আন্তর্জাতিক

থার্টি ফার্স্টে যৌন হয়রানি : পশ্চিমা পোশাককে দায়ী করলেন মন্ত্রী

ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের সময় যৌন হয়রানির জন্যে নারীদেরকেই দায়ী করায় ভারতের এক মন্ত্রী তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। দক্ষিণ ভারতের এক মন্ত্রী বলেছেন, মেয়েরা ‌পশ্চিমাদের মতো পোশাক পরার কারণেই ওই ঘটনা ঘটেছে। শনিবার নববর্ষের প্রথম প্রহরে আনন্দ করতে আসা নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে স্থানীয় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলা হচ্ছে।ব্যাঙ্গালুরুর একটি খবরের কাগজে ক্রন্দনরত কয়েকজন নারীর ছবিও ছাপা হয়েছে যারা অভিযোগ করেছেন, ভিড়ের মধ্যে পুরুষরা তাদের গায়ে হাত দিয়েছে। পুলিশ বলছে, তারা এ ধরনের কোন অভিযোগ পায়নি। তবে এধরনের ঘটনা ঘটেছে কিনা সেটা তারা ভিডিও ফুটেজে স্ক্যান করে দেখছেন।স্থানীয় সংবাদপত্রে লাঞ্ছিত নারীদের কিছু ছবি প্রকাশ হওয়ার পর কর্নাটক রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরামেশ্বরা পার্টিতে আসা তরুণীদের দায়ী করে বলেছেন, তারা শুধু তাদের মননেই পশ্চিমাদের অনুকরণ করেনি, পোশাক আশাকেও তাদেরকে অনুকরণ করেছে। তাহলে তো এধরনের ঘটনা ঘটবেই। মন্ত্রীর এই মন্তব্য ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ভারতে নারীর অধিকার রক্ষায় গঠিত ন্যাশনাল কমিশন ফর উইমেনের প্রধান লালিথা কুমারামানাগালাম বলেছেন, এ ধরনের মন্তব্যের জন্যে দেশের নারীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে তার পদত্যাগ করা উচিত।কেন্দ্রীয় সরকারের একজন মন্ত্রী কিরেন রিজিজু কর্নাটকের মন্ত্রীর এই মন্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে উল্লেখ করেছেন। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, এধরনের লজ্জাজনক ঘটনায় কারো শাস্তি হবে না; এ রকম হতে পারে না।বিবিসির হিন্দি বিভাগের একজন সাংবাদিক বলেছেন, নববর্ষ উদযাপন করতে শহরের কেন্দ্রে মহাত্মা গান্ধী এবং ব্রিগেড রোড এলাকায় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজারের মতো লোক জড়ো হয়েছিল। এ সময় সেখানে দেড় হাজারের মতো পুলিশ মোতায়েন ছিল।ফটোসাংবাদিক অনন্ত সুব্রাম্যানিয়াম বিবিসি হিন্দিকে জানিয়েছেন, এই এলাকায় সাধারণত যতো মানুষ আসে তার চেয়ে তিনগুণ বেশি লোক হয়েছিল। তার তোলা ছবিই নারীদের ব্যাপারে শহরের পুরুষের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।তিনি বলেন, লোকজন পৌনে ১২টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সেখানে চলাচল করতে পারছিলো না। ভিড় যখন কিছুটা কমে এল আমি দেখলাম কয়েকজন নারী পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ করছেন যে তারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। পুলিশ তখন তাদেরকে বলে ওই পুরুষদেরকে দেখিয়ে দিতে। কিন্তু তারা সেটা পারেনি।আমি দেখেছি একজন নারীকে কয়েকজন পুরুষ ঘিরে রেখেছে আর তিনি কাঁদছেন, বলেন তিনি।চৈতালি ওয়াসনিক নামের একজন ফটোগ্রাফার ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন যাতে দেখা যাচ্ছে, কাজ থেকে ফেরার পথে একজন পুরুষ তার গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি জানান, তাকে বাঁচাতে পুলিশ এগিয়ে আসেনি। ওই পুরুষটিকে তিনি নিজেই মোকাবেলা করেছেন।ওই রাতে সেখানে ছিলেন এরকম আরো একজন নারী জানিয়েছেন, ২০ থেকে ৩০ জন পুরুষের একটি দল হঠাৎ দৌড়াদৌড়ি শুরু করে এবং এসময় কয়েকজন নারীর শরীরে হাত দেওয়া হয়েছে।আমি আমার বাবা মা আর বাই বোনের সঙ্গে থাকায় বেঁচে গেছি। কয়েকজন পুলিশ আমাদের পাহারা দিয়ে কাছের মেট্রো স্টেশনে তুলে দিয়ে যান। ব্যাঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার প্রাভীন সুদ বিবিসিকে বলেছেন, ওই এলাকার ভিডিও ফুটেজ এখন পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।এসআইএস

Advertisement