রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনার পূর্বপাড়ার ‘সূর্যাভিলা’য় নব্য জেএমবির জঙ্গি আস্তানায় পরিচালিত রিপোল-২৪ অভিযানে নিহত কিশোরকে চেনে না এলাকাবাসী, দেখেওনি কোনো দিন।গত প্রায় ৪ মাস আগে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করলেও গণমাধমে প্রকাশিত নিহত কিশোরের ছবি দেখেও চিনতে পারছে না এলাকাবাসী।শনিবার দিনভর অভিযান চালিয়ে রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনার পূর্বপাড়ার ‘সূর্যাভিলা’ জঙ্গিমুক্ত করা গেলেও রয়ে যায় ওই নিহত কিশোরের মরদেহ।নব্য জেএমবির সদস্য কথিত সুমনের স্ত্রী নিহত হওয়ার পর তার মরদেহ ঢামেকে নেয়া হয়। অবিস্ফোরিত গ্রেনেড, বিস্ফোরক ও সুইসাইডাল ভেস্ট উদ্ধার ও ওই নিহত কিশোর জঙ্গির মরদেহ উদ্ধারে আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় সেখানে উপস্থিত হয় ডিএমপির বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও সিআইডির ক্রাইম সিন টিম।আস্তানার ৩টি কক্ষ নিয়ন্ত্রণে নেয়া সম্ভব হলেও একটি কক্ষে গ্যাস থাকায় ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে ওই কক্ষটি গ্যাসমুক্ত করে ফায়ার সার্ভিস ইউনিট। এরপর সেখানে প্রবেশ করে বোম ডিসপোজাল ইউনিট।কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ধারণা করা হচ্ছে রিপোল-২৪ অভিযানে আস্তানার ভেতরে নিহত ওই কিশোর জঙ্গির নাম আফিফ কাদেরি(১৫)। সে আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানায় নিহত নব্য জেএমবি সদস্য তানভীর কাদেরির ছেলে। তবে তা ফরেনসিক পরীক্ষার পরই শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাবে।আশকোনার পূর্বপাড়ার ‘সূর্যাভিলা’র ওই বাসার ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম সূত্রে জানা যায়, স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে ইমতিয়াজ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি বাসাটি ভাড়া নেন গত ৩ সেপ্টেম্বর।বাড়িওয়ালার মেয়ে জোনাকি রাসেল জানান, ১ সেপ্টেম্বর ভাড়া পরিশোধের পর তারা ৩ তারিখে বাসায় উঠেন। ইমতিয়াজ নিজেকে অনলাইন ট্রেডার্স হিসেবে পরিচয় দেন।প্রায় ৪ মাস আগে ওই বাসাটি ভাড়া নেয়া হলেও নিহত কিশোরটিকে কেউ চেনে না। রোববার দুপুরে তার ছবি আশকোনা এলাকার একাধিক বাসিন্দা ও দোকানদারকে দেখানো হলেও কেউ নাম পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি। শুধু তাইই নয় এলাকার কেউই তাকে এর আগে দেখেননি বলে জানান।নূর ইলেক্ট্রনিক্সের কর্মচারি নূর ইসলাম জানান, এই কিশোরকে আগে কখনো দেখিনি। হয়তো ঘর থেকে বেরই হতো না। অন্য কোনো মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জিনিপত্র বাইরে থেকে কিনে নিয়ে যেতো।মদিনা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের কর্মচারি জানান, ছবির এ ছেলে এই বাসায় থাকলে অবশ্যই একবার তো দেখতামই। কিন্তু আমি একবারও দেখিনি এটা বিশ্বাসই হয় না। হয় বাইরে থেকে ওই ছেলে ২/১ দিন আগে এসেছে, নয় তো ঘর থেকে কখনো বেরই হতো না।সবজি বিক্রেতা সাহাদুল ইসলাম নিহতের ছবি দেথে জানান, এমন কাউকে তিনি দেখেননি। ছবির কিশোরকে তিনিও চেনেন না।একইভাবে আল রাজি ফার্মেসি, মেসার্স মদিনা ইলেক্ট্রনিক্সসহ জঙ্গি আস্তানা সংলগ্ন এলাকার একাধিক দোকানদার ও সবজি বিক্রেতা জানান, তারা কেউ চেনেন না ওই নিহত কিশোরকে।তবে গতকাল (শনিবার) দুপুরে জনি নামে এক কিশোর সবজিবিক্রেতা জানান, ওই বাসায় একাধিকবার তার যাওয়া হয়েছে। সবজি বিক্রির সুবাদে তার সঙ্গে শহীদ নামে এক যুবকের পরিচয় হয়। শহীদের সঙ্গে সে ওই বাসাতে যেতো। তার কাছেও জিহাদের কথা বলেছে। পাশাপাশি অস্ত্র দেখিয়ে বলতো, অস্ত্র চালানো ও বোমা বানানো শেখা উচিত। তাকে ইসলামের পথে ডেকে বলতো, ইসলামের পথে থাকতে হলে মানুষও মারতে হতে পারে।‘মানুষ মারা কেমন ইসলাম’ বলে জিজ্ঞেস করলে শহীদ নামে পরিচয় দেয়া ওই কিশোর জানান, মানুষ না মারলে তোমাকেই মরতে হবে।তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর জনির আর খোঁজ মেলেনি। পরে ৬৭/৫৩ নং বাসায়ও কাউকে পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, জনির মা গার্মেন্টস কর্মী। গতকাল জনিকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে দক্ষিণখান থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) তপন চন্দ্র সাহা জানান, ডিবির বোম ডিসপোজাল ইউনিটের বোমা নিস্ক্রীয় কার্যক্রম ও সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট আলামত সংগ্রহের কাজ শেষে নিহত জঙ্গির মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে।জেইউ/এমএমজেড/জেআইএম
Advertisement