পেনশনের পুরো টাকা তুলে নেয়া সরকারি চাকরিজীবীদেরকেও (শতভাগ সমর্পণকারী পেনশনার্স) পেনশনের আওতাভুক্ত সুযোগ-সুবিধা দিতে যাচ্ছে সরকার। তবে যাদের বয়স ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে শুধু তারাই এ সুবিধা পাবেন। এ জন্য বছরে অতিরিক্ত ৩২ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।সম্প্রতি সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে ‘শতভাগ সমর্পণকারী পেনশনার্স ফোরাম’ এর সদস্য সচিব এবং সরকারের সাবেক সচিব এজেডএম শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল দেখা করে। বৈঠকে যাদের বয়স ৭০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে পেনশনভোগী এমন চাকরিজীবীদের জীবনমান তুলে ধরে পেনশন প্রতিস্থাপনের (পুনরায় পেনশনের আওতাভুক্ত সুবিধা) দাবি জানায় ফোরামটি।সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী পেনশনভোগীদের জীবনযাপনের বিভিন্ন দিক অবহিত হন এবং বিষয়টি সুবিবেচনার আশ্বাস দেন। এ সময় তিনি বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক। শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের অনেকেই নানা ধরনের সামাজিক সমস্যায় পড়েছেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের দাবি পূরণ করা হবে।সূত্র জানায়, সরকারি চাকরিজীবীরা পেনশনে যাওয়ার পর প্রতিমাসে পেনশনের টাকা পেয়ে থাকেন। তাদের অবর্তমানে উত্তরসূরীরা এ পেনশন পেয়ে থাকেন। তবে ১৯৮০ সাল থেকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কেউ ইচ্ছে করলে পেনশনের পুরো টাকা একবারে তুলে নিতে পারেন। অনেক চাকরিজীবীই পরিবারের নানা প্রয়োজন মেটাতে পেনশনের পুরো টাকা একবারে তুলে নেন। কেউ এ টাকা দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন, কিংবা সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় ব্যয় করেছেন বলে তারা বৈঠকে উপস্থাপন করেন।উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা দ্বিগুণ ও পেনশনভোগীদের বিভিন্ন প্রকার ভাতা পুনর্নির্ধারণ করা হলেও শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীরা এসব সুবিধার বাইরে রয়েছেন। চলতি বছর থেকে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মচারীরা পেনশনের পুরো টাকা একবারে তুলে নিতে পারবেন না। তবে অর্ধেক তুলতে পারবেন। বাকি অর্ধেক নিতে হবে মাসে মাসে।সূত্র জানায়, পুরো পেনশন একসঙ্গে তুলে নেয়া চাকরিজীবীদের মধ্যে যাদের বয়স ৭০ এর বেশি হয়েছে এরা অনেকেই অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সাবেক সচিব জানান, বিগত বিএনপি সরকারের সময় তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়। অবসরে যাওয়ার পর তিনি তার পেনশন শতভাগ সমর্পণ করেন। পেনশনের টাকা দিয়ে তিনি ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। কিন্ত সে ফ্ল্যাটটিও ছেলে-মেয়ের উচ্চ শিক্ষার পেছনে ব্যয় করেন। বর্তমানে তিনি অনেকটা পরমুখাপেক্ষী হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।তিনি বলেন, আমি আমার পেনশন শতভাগ সমর্পণ না করলে আজ আমাকে এ মানবেতর জীবন-যাপন করতে হতো না। বেঁচে থাকার তাগিদে আজ আমাকে সরকারের কাছে পেনশন প্রতিস্থাপনের অনুরোধ জানালে অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।বৈঠকে সংগঠনের সদস্য সচিব এজেডএম শফিকুল ইসলাম বলেন, ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে যাদের বয়স তারা বেশিরভাগই স্বাস্থ্যগতভাবে অক্ষম। অসুখ-বিসুখে ভুগছেন, হাসপাতালে ভর্তি কিংবা প্রবীণ নিবাসে আছেন। সন্তানাদি থেকেও অনেকে বিছিন্ন। তারা উৎসব ভাতা বা চিকিৎসা ভাতা পান। বৈশাখী ভাতার প্রাপ্যতা আছে। পিপিও’র আওতাধীন থাকায় তারা সরকারের সঙ্গে একীভূত সে কারণে তাদের সংখ্যা নিরুপণে কোনো জটিলতা নেই।তিনি বলেন, ২০০৩-২০০৪ সালে ৩২ হাজার ২০০৭-২০০৮ সালে প্রায় ১৪ হাজার কর্মচারী শতভাগ সমর্পণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে ৭০ বছর সীমারেখা ধরায় প্রাপ্তিযোগ্য কর্মচারী সংখ্যা খুবই কম হবে। ধারণা করা যাচ্ছে, এ সংখ্যা ৫ শতাংশের বেশি হবে না। এ ছাড়া অর্থের সংশ্লেষণ খুবই কম। বর্তমান হিসেবে মাসিক ২-৩ কোটি টাকা যা বার্ষিক ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা হতে পারে। নতুনভাবে বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজন হবে না। বর্তমানে পেনশনের জন্য অনুন্নয়ন বাজেটের ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা আছে যার পরিমাণ ১১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পেনশনারদের সংখ্যা মৃত্যুজনিত কারণে ক্রমাগত হ্রাস পাবে বিধায যে পরিমাণ অর্থ অব্যায়িত থেকে যাবে তা থেকেই মেটানো যাবে। রাজস্ব খাতের অব্যয়িত অর্থও ক্ষেত্র বিশেষ এতে যোগ হতে পারে।শতভাগ সমর্পণকারী পেনশনার্স ফোরাম দাবি করে, ভারত এবং পাকিস্তানেও অনুরূপ পেনশন পুনঃস্থাপন ব্যবস্থা চালু আছে। কোথাও ১৫ বছর আবার কোথাও ১২ বছর।এমইউএইচ/বিএ
Advertisement