বিদায় নিতে চলেছে ২০১৬ সাল। তবে গত বছরের মতো এ বছরও প্রায় সবার মুখে মুখে ছিল ইসলামিক স্টেট বা ‘আইএস’ বিতর্ক। ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশানে ঘটে ইতালিয়ান নাগরিক তাভেলা হত্যাকাণ্ড। এরপর শুরু হয় একের পর এক বিদেশি হত্যার ঘটনা। এসব হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বার্তা দেয় কথিত আইএস। এরপরই বাংলাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে আইএস। চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল সংঘটিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীর হত্যাকাণ্ডের দায়ও স্বীকার করে বিবৃতি দেয় আইএস। তবে বরাবরের মতো বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব থাকার কথা অস্বীকার করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও র্যাব পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা। এরপর চলতি বছরের ১ জুলাই সবাইকে হতবাক করা হামলার ঘটনা ঘটে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয়। যার দায়ও স্বীকার করে বিবৃতি দেয় আইএস। এ হামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ দেশি-বিদেশি ২০ জিম্মি নিহতের পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। আইএসের শেকড় খোঁজার দায়িত্ব দেয়া হয় জঙ্গি দমনে বিশেষায়িত কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিটকে। গুলশান হামলার তদন্তে নেমে নতুন জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব খুঁজে পায় সিটি ইউনিট। আবিষ্কৃত হয় ‘নব্য জেএমবি’। গোয়েন্দাদের তদন্ত অনুযায়ী, নব্য জেএমবির সদস্যরা পুরাতন জেএমবির মাওলানা সাঈদুর রহমানের মতাদর্শবিরোধী। সদস্যদের বেশিরভাগই উচ্চবিত্ত, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। নব্য জেএমবির সদস্যরা জীবনে অন্তত একবার মালয়েশিয়া, আফগানিস্তান, তুরস্ক, সিরিয়া, লিবিয়া ছাড়াও প্রথম বিশ্বের দেশগুলোতে ঘুরতে কিংবা পড়াশুনা করতে গিয়েছেন। গোয়েন্দা ভাষ্যমতে, সেই দেশগুলোতেই মুসলমানদের উপর খ্রিস্টান ও ইহুদিদের অত্যাচার, নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে এই গ্রুপের সদস্যদের মগজ ধোলাই বা ব্রেন ওয়াশ করা হয়েছে। এরা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএসের) মতাদর্শী। তাদের আইএসের তৈরি বিভিন্ন ভিডিও দেখিয়ে কথিত জিহাদে আগ্রহী করা হয়। নতুন এই জেএমবির সংগঠক ও প্রধান ছিলেন কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি তামিম আহমেদ চৌধুরী। তবে নব্য জেএমবিতে তাকে শেখ আবু ইব্রাহীম নামেই জানতো সবাই। এ বছরের ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন তামিম। পুলিশের একের পর এক জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর প্রকাশ্যে আসতে থাকে নব্য জেএমবির তৎপরতা। এদের কেউ কেউ আইএস-মতাদর্শী বলেই আইএসের নাম বিক্রি করে নাশকতা করে। আর ইন্টারনেটে ছবি পাঠিয়ে আইএসের নামে দায় স্বীকার করে। তবে বছরের শেষে জঙ্গি ইস্যুতে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে র্যাব-পুলিশ। অক্টোবরে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন আব্দুর রহমান নামে এক জঙ্গি। এ ঘটনার কয়েকদিন পর সংবাদ সম্মেলনে করেন র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। আব্দুর রহমানকেই নব্য জেএমবির প্রধান দাবি করেন তিনি। এ নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয় নতুন বিতর্ক। একই ঘটনায় র্যাব-পুলিশের ভিন্ন তদন্তের ফলাফল উঠে আসে। প্রকাশ্যে আসে তাদের দ্বন্দ্ব। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুপক্ষই নিজেদের তদন্তের পক্ষে অবস্থান নেয়। নব্য জেএমবির প্রধানের বিষয়টি এখনো অমীমাংসিতই রয়েছে। এআর/জেডএ/পিআর
Advertisement