চলতি অর্থ বছরে দুধ, মাংস ও ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জিত হয়েছে। দেশের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে গবাদিপশু, হাঁসমুরগি ও দুধ উৎপাদনে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে এ সফলতা অর্জিত হয়েছে।সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের কারণে মাংস, দুধ ও ডিমের উৎপাদন বিগত তিন বছরে যথাক্রমে ৩৬.১১ ভাগ, ১৯.৪৬ ভাগ ও ১৭.১৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন যথাক্রমে ৩.০৫ লাখ মেট্রিক টন, ২.৬৫ লাখ মেট্রিক টন এবং ৯১৭১ লাখটি বেশি হয়েছে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে দুধ, মাংস ও ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা গড়ে শত ভাগ অর্জিত হয়েছে। এ অর্থ বছরে দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭.৩১ মিলিয়ন মেট্রিক টন, অর্জিত হয়েছে ৯৯.৫৩ শতাংশ। মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এবার ছাড়িয়ে গেছে। এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬.০০ মিলিয়ন মেট্রিক টন, অর্জিত হয়েছে ৬.১৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন। এক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্য ১০২.৫৩ শতাংশ। ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২০৯.৪১ কোটি, উৎপাদন হয়েছে ১১৯১.২৩ কোটি। অর্জিত সাফল্য ৯৮.৫০ শতাংশ। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, দেশে মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ‘বিফ ক্যাটেল উন্নয়ন’প্রকল্পের মাধ্যমে মাংসল জাতের গরু উৎপাদন এবং দুধের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও ভ্রুণ স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন (তৃতীয় পর্যায়) এবং মহিষ উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে।সূত্র আরও জানায়, বিএলআরআই লেয়ার-২ বা ‘স্বর্ণা’নামের একটি লেয়ার স্টেইন উদ্ভাবন করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে মুরগিটির উৎপাদন সক্ষমতা সংক্রান্ত মূল্যায়ন কার্যক্রম চলমান আছে। এ মুরগিটি একটানা বছরে ২৮০টি ডিম দেয়। জানা গেছে, বর্তমানে সাভার ও রাজশাহীতে অবস্থিত কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগার ও জেলা কেন্দ্রে রক্ষিত উন্নতজাতের ষাঁড়ের বীজ সংগ্রহ করে তরল ও হিমায়িত উপায়ে সমগ্র দেশে ৩৭২৫টি কৃত্রিম প্রজনন উপকেন্দ্র ও পয়েন্টের মাধ্যমে কৃত্রিমপ্রজনন সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ সময়ে ১১লাখ ৮৫ হাজার ১০৯টি শংকর জাতের বাছুর উৎপাদিত হয়েছে। অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্তৃক মোট ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৯৮৪ জন বেকার যুবক, যুব মহিলা, দুস্থ মহিলা, ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১৪.৫৮ ভাগ বেশি।এরা দুধ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে দেশব্যাপী বিশেষ ভূমিকা রাখছে।বিএলআরআই এর একটি সূত্র জানায়, দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন আরও বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর গো খাদ্য ‘টোটাল মিক্সড রেশন’উদ্ভাবন করা হয়েছে। অঞ্চলভিত্তিক প্রাপ্ত বিভিন্ন ফর্ডার ব্যবহার করে পূর্ণাঙ্গ রেশন উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে যা ব্যবহারের মাধ্যমে খামারিরা লাভজনক উপায়ে গো-খাদ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে। বর্তমানে গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে খামারি পর্যায়ে যাচাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে। দুধ, মাংস ও ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন প্রসঙ্গে কথা হয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক (উৎপাদন) ডা. এ কে এম নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, দুধ, মাংস ও ডিম উৎপাদনের ক্ষেত্রে বছরে আমাদের একটি টার্গেট থাকে। এই টার্গেটে পৌঁছার জন্য বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। যে কারণে প্রতিবছরই উৎপাদনের সূচক বাড়ছে। এ বছর আমরা দুধ, ডিম ও মাংস উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, সুস্বাস্থ্য ও নতুন প্রজন্মের মেধা বিকাশের জন্য দুধ, ডিম, মাছ ও মাংসের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন সেক্টর নিজ নিজ অবস্থানে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। এফএইচএস/ওআর/পিআর
Advertisement