খেলাধুলা

বে ওভালে বাঙালির মিলনমেলা

নিউজিল্যান্ড এমনিতেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর, ঐশ্বর্য্যশালী একটি দেশ। নিশ্চিত  করে বলার উপায় নেই, এই শহরটা বেশি সুন্দর। নেলসনে গিয়ে মনে হবে এটাই সবচেয়ে বেশি সুন্দর। আবার নেপিয়ারে যাওয়ার পর ভাববেন, নাহ এটা বুঝি আরও বেশি সুন্দর। আর মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে এসে মনে হচ্ছে, নাহ এ শহরওতো কম সুন্দর নয়। নেপিয়ার, অকল্যান্ড, নেলসন, মাউন্ট মঙ্গানুই সবই এক। কেউ কারো চেয়ে কম না। তারপরও মাউন্ট মঙ্গানুই পর্যটকদের প্রিয় শহর। স্রষ্টা যেন নিজ হাতে তৈরি করেছেন এ শহরকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বলতে যা বোঝায়, তার সবকিছুই আছে এখানে। পাহাড় আর সমুদ্র ঘেরা। সবুজ গাছপালা আর নানা ফুলের সমাহার। এ কারণেই হ্যামিল্টন, ওয়ালিংটন আর অকল্যান্ড থেকে অনেকেই এসেছেন গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে। গত দুদিন প্রবাসি বাঙ্গালি তানভির রেজা শিমুল, মোহাম্মদ রাশেদ উজ্জামান আসাদ, মোহাম্মদ আবুল কাশেম মুন ও মোহাম্মদ মাসুম খানের সাথে কথা বলে জানা গেল এখন অনেক কিউই ছুটি কাটাতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে অবস্থান করছে। তাদের একাংশ চলে এসেছেন মাঠে। শুনে অবাক হবেন, এই যে গ্রীষ্মের ছুটিতে আসা কিউরা আজ নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দেখতে আসবেন- সেটা আগে থেকেই ঠিক করা। তাদের মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ভ্রমণে ভিতরে এ ম্যাচ দেখাও আগে থেকে ঠিক করা। সে লক্ষ্যে কয়েক মাস আগে অনলাইনে টিকেটও করে রেখেছিলেন তারা। তাই তো দেখা গেল, খেলা শুরুর ঘন্টা দেড়েক আগে থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মাঠে আসছেন অনেক কিউই। তাদের সাথে আছেন অনেক বাংলদেশিও। তাতেই একজন,  ঢাকার বনশ্রীর লতিফুল খান পলাশ। পেশায় সফট ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। থাকেন অকল্যান্ডে। এসেছেন স্ত্রী রিমাকে সঙ্গে নিয়ে। ১৬ বছর ধরে নিউজ্যিান্ডে রয়েছেন। এখন মা বাবা, ভাই-বোনসহ স্বপরিবারেই থাকেন নিউজিল্যান্ডে। অকল্যান্ড থেকে নিজেই গাড়ি চালিয়ে এসেছেন খেলা দেখতে। পলাশের অনুভব, প্রিয় জাতীয় দলের খেলা দেখতে খুব ভাল লাগে। ভাল খেললে গর্ববোধ হয়। কিউই বন্ধুদের সাথে মাথা তুলে কথা বলতে পারি। তারাও মানে আমাদের ক্রিকেট টিম ভাল। আর হেরে গেলে খারাপ লাগে। পরক্ষণে মনকে প্রবোধ দিই- ঠিক আছে। আজ পারেনি। আরেকদিন পারবে। জীবন-জীবিকার সন্ধানে দেশের বাইরে থাকা অন্তত শ’দুয়েক বাঙ্গালি এখন বে ওভালে বসে প্রিয় জাতীয় দলের খেলা দেখতে এসেছেন। কথা হলো হ্যামিল্টনে থাকা মোহাম্মদ হুমায়ুনের সঙ্গে। চট্টগ্রাম শহরের আসকার দীঘির পাড়ে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তামিম ইকবালকে দেখিয়ে বললে, আমরা চট্টগগ্রামে তার পিতা ইকবাল খানের খেলা দেখে বড় হয়েছি। ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ মোহাম্মদ হুমায়ুন পেশায়  চিকিৎসক। চাকুরি ক্ষেত্র হ্যামিল্টন। সেখান থেকে এসেছেন স্বপরিবারে। চার কন্যা ও স্ত্রী নিয়ে প্রিয় জাতীয় দলের ম্যাচ দেখতে আসা মোহাম্মদ হুমায়ুন জানালেন, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রিয় জাতীয় দল খেলতে আসলে মন-প্রাণ আকুল হয়ে যায়। চেষ্টা করি মাঠে গিয়ে জাতীয় দলকে সমর্থন জানাতে। গত বছর বিশ্বকাপে হ্যামিল্টনেই খেলা ছিল বাংলাদেশের। সে ম্যাচও মাঠে বসে দেখেছেন মোহাম্মদ হুমায়ুন। ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ এই মানুষটি এমবিবিএস পাশ করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে। সেই ছাত্র জীবন থেকে মাঠে গিয়ে ক্রিকেট দেখার অভ্যাস। মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর খেলার বিশেষ ভক্ত ছিলেন। নান্নু এখন প্রধান নির্বাচক এবং দলের সাথে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে। শুনে খুশিই হলেন তিনি। শুধু ডাক্তার মোহাম্মদ হুমায়ুন কিংবা প্রকৌশলি পলাশ নন। অকল্যান্ড, হ্যামিল্টন, ওয়েলিংটন থেকে জাতীয় পতাকা হাতে এসেছেন অনেক নারী সমর্থকও। তাদের কারো হাতে ‘গো টাইগার গো’, ‘কাম অন টাইগার্স’ সহ নানান রঙের ব্যানার। প্রবাসি বাঙ্গালি মুন, মাসুম ও আসাদ ও শিমুল জানালেন, হয়ত রোববারে আরও বেশি বাঙ্গালি খেলা দেখতে মাঠে আসবেন। কারণ ঐদিন ছুটি। আজ সাব্বির-সৌম্যর হঠাৎ ঝলকানি দেখে খানিক আশার আলো জ্বললেও তা নিভে গেছে। তবুও প্রবাসি বাঙ্গালিদের অকুণ্ঠ সমর্থন কমেনি একচুলও।   এআরবি/আইএইচএস/এমএস

Advertisement