ দলের এ পরিণতিতে কতটা দুঃখ ও যন্ত্রণাকাতর। অাজ রাতে তরাঙ্গায় টিম হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে মাশরাফির ভাষ্য, ‘ফ্র্যাকচার কেন, হাত ভেঙ্গে দু’টুকরা হয়েও যদি দল জিততো। আমরা যদি অন্তত ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একটি করে ম্যাচ জিততে পারতাম- তাহলে হাতের ফ্র্যাকচার হলেও খারাপ লাগত না। কিন্তু যা চেয়েছিলাম তা হলো না। আর যা চাইনি তা-ই হলো। ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজে একটি ম্যাচও জিততে পারলাম না। সব ম্যাচ হারলাম। আবার আমার ডান হাতের কব্জিটাও গেল ভেঙ্গে।’অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার এ যন্ত্রণাকাতর সংলাপে ফুটে উঠেছে আজকের দিনটার সত্যিকার চিত্র। হোয়াইওয়াশ, তুলোধুনো কিংবা সব ম্যাচ হারা- যাই বলা হোক না কেন, এর বাইরে আজকের ম্যাচ বা দিনের আরও একটি অন্যরকম তাৎপর্য আছে। সেটা মোটেই সুখকর নয়। আসলে আজকের খেলাটি বাংলাদেশকে পেয়েছিল শনির দশায়। একদিনে পুরো দলে ইনজুরি এসে বাসা বেঁধেছে। শনির দশাই যদি না হবে, তাহলে এক ম্যাচে তাও ২০ + ২০ = ৪০ ওভারের ম্যাচে তিন তিনজন ক্রিকেটার কেন আহত হবেন।প্রথম ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছেড়েছেন ইমরুল কায়েস। ফিল্ডিংয়ের সময় হাঁটুতে চোট পেয়ে সোজা মাঠের বাইরে ছিলেন এ বাঁ-হাতি ওপেনার। সন্ধ্যার পর টিম হোটেলে দেখা। ইমরুলেল আশাবাদী উচ্চারণ, ‘আশা করছি, বড় ধরনের সমস্যা হবে না। আমি ঠিক টেস্টের আগেরই ফিট হয়ে যাবো।’অধিনায়ক মাশরাফির ডান কব্জির ওপরের অংশ ফ্র্যাকচার হয়েছে। অন্তত ছয় সপ্তাহ তাকে মাঠের বাইরের থাকতেই হবে। আট সপ্তাহও লাগতে পারে। এটাই শেষ নয়। আরও আছে। অধিনায়ক মাশরাফির বলে কিউই ক্যাপ্টেন উইলিয়ামসনের ক্যাচ ধরতে গিয়ে বাঁ-হাতের তালুতে ব্যথা পেয়েছেন তামিম ইকবালও। এর মধ্যে মাশরাফি ও তামিমের আঘাত গুরুতর ভাবা হলেও শেষ খবর, ইমরুল কায়েসের ডান হাঁটুর ইনজুরিকে অত সিরিয়াস মনে করছেন না টিম ম্যানেজমেন্ট। সন্ধ্যায় হোটেল লবিতে দেখা। ইমরুলের অভ্যাস আছে। প্রচণ্ড খরতাপে আক্রান্ত হলে মাশরাফির ইনজুরিটাই। অর সবাই তা দেখেছেন। তামিম সেভাবে প্রকাশ করেননি। কিন্তু পরে দেখা গেছে, তামিমেরও আঘাত পাওয়ার জায়গাটি খানিক ফুলেছে। আপাতত ২৪ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে অাছেন তামিম। ব্যথা ও ফোলা বাগলে হয়তো আগামীকাল নাগদে তার ব্যাথা পাওয়া জায়গায় এমআরআই করার জোর সম্ভাবনা আছে। মাশরাফির মতো মুহূর্তে অতো ফুলে ওঠেনি। ব্যথাও নিয়ন্ত্রণের ভেতরে আছে। তামিমের শেষ আপডেট- আজকের রাতটুকু কাটার পর যদি কালকেও ব্যথা এবং ফোলা থাকে, তখনই কেবল এমআরআই করা হবে। তারপরও তামিম বড় ধরনের ঝুঁকি নিতে নারাজ। তার একটাই কথা, ‘আমার সমস্যা হলে আমি অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাবো।’রাতটুকু ভালো কাটলে আগামীকাল সোমবার এমআরআই নাও করাতে পারেন তামিম। কিন্তু ইমরুল কায়েসের হাঁটুর ইনজুরি নিয়ে তেমন ঝক্কি পোহাতে হবে না। সন্ধ্যায় বাংলাদেশের টিম হোটেলে দেখা হলো ইমরুল কায়েসের। জানালেন, ‘অাশা করছি তেমন সমস্যা হবে না। প্রথম টেস্ট শুরুর এখনো আছে চার দিন।’এনইউ/আরআইপি
Advertisement