বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয় জানিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, চলতি অর্থবছরও ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব ঘাটতি থাকবে। এর আগে ২০০৮ সালে রাজস্ব আদায়ে সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এ বছর এ হারে প্রবৃদ্ধি হলেও বড় অংকের রাজস্ব ঘাটতি থেকে যাবে।শনিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য দিয়েছে।এ সময় সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। গত অর্থবছর সিপিডি প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিল। বছর শেষে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছিল ৩৭ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। সুতরাং এটা প্রমাণিত সিপিডি সামগ্রিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে মত দিয়ে থাকে।তিনি বলেন, গত অর্থবছর রেমিট্যান্স, রফতানি আয় ও কৃষি ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল পর্যায়ে ছিল, যা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থা। বর্তমান প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে বেশ কিছু সংস্কার করতে হবে।সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছরে আর্থিক খাতে সবচেয়ে সমস্যাগ্রস্ত ছিল ব্যাংকিং খাত। এ খাতে বিপুল পরিমাণে অলস তারল্য জমা হওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে কুঋণ, হয়েছে বড় বড় কেলেঙ্কারি। ঘটেছে রিজার্ভ চুরির মতো ঘটনা। এ অবস্থায় আগামী দিনও ব্যাংকিং খাতের জন্য চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।প্রতিবেদনে সিপিডি চলতি অর্থবছরের (২০১৫-১৬) কিছু সুপারিশও তুলে ধরে। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে দেবপ্রিয় চারটি সুপারিশ করেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্যাংকিং খাত সংস্কারে কমিশন গঠন, সরকারি বিনিয়োগের গুণগত মান বাড়ানো, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সংস্কার এবং আগের বছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাকে মানদণ্ড ধরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রায় পরিবর্তন আনা।এ সময় বলা হয়, গত কয়েক বছরের তুলনায় বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমবাজার এখন অনেকটা ভালো। ফলে বিদেশে কর্মসংস্থানও বেড়েছে, কিন্তু সে অনুপাতে বাড়েনি রেমিট্যান্স। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অপব্যবহারের কারণে বেড়েছে হুন্ডি ব্যবসা এবং রেমিট্যান্স কমেছে।বিশেষ করে মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর থেকে হুন্ডির মাধ্যমে অধিক অর্থ দেশে আসছে। এ দু’টি দেশের শ্রমিকেরা ব্যাংকিং সুবিধা নেয়া থেকেও বিরত থাকছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধভাবে টাকা পাঠাচ্ছেন এসব দেশে অবস্থানরত শ্রমিকেরা।সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়ছে, কিন্তু কমছে রেমিট্যান্স। এর প্রধান কারণ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে না এসে হুন্ডির মাধ্যমে আসছে। বিশেষ করে মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের ৫০ শতাংশ টাকা দেশে আসছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হুন্ডির মাধ্যমে।তিনি আরও বলেন, তেলের দাম বিশ্ব বাজারে কমেছে। এর ফলেও রেমিট্যান্সে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কারণ সৌদি আরব থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর বাংলাদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান বেড়েছে।সংবাদ সম্মেলন আরও উপস্থিত ছিলেন- সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সিনিয়র গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন, গবেষণা পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন প্রমুখ।অনুষ্ঠানে স্টেট অব দ্য বাংলাদেশ ইকোনোমিক ইন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান।এমএ/বিএ/আরআইপি
Advertisement