গত বছর থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে ব্রাত্য হয়ে আছেন নাসির হোসেন। বিশ্বকাপের পর জাতীয় দলের ব্যানারে থাকলেও একাদশে জায়গা পাননি ঠিকমত। আর সে ধারায় চলতি নিউজিল্যান্ড সিরিজের ২৩ সদস্যের দলেও জায়গা হয়নি তার। অথচ গড়পড়তার পারফরম্যান্স করেও দলে আছেন শুভাগত হোমের মত খেলোয়াড়রা।সাম্প্রতিক সময়ের নাসিরের পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলেন কোচ-অধিনায়করা হর হামেসাই। জাতীয় লিগের পঞ্চম রাউন্ডের ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নিজের ফর্মের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেতো অনেক আগের থেকেই পরীক্ষিত। তারপরও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ দুই টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও আছেন শুভাগত, নেই নাসির।নাসিরের প্রতি কেন এতো অনীহা?এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চলছে নানা গুঞ্জন। কোচ-নির্বাচকরা দিচ্ছেন নানা মতবাদ। এমনকি বাদ যাননি খোদ বিসিবি প্রেসিডেন্টও। আর এ যুক্তিতে সন্তুষ্ট না হয়ে তাদের একহাত তুলে নিচ্ছেন ক্রীড়ামোদীরা কয়দিন আগেই নাসির হোসেনকে নিয়ে আবারও বিধ্বংসী মতবাদ দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। পারফরম্যান্সে নাকি তার চেয়ে অনেক এগিয়ে শুভাগত হোম।‘নাসির নেই অথচ দলে আছেন শুভাগত, কেন?’ –স্বাভাবিকভাবেই এ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে কোচ হাথুরুকে। আর তাতে ক্রুদ্ধ হাথুরু উল্টো প্রশ্ন করেন সাংবাদিকদের, ‘আমাকে আপনারা বলেন যে, নাসিরকে কোন জায়গাটায় নেবো? আমার দলে একই পজিশনে খেলার মত মোসাদ্দেক আছে। মিরাজ আছে। শুভাগত হোম আছে। এই তিনজনের চেয়ে নাসির গত দুই বছরে এমন কী পারফরম্যান্স করেছে যে তাকে আমি নেবো। এই তিনজনের জায়গায় কিভাবে তাকে দলে নেবো? আমি কী তাহলে একই জায়গায় চারজনকে নেবো?’যোগ করে আরও বলেন, ‘যে ক্রিকেটার ঢাকা লিগে ভালো পারফর্ম করতে পারে না, তাকে জাতীয় দলে নেয়ার যৌক্তিকতা আছে? গত দুই বছরে ওর রেকর্ড দেখুন, সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমি পরিসংখ্যান ও দলে অবদান দেখে কাজ করি। সে তো কোনো অবদান রাখতে পারেনি।`‘তিনজনের চেয়ে নাসির গত দুই বছরে এমন কী পারফরম্যান্স করেছে যে তাকে আমি নেবো’ আর ‘যে ক্রিকেটার ঢাকা লিগে ভালো পারফর্ম করতে পারে না, তাকে জাতীয় দলে নেয়ার যৌক্তিকতা আছে?’ –এ কথায় বিশাল আপত্তি সমর্থকদের। আর তাই দেখে নেওয়া যাক গত দুই বছরে এ দুই ক্রিকেট তারকার পারফরম্যান্স। ক্রিকইনফো থেকে নেওয়া তথ্যগুলো তুলে ধরা হলো জাগোনিউজের পাঠকদের জন্য।প্রথমের দেখা যাক গত বছরের (২০১৫-১৬ মৌসুম) পারফরম্যান্স। গত বছর ঘরোয়া ক্রিকেটে টুর্নামেন্ট হয়েছে তিনটি –জাতীয় লিগ, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)।