ঢাকা মহানগরীর অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত ফি’র চাইতে অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় করা হয়। শিক্ষার্থী টানতে প্রতিষ্ঠানের ফল প্রতারণাও করা হচ্ছে অভিভাবকদের সঙ্গে। নিরুপায় হয়ে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বোর্ডে অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাঠে নামছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গঠন করা হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের ৬টি মনিটরিং টিম। এসব টিমকে থানাভিত্তিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মনিটরিং শেষে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে হবে মন্ত্রণালয়ে। মনিটরিং টিমের কর্মপন্থা ঠিক করতে আগামী বৃহস্পতিবার মন্ত্রাণালয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু অভিযোগ করেন, উত্তরার মাইল স্টোনে ১২ হাজার টাকা, মতিঝিল স্কুল অ্যান্ড কলেজে সাড়ে ১০ হাজার টাকা টিউশন ফি আদায় করা হচ্ছে। অভিভাবকরা প্রতিবাদ করলেই সন্তানদের উপর শিক্ষকরা নির্যাতন করেন। পরীক্ষার খাতায় কম নম্বর দেন। যার কারণে অভিভাবকরা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।তিনি আরও অভিযোগ করেন, দুই থেকে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২য়, চতুর্থ ও ৫ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার খাতা রাতের আধারে পরিবর্তন করে পছন্দের শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে।মনিটরিং টিম গঠনকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, মনিটরিং টিমের উচিত হবে প্রতিদিন স্কুলে স্কুলে গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলা। তাহলেই বাড়িত ফি আদায়ের প্রকৃত তথ্য পাবেন তারা। মনিটরিং টিমের তদন্ত প্রতিবেদন জাতীর কাছে প্রকাশের দাবি জানান তিনি।এদিকে শিক্ষার্থী টানতে অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে মিরপুরের ইডেনস গার্ডেন হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ (সঠিক)। এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ৬০ শিক্ষার্থী অংশ নিলেও তারা প্রচার করছে, ৫৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৫০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এসব লিখে পুরো মিরপুর ব্যানার-ফেস্টুনে ভরে ফেলেছে। তবে প্রকৃত জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪২ জন। এ প্রতিষ্ঠানেও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। গত বছরও এ প্রতিষ্ঠানটি জালিয়াতির মাধ্যমে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বাড়িয়েছিল। শুধু উল্লেখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নয়; রাজধানীর অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত ফির চেয়ে বাড়তি ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, অভিভাবকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দিন আগে ৬টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতি টিমের সদস্য সংখ্যা তিনজন। এতে মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) কর্মকর্তারা রয়েছেন।মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. অরুণা বিশ্বাসের নেতৃত্বে গঠিত টিমকে মতিঝিল, সবুজবাগ, পল্টন ও শাহবাগ থানা, অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদের নেতৃত্বের টিমকে সূত্রাপুর, কোতয়ালী, লালবাগ, কামরাঙ্গীচার, নিউমার্কেট ও রমনা থানা; অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল হাসান চৌধুরীর নেতৃত্বের টিমকে উত্তরখান, দক্ষিণখান, উত্তরা, বিমানবন্দর, তুরাগ, শাহ আলী থানা; অতিরিক্ত সচিব বেগম রুহী রহমানের নেতৃত্বের টিমকে মিরপুর, পল্লবী, শাহআলী, দারুস সালাম থানা; যুগ্ম সচিব সালমা জাহানের নেতৃত্বে টিমকে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, আদাবর, তেজগাঁও, ক্যান্টনমেন্ট, গুলশান থানা এবং যুগ্ম সচিব মো. আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বের টিমকে যাত্রবাড়ি, ডেমরা, কদমতলী, বাড্ডা ও খিলগাঁও থানা এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মনিটরিং করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।মনিটরিং টিমের সমন্বয় করবেন অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক)। কমিটির কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তদন্ত প্রতিবেদন একত্র করে একটি পুস্তকের ন্যায় আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।বিষয়টি স্বীকার করে অতিরিক্ত সচিব বেগম রুহী রহমান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাড়িত ফি আদায় বন্ধ করতে মনিটিরিং টিম গঠন করা হয়েছে। বাড়তি ফি আদায়কারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। আগামী কর্মপন্থা নির্ধারণ করার জন্য আগামী বৃহস্পতিবার বৈঠক ডাকা হয়েছে। এরই পরই মনিটরিং কার্যক্রম শুরু হবে।অষ্টম পে-স্কেল ঘোষণার পর রাজধানীরসহ সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিউশন ফি বাড়ানোর হিড়িক পড়ে। এর প্রতিবাদে অভিভাবকরা ব্যাপক আন্দোলন করেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৯ আগস্ট একটি পরিপত্র জারি করে।এতে বলা হয়, বেসরকারি স্কুল ও কলেজে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও টিউশন ফি ৩০ শতাংশের বেশি বাড়ানো যাবে না। ভর্তি ফি ও টিউশন ফি বৃদ্ধির প্রস্তাব ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারিশসহ অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষককে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে হবে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রস্তাবটি পরীক্ষা করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা) কাছে পাঠাবেন। তিনি অনুমোদন করলে ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।কিন্তু এসব নিয়মনীতি কেউই মানেনি। চলতি শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই কয়েক মাস আগে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে টিউশন ফি বাড়ানো হয়েছে। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আন্দোলন করলেও কোনো প্রতিকার হয়নি।প্রসঙ্গত, ঢাকা মহানগরীর এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ফি সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা, আংশিক এমপিওভুক্ত এবং এমপিওবহির্ভূত প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা আদায় করতে পারবে। তবে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল সেশন চার্জ, উন্নয়ন ফি, মাসিক বেতনসহ সর্বোচ্চ দশ হাজার টাকা আদায় করতে পারবে।এমএইচএম/বিএ
Advertisement