প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিট্যান্স আহরণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। সদ্য বিদায়ী বছরেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে।২০১৬ সালে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৩৬১ কোটি মার্কিন ডলার। যা ২০১৫ সালে ছিল এক হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ১৭০ কোটি ৬১ লাখ মার্কিন ডলার বা ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ। টাকার অংকে যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়া, ব্যাংকিং চ্যানেল বহির্ভূতভাবে টাকা দেশে আসা এবং কিছু মুদ্রার মান কমে যাওয়ার কারণেই রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে কমছে।এদিকে স্বাধীনতার পর দেশের ইতিহাসে বছরের হিসাবে ২০১৩ সালে প্রথমবারের মত রেমিটেন্স প্রবাহ কমে। এর পর থেকেই পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০১৪ সালে প্রবাসীরা এক হাজার ৩৭১ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ মূল্যের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে পাঠিয়েছিলেন এক হাজার ৩৮৩ কোটি ৮০ লাখ (১৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন) ডলার।এ বিষয়ে সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বেশ কয়েকটি কারণে রেমিট্যান্স কমছে। এর মধ্যে অন্যতম ডলারের বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী হচ্ছে। এতে আমদানি কারকদের সুবিধা হলেও রেমিট্যান্স ও রফতানিতে প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যে দেশগুলোতে প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমে গেছে। এছাড়া সম্প্রতি হুন্ডির তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে।হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৫ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার। যা নভেম্বরেও এসেছিল ৯৫ কোটি ১৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাত্র ৭৪ লাখ ডলার বেশি এসেছে। আর বিগত ৫ বছরের মধ্যে গত নভেম্বরেই প্রথম কোন একক মাস হিসেবে নভেম্বরে একশ কোটি ডলারের নীচে রেমিট্যান্স দেশে আসে। বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরের এ ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) প্রথম ছয়মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছে ৬১৬ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। যা তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭৪৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ বা ১৩২ কোটি ৩ লাখ ডলার কম রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। এছাড়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৭৪৮ কোটি ডলারের বেশি। সার্বিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভংকর সাহা বলেন, তেলের দাম কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের আয় কমেছে। এটা একটা বড় কারণ। এছাড়া অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো নিয়ে আলোচনা আগে থেকেই ছিল। তবে নতুন করে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে একটি গ্রুপ সিঙ্গাপুর-মালেয়শিয়াসহ কয়েকটি দেশে প্রবাসীদের বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ চলছে। তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই রেমিট্যান্স নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ আগের বছরগুলোতে দেখা গেছে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রতিমাসেই রেমিট্যান্স বেড়েছে। না বাড়লেও একই পর্যায়ে থেকেছে। কিন্তু এখন সেটা ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে। এদিকে ডিসেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে ২৮ কোটি ১৬ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৯৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এক কোটি ১২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বরাবরের মতই বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে। ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে ১৯ কোটি ৮৬ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৭ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলার এবং জনতার মাধ্যমে ৭ কোটি ৫৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে।এসআই/ এএইচ/এমআরএম
Advertisement