শীতকালে তুষারে ঢাকা পড়ে পৃথিবীর অনেক অঞ্চল। তাই সে অঞ্চলে গড়ে তোলা হয় সম্পূর্ণ বরফে তৈরি হোটেল। বিশ্বজুড়ে বরফের হোটেল বেশ কয়েকটি। তবে কানাডা, ফিনল্যান্ড, জাপান, নরওয়েসহ কয়েকটি দেশে তৈরি করা হয় বরফের হোটেল। নির্মাণশৈলী, সৌন্দর্য- সবদিক দিয়েই হোটেলগুলো বিস্ময়কর।বিশ্বের নানাপ্রান্তে বরফের অনেকগুলো হোটেল থাকলেও সবচেয়ে জনপ্রিয় হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে কানাডার ডি গ্লেস, সুইডেনের জাক্কাসজারভি এবং ফিনল্যান্ডের লাভাত্তুমা।বৈশিষ্ট্যবরফের হোটেলগুলো মূলত ক্ষণস্থায়ী। শীতকালে এগুলো নির্মাণ করা হয়। তাই প্রতিবছরই নতুন করে তৈরি করতে হয়। বরফের হোটেলের সবকিছুই বরফ ও তুষার দিয়ে তৈরি। বিছানা, টেবিল, চেয়ার, এমনকী বাথরুমও তুষারের সৃষ্টি। এছাড়াও হোটেলের দেয়াল ও ছাদে চমৎকার বরফের নকশা। এসবের সঙ্গে নানা রঙের আলোর ঝলকানি। সব মিলিয়ে হোটেলগুলো হয়ে ওঠে স্বপ্নপুরীর মতো।যাত্রা শুরু১৯৮৯ সালে জনৈক জাপানি আইস ভাস্কর জুক্কাসজারভি গ্রামে আইস শিল্পকর্মের এক প্রদর্শনী হল স্থাপন করেছিলেন। এর পরের বছর ১৯৯০ সালে ফরাসি শিল্পী জেনট ডেরিস ওই গ্রামেই প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন। প্রদর্শনীতে অনেক দর্শক সমাগম হয়। একরাতে নিকটবর্তী হোটেলে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অতিথিরা প্রদর্শনী হলটিতে রাত যাপনের জন্য আবেদন করেন। প্রদর্শনী হলটি ছিল বরফ দ্বারা তৈরি। অতিথিরা স্লিপিং ব্যাগ ও সম্বরের চামড়া গায়ে জড়িয়ে রাত যাপন করেন। সেই থেকে শুরু হয় আইস হোটেলের যাত্রা।নির্মাণশৈলীবরফের হোটেলের কাঠামো তৈরি হয় মোটা শক্ত আইসবার দিয়ে। আইসবারগুলো কাচের মতো স্বচ্ছ আবার অস্বচ্ছও হয়। হোটেলের প্রতিটি কক্ষ, বিছানা, দেয়াল, আসবাবপত্র, ঝাড়বাতি, শিল্পকর্ম সবই তৈরি হয় আইস দিয়ে। হোটেলের খাদ্যসামগ্রী, ব্যবহারিক বস্তুগুলোও তৈরি হয় আইস থেকে। পার্শ্ববর্তী নদী থেকে নিয়ে আসা বিরাট বরফের চাঁই কেটে তৈরি হয় বরফের ইট। ওই ইট দিয়ে তৈরি হয় বিশাল আইস হোটেল। রাত যাপনআইস হোটেলে রাত যাপন করা যায়। এর জন্য রয়েছে শীতল ও উষ্ণ কক্ষ। প্রতিটি কক্ষের তাপমাত্রা মাইনাস পাঁচ ডিগ্রি। শীতল কক্ষগুলোয় বরফের বিছানায় সম্বরের চামড়ার চাদর ও লেপ দিয়ে বিছানা সাজানো, তবে স্নান করার ব্যবস্থা নেই। সে ব্যবস্থা রয়েছে উষ্ণ কক্ষে। উষ্ণ কক্ষগুলো সাজানো গোছানো তবে কাঠের তৈরি।ভাড়াকক্ষগুলোর প্রতিরাতের ভাড়া বিভিন্ন রকম। তবে কোনো কোনো কক্ষের ভাড়া অপেক্ষাকৃত কম। ইচ্ছে করলে আপনি এক রাতের মধ্যে অর্ধেক রাত শীতল কক্ষে ও অর্ধেক রাত উষ্ণ কক্ষেও থাকতে পারেন। দুটি পরিবেশেরই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। আইস হোটেলে বিয়ে আয়োজনের ব্যবস্থাও রয়েছে।ধারণ ক্ষমতাকোনো কোনো হোটেলে অতিথি আপ্যায়ন সীমাবদ্ধ। এটা অনেকটা স্থাপনার ওপর নির্ভর করে। হোটেল ডি গ্লেসকানাডার কিউবেকে অবস্থিত হোটেল ডি গ্লেস। আইস হোটেল বা বরফের হোটেল বলতেই সবার আগে মনে আসে এই হোটেলটির নাম। ২০০১ সালে নির্মাণ করা হয় ৮৫ রুমের এ হোটেল। এখানে একটি বারও রয়েছে। প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত হোটেলটি খোলা থাকে। নির্মাণশৈলী ও নকশার কারণে সব আইস হোটেলের মধ্যে প্রথম সারিতে রাখা হয় হোটেল ডি গ্লেসকে।হোটেল জুক্কাসজারভি সুইডেনের জুক্কাসজারভি হোটেলটি খোলা থাকে প্রতিবছর ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। এটিই বিশ্বের প্রথম আইস হোটেল। প্রায় সাড়ে ৬ হাজার স্কয়ার ফিট জায়গা নিয়ে তৈরি এটি। এর কদর অন্যদের চেয়ে আলাদা। এখানে ৮০টি রুম ও স্যুট রয়েছে। এখানে একটি চমৎকার নকশা করা এন্ট্রেস হল ও একটি বার রয়েছে। বারের জানালার কাঁচও তৈরি বরফ দিয়ে। অপূর্ব শৈল্পিক নকশার জন্য এ হোটেলটির খ্যাতি বিশ্বজুড়ে।হোটেল লুভাত্তুমাফিনল্যান্ডের সর্বউত্তরের এলাকা ল্যাপল্যান্ড শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরের একটি পাহাড়ে রয়েছে হোটেলটি। ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর এ হোটেলটি উন্মুক্ত হয়। এ স্থাপনাই পৃথিবীর শীতলতম হোটেল। একই সঙ্গে এ হোটেলে রয়েছে বিয়ের সুব্যবস্থা। এই মৌসুমে ৪০ থেকে ৬০টি জুটি এখানেই গাঁটছড়া বাঁধতে পারবে। এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডেস্টিনেশন লেভি। টানা দুই মাসের শ্রমে হোটেলটি নির্মিত হয়েছে। এর কক্ষ সংখ্যা ১২।এসইউ/এমএস
Advertisement