খেলাধুলা

মাশরাফির আতঙ্কের নাম ওয়েলিংটন এয়ারপোর্ট!

নড়াইলের চিত্রা নদী সাঁতরে বড় হওয়া মাশরাফি বিন মর্তুজা যেন এক সাহসী নাবিক। তার সাহস নিয়ে গল্প লেখা যেতে পারে। কল্পলোকের কাহিনীও তার সাহস, প্রত্যয়ের কাছে হার মানে। শুধু সাহস আর অদম্য ইচ্ছশক্তি দিয়ে হাঁটু ও গোড়ালিতে ছোট বড় মিলে আট নয়টি অপারেশনের ধাক্কা সামলে এখনো মাঠে বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক। বাংলাদেশে তো নয়ই, বিশ্বের খুব কম দেশে এভাবে অপারেশনের টেবিল থেকে বার বার ঘুরে আবার মাঠে ফিরে আসা ক্রিকেটার পাওয়া কঠিন। শুধু ঐ অপারেশনের ধকল সামলে মাঠে নামাই নয়, তার চলাফেরা, চিন্তা-ভাবনা ও ক্রিকেট মাঠে স্বপ্রতিভ পদচারণা, সব কিছুতেই অন্যরকম সাহসী মানসিকতার ছোয়া পরিষ্কার। মোদ্দা কথা ক্রিকেটার ও মানুষ মাশরাফি যেন বীরের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু শুনে অবাক হবেন, এমন সাহসী যোদ্ধাও প্লেনের বাম্পিংকে যারপরনাই ভয় পান। বাম্পিংয়ের ভয়ে চরম ভীত মাশরাফি নিউজিল্যান্ডের একটি শহরে যাবার কথা মনে হলেই গায়ে ১০৪ ডিগ্রি জ্বর উঠে যায়। প্লেনে ওয়েলিংটন যেতে হবে শুনলেই বুক কাপে। হাঁটুতে কাঁপন লাগে। বুকের ভিতরে কেমন যেন ঢিপ ঢিপ ঢিপ করে। তাইতো নিউজিল্যান্ডে এলেই যতটা সম্ভব ওয়েলিংটন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। প্রসঙ্গত নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ওয়েলিংটন। বিশ্বের সবচেয়ে জোরে বাতাস বহতা শহরও। এ শহরে সারা বছর গড়ে প্রতি ঘন্টায় ২৬ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বয়। বাতাস বেশি বলেই এখানে বিমান ওঠা নামায় বাম্পিং বেশি। শুধু বেশি বললে কম বলা হবে, ওয়েলিংটনে যে কোন ফ্লাইট অবতরণের আগে বাতাসে কাপেনি এমন ঘটনা প্রায় বিরল। ছোট আর বড় নেই, যে কোন বিমান ওয়েলিংটন বিমান বন্দরে নামতে গিয়ে কাপে। সেই বাম্পিংয়ে রাজ্যের ভয় মাশরফির। বলার অপেক্ষা রাখে না জাতীয় দলের সঙ্গে তার প্রথম বিদেশ সফরই নিউজিল্যান্ড। সেই প্রথমবার বিদেশ আসা ২০০১ সালের ডিসেম্বরে। তখন  ওয়েলিংটনে টেষ্ট খেলতে গিয়ে পড়েছিলেন বিমানের বাম্পিংয়ের খপ্পরে। সেই থেকে মনে ভয় ঢুকে গেছে। এখনো ওয়েলিংটন বিমান বন্দর তার কাছে এক বিরাট আতঙ্ক!  সিরিজের সেটা ছিল দ্বিতীয় টেস্ট। হ্যামিল্টনে প্রথম টেস্টের পর বিমান আসছিলেন ওয়েলিংটন আসতে গিয়েই প্রচন্ড বাতাসের  ঝাপটায় মাশরাফির বিমানটি অরেক বেশি দুলছিল যা একবার নীচে অন্যবার ওপরে উঠছিল। সেদিনের সবে কৈশোর পার করা মফস্বলের ছেলে মাশরাফির মনে সেই যে ভয় ঢুকে গেছে , তা কাটেনি এখনো।অবশ্য তার একার ভয় না।  