সেপ্টেম্বরে এএফসি অনুর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবলে বাংলাদেশ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূল পর্বে উত্তীর্ণ হওয়ার পর দেশের নারী ফুটবল পেয়েছে অন্য রকম মর্যাদা। কৃষ্ণা, সানজিদা, মার্জিয়া- এই নাম গুলো এখন ছড়িয়ে পড়েছে সবার মুখে মুখে। আসলে বয়স ভিত্তিক ফুটবলে শেষ দুই বছরে মেয়েদের পারফরমেন্সই লাইম লাইটে নিয়ে এসেছে দেশের নারী ফুটবলকে। এএফসি অনুর্ধ্ব-১৪ পর্যায়ে পরপর দুটি শিরোপা জয় করেছে বাংলাদেশ। অনুর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্টটি ধরলে টানা তিনটি। বয়স ভিত্তিক পর্যায়ে যখন এমন পারফরমেন্স, ঠিক সেই সময়ই মেয়েদের মূল জাতীয় দলের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে এসেছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। ২৬ ডিসেম্বর ভারতের শিলিগুড়িতে শুরু হবে নারী সাফের চতুর্থ আসরটি। সাত দলের টুর্নামেন্টে ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের সঙ্গী ভারত ও আফগানিস্তান। যেখানে বাংলাদেশের প্রাথমিক লক্ষ্য সেমিফাইনাল।বয়স ভিত্তিক পর্যায়ে সাফল্য এলেও সাফের সঙ্গে রয়েছে তার বিস্তর ফারাক। কারণ সাফে খেলবে সবদেশের মূল জাতীয় দল। সেখানে আধিপত্য আর বয়সভিত্তিক ফুটবলের মত থাকবে না, এটাই সত্যি। সর্বশেষ দুই আসরে সেমিফাইনাল খেলা বাংলাদেশ সেই বাস্তবতা মেনেই এবারও সেমিফাইনালকেই নিজেদের প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে ঠিক করে নিয়েছে। টুর্নামেন্টের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার আগে আজ (শনিবার) বাফুফে ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের কোচ-অধিনায়ক তাদের এমন লক্ষ্যের কথাই সংবাদ মাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন।সাফের জন্য ২০ সদস্যের দল চূড়ান্ত করা হয়েছে আজই। সর্বশেষ অনূর্ধ্ব-১৬ দলে খেলা মেয়েদের মধ্য থেকে এই দলে রাখা হয়েছে ১৫ জনকেই। সঙ্গে থাকছে ৫ জন সিনিয়র খেলোয়াড়। তারা হলেন- অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, সহঃঅধিনায়ক মাইনু মারমা, দুই গোলকিপার সাবিনা আক্তার ও রওশন আরা এবং মুনমুন আক্তার। কৃষ্ণা, সানজিদা, স্বপ্নারা অনূর্ধ্ব-১৬ দল থেকে এলেও তারা আগেই খেলেছে জাতীয় দলে। ২০ সদস্যের এই দলটিতে তাই নতুন মুখ কেবল পাঁচ জন- দুই জমজ বোন আনুচিং ও আনাই মুগিনি, নিলুফা ইয়াসমিন নিলা, ইশরাত জাহান রত্না ও গোলকিপার মাহমুদা আক্তার।সাফের আগে আনুষ্ঠানিক কোন প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা হয়নি মেয়েদের। শেষ মূহুর্তে দেশ ছাড়ার আগে যা নিয়ে আর কোনোকিছু ভাবতে চান না নারী দলের প্রধান কোন গোলাম রব্বানী ছোটন। বরং দলের সবাই দীর্ঘদিন একসঙ্গে আছে এটিকেই বড় করে দেখছেন তিনি, ‘সেপ্টেম্বরে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ গ্রুপ পর্বে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলটির ক্যাম্পে কোন বিরতি পড়েনি। ২৮ জনকে নিয়ে আমাদের সেই থেকে ক্যাম্প চলছিল। এর মাঝে সাফের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার পর ১ নভেম্বর ১১জন সিনিয়র খেলোয়াড়কে ক্যাম্পে ডাকি। মিরনা ও বিপাশা ব্যাক্তিগত কারণে যোগ দেয়নি। বাকি ৯ জন ও অনূর্ধ্ব-১৬ দলের ২৮ জন নিয়ে শুরু হয় আমাদের সাফ ট্রেনিং। পরে ৩৭ জনের প্রাথমিক ক্যাম্পকে আমরা ৩৪ জনে নিয়ে আসি। সেখান থেকে আজই ২০ সদস্যের দল চূড়ান্ত করা হয়েছে।’২৬ ডিসেম্বর টুর্নামেন্ট শুরু হলেও বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ ২৯ ডিসেম্বর, প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। মূলতঃ এই ম্যাচটিকেই পাখির চোখ করেছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচটি ৩১ ডিসেম্বর। টুর্নামেন্টের নিয়ে দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বলেন, ‘আমাদের গ্রুপের দুটি দলই (ভারত ও আফগানিস্তান) খুব শক্তিশালী। আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রথম ম্যাচটি জিতে সেমিফাইনাল কোয়ালিফাই করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। বাকিটা ম্যাচ বাই ম্যাচ আমরা চিন্তা করবো। দেশবাসির কাছে আমরা দোয়াপ্রার্থী, সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন, প্রতিবার যেমন আমরা আমাদের সামর্থের সেরাটা দিয়ে এসছি এবারও যেন তেমনটা পারি। এবারের টিমটা জুনিয়র-সিনিয়র একত্রে করা হয়েছে, আশাবাদী আমরা ভালো কিছু নিয়েই ফিরবো আমরা।’বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল:সাবিনা খাতুন (অধিনায়ক), মাইনু মারমা (সহ:অধিনায়ক), সাবিনা আক্তার, শিউলি আজিম, শামসুন্নাহার, নার্গিস খাতুন, মাসুরা পারভীন, সানজিদা আক্তার, মিশরাত জাহান মৌসুমী, সিরাত জাহান স্বপ্না, মার্জিয়া, কৃষ্ণা রানী দাস, নিলুফা ইয়াসমিন নিলা, মারিয়া মান্ডা, আনাই মোগিনি, ইশরাত জাহান রত্না, আনুচিং মোগিনি, রওশন আরা, মুনমুন আক্তার ও মাহমুদা আক্তার।আরআই/আইএইচএস/আরআইপি
Advertisement