এমনিতেই দল ছন্দে নেই। ঘরের মাঠে গত দেড় বছরের বেশি সময়ে টানা পাঁচটি সিরিজ জিতলেও নিউজিল্যান্ডে অনভ্যস্ত ও খানিক প্রতিকূল কন্ডিশনে সাফল্যের সেই জয়রথ থেমে গেছে। তার বদলে হারের বৃত্তে আটকে মাশরাফির দল। এখানে এসে জয় যেন ‘সোনার হরিণ’ হয়ে গেছে।জয় ধরা না দিলেও জয়ের সম্ভাবনা উকি ঝুঁকি দিয়েছে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে আর আগের দুই টি-টোয়েন্টি ম্যাচে কম বেশি সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু সে সুযোগ কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। শেষ ম্যাচেও টাইগারদের লক্ষ্য দুুটি। জয়ের সুযোগ তৈরি করা। এবং সেই সুযোগ কাজে লাগানো। এজন্য সবার আগে দরকার টিম পারফরমেন্স। সেটাও হচ্ছে না। পুরো সফরে টিম পারফরমেন্সও হয়নি একবারও। টিম পারফরমেন্স বহুদুরে, তিনজন ক্রিকেটার এক সঙ্গে পারফরমও করেননি। একটি জুটি হয়ত তৈরি হয়েছে। গড় পড়তা দুজন ব্যাটসম্যান হয়ত ৩০-৪০ রান করেছেন। বাকিরা ব্যর্থতার ঘানি টেনেছেন। আট ব্যাটসম্যান নিয়ে মাঠে নেমেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বোলারদের অবস্থাও ভালো না। সেখানেও কার্যকর পারফরমারের সংখ্যা খুব কম। পেসার ও স্পিনাররা মিলে সাড়াশী আক্রমণে এখনো সেভাবে কিউইদের চাপে ফেলতে পারেননি। বরং কিংউই ব্যাটসম্যান ও বোলারদের চাপে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এদিকে মাউন্ট মুঙ্গানিয়ায় আগের ম্যাচেও কিছুটা বাতাস ছিল। আর আজ তার চেয়ে অনেক বেশি বাতাস। এই বাতাসও কিন্ত বাংলাদেশের জন্য আরেক মাইনাস পয়েন্ট। তীব্র বাতাস বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই বাড়তি চিন্তার কারণ। প্রথমত, বাংলাদেশে অমন জোরে বাতাস খুব কমই বয়। বঙ্গোপসাগরে নিম্ন চাপ হলে একটু আধটু টের পাওয়া যায়। অন্য সময় কিছুই থাকে না। এই বাতাসের প্লাস ও মাইনাস দুটাই আছে। প্রথম কথা, বাতাসে পেস বোলাররা বাড়তি সাহায্য পান। কিন্তু সেটা বাতাসের অনুকূলে বল করে। বাতাসের অনুকূল থেকে বল ছুড়লে বাড়তি সঞ্চারের সম্ভাবনা থাকে। একটু আধটু ম্যুভমেন্টও হয়। কিন্তু যিনি বাতাসের বিপরীতে বল করবেন তার নাভিশ্বাষ। দৌড়ে আসতেই বাড়তি কষ্ট করতে হবে। এমন তীব্র বাতাসের বিপরীতে প্রতিটি ডেলিভারির জন্য ২০-২৫ গজ ছুটে আসা কম ঝক্কির নয়। বাড়তি শক্তি ক্ষয় হবে। একই ভাবে বাতাসের অনুকূল হাওয়া শট খেলে যতটা দুরে নেয়া যাবে, বিপরীতে থেকে ততটা নেয়া সম্ভব হবে না। এমনিতেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বিগ হিট নেবার ক্ষমতা তুলনামূলক কম। সেটা শারীরিক গঠন ও শক্তি-সামর্থ্যের কারণেই। তার ওপর বাতাসের প্রতিকুলে ছক্কা হাকাতে গেলে সমস্যাই হবে। বাতাস বলের স্বাভাবিক গতিতে বাঁধা হয়ে দাড়াবে। যতদুর যাবার কথা ছিল ততদূর যাবে না। তার আগেই পরে যাবে। দ্বিতীয় ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মাশরাফি অনানুষ্ঠানিক আলাপ চারিতায় বাতাসের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে আলাপ করতে গিয়ে ওপরের কথাগুলো বলেন। বাতাসে আরও প্রভাব ফেলে। হাই ক্যাচের ওপর চোখ থাকলেও তীব্র বাতাসে বলের গতিপথ বদলে যায় কখনো কখনো। যেখানে দাড়িয়ে বল ধরা যাবে বলে মনে হয় , বাতাসের অনুকুলে ভেসে আসা সেই ক্যাচ অনেক সময় নাগালের বাইরে চলে যায়। অঅবার বাতাসের প্রতিকুলে ভেসে আসা ক্যাচ প্রত্যাশার চেয়ে আগেই পরে যায়।বাতাসে আরও একটা সমস্যা হয়। তাহলো ফিল্ডারদের চোখে পানি চলে আসে। অনেকটা খালি চোখে মোটর সাইকেলে চড়লে যেমন হয় তেমন। তীব্র বাতাসে দৌড়াদৌড়ি করলে চোখে পানি চলে আসে। ঐ অবস্থায় হঠাৎ হাই ক্যাচ আসলে বলের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা কঠিন।বলার অপেক্ষা রাখে না, এই বাঁধা বিপত্তিগুলো বাংলাদেশে কখনই মোকাবিলা করতে হয় না। এমনকি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আরব আমিরাতের কোথাও তীব্র বাতাসে ওপরের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় না। কাজেই শুধু উইকেটের বাউন্স আর ম্যুভমেন্টই বেশি নয়। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে আরও কিছু বাহ্যিক সমস্যাও আছে। সেগুলোকে অতিক্রম করেই পারফরম করতে হয়। এখন দেখার বিষয় হলো , আজ তীব্র বাতাসে টাইগাররা কতটা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে ?এআরবি/এমআর/এমএস
Advertisement