বাংলাদেশ দলের যে সব ক্রিকেটার একবার হলেও বিমানে ওয়েলিংটন এসেছেন বা অবতরণ করেছেন তাদের কাছে ওয়েলিংটন বিমান বন্দর সত্যিই এক আতঙ্ক। এর সাত বছর পর ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে আবার নিউজিল্যান্ড এসেছিলেন মাশরাফি। সেবারও ওয়েলিংটনে ছিল দ্বিতীয় টেস্ট। ঐবারও ওয়েলিংটন বিমান বন্দরে অবতরণের সময় বাতাসে বিমান কেপেছিল অনেক। সেই কাপুনিতে হাবিবুল বাশারসহ আরও কজন নাকি বমিও করে দিয়েছিলেন। সেই থেকে মাশরাফি ওয়েলিংটন বিমান বন্দরের কথা শুনলেই ডরে-ভয়ে কম্পমান। এবার ওয়েলিংটন হয়ে কোন বিমান ভ্রমণ করেননি নড়াইল এক্সপ্রেস। এমনকি টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে ৫/৬ দিনের জন্য স্ত্রী ও কন্যা-পুত্রসহ সিডনি যাবেন, তখনো ওয়েলিংটন এড়িয়ে অকল্যান্ডকে বেছে নেওয়া। আজ মাউন্ট মোঙ্গানুয়ের বে ওভাল মাঠে প্র্যাকটিসের পর ওয়েলিংটন বিমান বন্দর নিয়ে কথা উঠতেই মাশরাফির সোজা সাপটা জবাব, ‘ভাই আমি জীবনেও কোনদিন ওয়েলিংটন বিমান বন্দরে নামতেই পারবো না। ২০০১ আর ২০০৮ দুই দুই বার যে রকম বিমান বাম্পিং করেছে, তাতে আমার কম্প কাবার হবার যোগার। আমি পণ করে রেখেছি জীবনে কখনই ওয়েলিংটন বিমান বন্দরে প্লেনে অবতরণ করবো না। ওরে বাবা কি যে ভয়ঙ্কর ! বিমান কাপবেই। আর বাম্পিং করে কখনো কখনো একবারের এক থেকে দেড়শো ফুট নীচে নেমে যায়। খুবই ভয় লাগে আমার। আমি ঐ রকম বাাম্পিংকে সত্যিই খুব ভয় পাই। বুক কাপে। প্রয়োজন হয় ঘুরে যাব, ট্রানজিট থাকলে অন্য শহর দিয়ে যাব, তবু ওয়েলিংটন নয়। ’ এবারো সত্যি ওয়েলিংটন যাননি। এমনকি আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে ওয়েলিংটনে যে প্রথম টেস্ট শুরু হবে, টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে সেখানেও যাবেন না মাশরাফি। তার গন্তব্য অকল্যান্ড। তার ভাষায়, ‘আমি ১৩ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ড ছাড়ব। তখনতো প্রথম টেস্ট খেলতে দল ওয়েলিংটন থাকবে। আর আপনি অকল্যান্ড যাবেন মানে? হ্যা যাবো। খুব সহজ কথা, আমি ওয়েলিংটন বিমান বন্দরকে এড়াতে চাই। আর সে কারণেই ওয়েলিংটনের বদলে অকল্যান্ডকে বেছে নেওয়া। যাতে ওয়েলিংটন যেতে না হয় , তাই আমি সিডনির উদ্দেশ্যে বিমানে উঠব অকল্যান্ড থেকে। ’ প্রসঙ্গত, টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে আগামী ১৩ জানুয়ারি স্বপরিবারে যাত্রী, কন্যা ও পুত্রসহ অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ঘুরতে যাবেন মাশরাফি। সেখানে ক`দিন পরিবারের সঙ্গে একান্তে সময় কাটিয়ে দেশে ফিরবেন ১৯ জানুয়ারি। এআরবি/এমআর/জেআইএম

Advertisement