খেলাধুলা

অধিনায়ক মাশরাফির হতাশার এক ম্যাচ

দুপুরেও মনটা ভালোই ছিল। এক কথায় খোশ মেজাজেই ছিলেন। সিটি সেন্টারে তাসকিন আহমেদকে সাথে নিয়ে লাঞ্চ করতে এসে স্বদেশি সাংবাদিকদের পেয়ে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়েই খানিকক্ষণ আড্ডা দিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা, সময় কাটানো, খুনসুটি করা তার সহজাত। শেরেবাংলায় স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানোর রেকর্ড আছে তার। আজ খেলার ঘণ্টা ছয়েক আগে লাঞ্চে গিয়ে সিটি সেন্টারের রাস্তার এক প্রান্তে ও রেস্টুরেন্টের সামনের টেবিলে বাংলাদেশ থেকে সিরিজ কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের সাথে অমন জমজমাট আড্ডায় মেতেছিলেন টাইগার অধিনায়ক। সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালও পরে এসে যোগ দিলেন ওই আড্ডায়। তখন মাশরাফি ছিলেন একদম হাসি-খুশি। সহাস্যে কৌতুক করে বললেন, ‘আজ যে দলটি খেলতে নামবে, সেটা কিন্তু আমার করা। বলতে পারেন প্রথম টি-টোয়েন্টির একাদশ আমিই সাজিয়েছি।’কিন্তু যাকে অনেক আশা নিয়ে তিনি দলে রাখলেন। সেই সৌম্য ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং ক্যাচিংয়ে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে অধিনায়কের মনোকষার কারণ হয়েছেন। এ কথা সে কথা বলে একে-ওকে চটানো। এর-ওর সাথে খুনসুটি করা-কিছুই বাদ দেননি। কিন্তু হায়! সেই মাশরাফির রাতে অন্য রূপ। নিউজিল্যান্ডের কাছে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হারের পর মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামকে সাথে নিয়ে ধীর পায়ে আসলেন অফিসিয়াল মিডিয়া সেশনে। বেরিয়েও গেলেন আনমনে। কথা বললেন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নিচু স্বরে। ফর্সা মুখ খানিক বিমর্ষ। চোখে মুখে পরিষ্কার হতাশার চিহ্ন। আফসোস-অনুশোচনা ও মনঃকষ্ট এসে যেন গ্রাস করেছে। কেন করবে না? তার দল যা খেলেছে, বিশেষ করে প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের ৮০ ভাগ যে দায়িত্ব ও লক্ষ্যহীন ব্যাটিং করেছেন, তাতে মাশরাফি কেন- যে কোনো অধিনায়কেরই মন খারাপ হওয়ার কথা। তবে ভেতরে রক্তক্ষরণ হলেও মাশরাফি তার মতোই কথা বললেন। যথারীতি কারো ওপর দোষ চাপানো নেই। কোনো ব্যর্থ পারফরমারের সমালোচনার ধার পাশ দিয়ে গেলেন না। ইমরুল ও সৌম্যর ব্যাটিং ব্যর্থতা, পাশাপাশি ফিল্ডিং ও ক্যাচিং নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাবেও তাদের ছো না করে যতটা সম্ভব ইতিবাচক মানসিকতায় জবাব দিয়েছেন মাশরাফি। সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিলেন যথাসম্ভব ঠান্ডা মাথায়। ভেবে-চিন্তে। তবে মানলেন, ব্যাটিং ব্যর্থতাই ডুবিয়েছে। হারের সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করতে গিয়ে টাইগার ক্যাপ্টেন যা বলেছেন, তার সারমর্ম হলো; প্রথম ধাক্কা- ৩০ রানে চার টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বসা। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে শুরুতে অতগুলো প্রতিষ্ঠিত পারফরমার ফিরে গেলে দলের ব্যাটিংয়ের মূল শক্তিই যায় নিঃশেষ হয়ে। এটা ৫০ ওভারের ম্যাচ নয় যে, শুরুর ক্ষত সারিয়ে আবার ইনিংসকে নতুনভাবে মেরামত করা যাবে। মাশরাফিও মানছেন ৫.২ ওভারে ৩০ রানে চার টপ-অর্ডার ইমরুল, তামিম, সাব্বির ও সৌম্য ফিরে যাওয়ার সঙ্গেই দল ব্যাকফুটে চলে যায়। সেখান থেকে আর সামনে আগানো, তথা বড়সড় পুঁজি গড়াও খুব কঠিন। মাশরাফির অনুভব, ছয় ওভারের ফিল্ডিং বিধিবদ্ধতা শেষ হওয়ার আগে ৩০ রানে চার উইকেট খোয়া যাওয়াই ছিল প্রথম ধাক্কা। সে ধাক্কা সামলে ওঠাই দায়। বড় স্কোর গড়া তো সুদূর পরাহত।   আমরা সে কঠিন কাজটি পারিনি। যে রানটি হয়েছে, তা যথেষ্ট ছিল না। নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে ১৪১ মোটেই লড়িয়ে পুঁজি নয়। তারপরও হয়তো একটা সম্ভাবনা ছিল। বোলাররা বিশেষ করে মোস্তাফিজ ও সাকিব শুরুতে কিউই টপ-অর্ডারের ওপর ঠিক চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু প্রথমে সাকিবের বলে সৌম্য সরকার আর পরে সৌম্য সরকারের বলে ইমরুল দুটি সম্ভাব্য ক্যাচ তালুবন্দি করতে না পারায় সব সম্ভাবনা নিঃশেষ হয়ে যায়। যে উইলিয়ামসনের চওড়া ব্যাটে ভর করে জয়ের বন্দরে ব্ল্যাক ক্যাপসরা, সেই উইলোজ সাজঘরে ফেরত যাচ্ছিলেন ৪৩ রানেই। সাকিবের বলে স্লগ-সুইপ খেলতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে বসেন উইলয়ামসন। কিন্তু বল বাতাসে থাকতে মিস জাজ করে বসেন সৌম্য সরকার। এমনিতেই সীমানার অন্তত ১০ গজ সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। বল বাতাসে থাকতে থাকতে চোখের মাপ ঠিক করে আর গজ পাঁচ-সাতেক পিছিয়ে গেলেই হয়তো উইলিয়ামসনের ক্যাচ হয়ে যেত। আর সেই ৪৩ রানে জীবন পাওয়া কেন উইলিয়মাসনই শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের ত্রাণকর্তার ভূমিকা রাখেন। কিউই অধিনায়কের ৫৫ বলে ৭৩ রানের ওই অনবদ্য ইনিংসই শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দেয়। মাশরাফির ধারণা, আর ২০ থেকে ২৫টি রান বেশি হলে অন্তত একটা ভালো লড়াই হতো। এনইউ/জেআইএম

Advertisement