জাতীয় লিগে গত আসরে ৪ ম্যাচ খেলেছেন নাসির। আর তাতে ৭ ইনিংস ব্যাট করে ৪২.৪২ গড়ে রান করেছেন ২৯৭; সর্বোচ্চ ৯৬ রান। আর ১ ম্যাচ খেলে ৫৬ রান ও ৬টি উইকেট পেয়েছেন শুভাগত। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ১৬ ম্যাচে ১২ ইনিংস খেলে ৭৫.৪২ গড়ে ৫২৮ রান; সর্বোচ্চ ৯৭ রান। আর ১৬ ম্যাচে নাসিরের চেয়ে দুই ইনিংস বেশি খেলে ৬০ গড়ে ৩০৯ রান করেছেন শুভাগত হোম। পাশাপাশি ১৬টি উইকেট পেয়েছেন শুভাগত। তবে তার চেয়ে দুটি উইকেট কম পেয়েছেন নাসির। বাংলাদেশের সবচেয়ে জমজমাট লিগ বিপিএলে শুভাগতর চেয়ে ঢের এগিয়ে ছিলেন নাসির। ১৪ ম্যাচে ১০ ইনিংস ব্যাট করে ১৯.৫০ গড়ে ১৯৫ রান করেছেন নাসির, সর্বোচ্চ ৪৩*। আর ওভার প্রতি ৭.৯০ রান দিয়ে উইকেট নিয়েছেন ৪টি। আর ১৩ ম্যাচে নাসিরের চেয়ে ২ ইনিংস বেশি ব্যাট করে ৯.৫৮ গড়ে রান করেছেন ১১৫, সর্বোচ্চ ৪০ রান। আর বল হাতে ওভার প্রতি ৮.১৬ রান দিয়ে ২টি উইকেট পেয়েছেন শুভাগত।এবার আসি ২০১৪-১৫ মৌসুমের পারফরম্যান্সের ফলাফল নিয়ে। এ মৌসুমে জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য থাকায় জাতীয় লিগে কোন ম্যাচ খেলেননি নাসির। তবে ৬ ম্যাচে ৯ ইনিংস খেলে ৫৯ গড়ে ৪৭২ রান করেন শুভাগত, সর্বোচ্চ ১৩৫ রান। পাশাপাশি ২১টি উইকেট নেন তিনি।তবে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে খেলেছেন দুইজনই। ১৬ ম্যাচে ১৫ ইনিংস ব্যাটিং করে ৫০ গড়ে ৫৫০ রান করেন নাসির, সর্বোচ্চ ১০৪ রান। পাশাপাশি ওভার প্রতি ৩.৫২ রান দিয়ে ১৩টি উইকেট শিকার করেন তিনি। আর নাসিরের চেয়ে ৩ ম্যাচ কম খেলে ২৭ গড়ে ৩০২ রান করেন শুভাগত, সর্বোচ্চ ৫১*। তবে বল হাতে ২টি উইকেট বেশি নিয়েছেন তিনি।এরপর বছরের শেষ টুর্নামেন্ট বিপিএলে যথারীতি এগিয়ে নাসির। ১১ ম্যাচে ১৯.৩০ গড়ে ১৯৩ রান করেছেন তিনি, সর্বোচ্চ ৩৩ রান। আর ওভার প্রতি ৫.০৪ রান দিয়ে উইকেট নিয়েছেন ৬টি। আর নাসিরের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে ১১.৭৫ গড়ে রান করেছেন ৯৪, সর্বোচ্চ ৩০। আর বল হাতে ওভার প্রতি ৬.৭৫ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ৫টি।অর্থাৎ পরিসংখ্যানের বিচারে যোজন যোজন এগিয়ে নাসির। কোচ-নির্বাচকরা যে যুক্তি দিচ্ছেন তা তাতে ফাঁক থেকেই যাচ্ছে। তবে কোচ-নির্বাচকদের দৃষ্টিতে জাতীয় দলের খেলার যোগ্যতা না রাখলেও দর্শকদের মন জয় করেই চলেছেন নাসির। সামাজিক মাধ্যমে নাসিরের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করে যাচ্ছেন ভক্ত সমর্থকরা।হলিউডের রিয়েল স্টিলের মুভির উদাহরণও টেনেছেন অনেকে। রোবট জিউসের বিপক্ষে ভালো খেলেও শিরোপা জয় করতে পারেনি রোবট এটম। তবে ভালোবাসাটা পেয়েছিলেন এটমই। ভক্তরা এটমকে ডেকেছিলেন ‘দ্যা পিপলস চ্যাম্পিয়ন’ নামে। তেমনি নাসিরকেও দেখছেন ‘দ্যা পিপলস চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবেই।আরটি/এমআর/আরআইপি
Advertisement