বিশেষ প্রতিবেদন

আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে ৪৩ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে দেশের ৪৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সভা, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল ও অর্থকমিটির গুরুত্বপূর্ণ সভা না করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন তারা। এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতাসীন কর্তৃপক্ষের কাছে অসহায় নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমশিন (ইউজিসি)। নখ-দন্তহীন হওয়ায় অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ ইউজিসির। ইউজিসি’র ৪২তম বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘আইন-২০১০’ অনুযায়ী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য একটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যাবলি, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ও সাধারণ ব্যবস্থাপনা তত্ত্বাবধানের জন্য উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট গঠিত হবে। একাডেমিক বিষয় দেখভালের জন্য গঠিত হবে একাডেমিক কাউন্সিল। এরও সভাপতি থাকবেন উপাচার্য। এছাড়া বার্ষিক বাজেট প্রণয়নে গঠিত হবে অর্থ কমিটি। ইউজিসি সূত্র জানায়, নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই করছে না বোর্ড অব ট্রাস্টি ও সিন্ডিকেট সভা, একাডেমিক কাউন্সিল ও অর্থ কমিটির মিটিং। এতে একদিকে যেমন তারা আইনের লঙ্ঘন করেছে, অন্যদিকে ভেঙে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক চেইন অব কমান্ড। এর প্রভাব পড়ছে একাডেমিক কার্যক্রমের উপর। ফলে মান কমছে এসব প্রতিষ্ঠানের। এ বিষয়ে মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ট্রাস্টি বোর্ড, একাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট সভা ও অর্থ কমিটির বৈঠক হতে হবে নিয়মিত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘন করে এসব সভা করে না। এরা মূলত আইন না মানা রেওয়াজে পরিণত করেছে, তাই বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিক পথে পরিচালনার চেয়ে অর্থ প্রাপ্তিকেই মুখ্য মনে করে। তিনি বলেন, অর্থ কমিটির বৈঠক না হলে সেখানে অর্থ নিয়ে নয়-ছয় হবে, এটাই স্বাভাবিক। সিন্ডিকেট হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী কর্তৃপক্ষ। সিন্ডিকেট না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। এ সভায় সরকার ও মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিনিধি থাকবেন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এ সভা করলেও প্রতিনিধিদের ডাকেন না। ডাকলেও সভার আগের দিন টেলিফোনে বলে থাকেন, যাতে কেউ সেখানে উপস্থিত না হতে পারে। ইউজিসিকে তোয়াক্কা না করায় আমরাও অপরাগ ভূমিকা পালন করছি।ইউজিসির প্রতিবেদন বলছে, গত বছর পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টির কোনো সভাই হয়নি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বিএইউইটি), কুইন্স ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।প্রতিবেদনে আরো দেখা যায় ১৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সিন্ডিকেট সভাই অনুষ্ঠিত হয়নি। সেগুলো হচ্ছে- ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (বিএইউএসটি), ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বিএইউইটি), বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (বিএআইইউএসটি), শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ইউনিভার্সিটি, কুইন্স ইউনিভার্সিটি, রণদাপ্রসাদ সাহা ইউনিভার্সিটি, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। আইন অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি, শিক্ষাদান, শিক্ষা ও পরীক্ষার মান উন্নয়ন এবং তা বজায় রাখতে দায়ী থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক কাউন্সিল। এছাড়াও ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (বিএইউএসটি), কুইন্স ইউনিভার্সিটি, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ফেনী ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস, শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ইউনিভার্সিটি, রণদাপ্রসাদ সাহা ইউনিভার্সিটি, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গত বছর অর্থ কমিটিরই কোনো বৈঠক করেনি। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় রয়েছে চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ইউনিভার্সিটি, রণদাপ্রসাদ সাহা ইউনিভার্সিটি, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুইন্স ইউনিভার্সিটি।এমএইচএম/জেএইচ/এসএইচএস/আরআইপি

Advertisement