ভ্রমণ

ঘুরে আসুন সাতক্ষীরার নলতা শরীফ

খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) ছিলেন একজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, শিক্ষা সংস্কারক ও সমাজহিতৈষী। তার সমাধিস্থলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সাতক্ষীরার নলতা শরীফ। যার অগ্রণী ভূমিকায় ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও তিনি একজন উচ্চস্তরের আউলিয়া ছিলেন। সম্প্রতি সাতক্ষীরার এই দর্শনীয় স্থান ঘুরে এসে বিস্তারিত জানাচ্ছেন মাহবুবর রহমান সুমন।পরিচিতিসাতক্ষীরা জেলার (তৎকালীন খুলনা জেলা) নলতা শরীফে ১৮৭৩ সালে ডিসেম্বর মাসের কোন এক শনিবার প্রত্যুষে হজরত খানবাহাদুর আহছানউল্লা (র.) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সেই সময়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। তার উদ্যোগেই পরীক্ষার খাতায় নামের বদলে রোল নম্বর লেখার নিয়ম চালু হয়। এছাড়া তিনি শিক্ষার প্রসারের জন্য বহু স্কুল ও প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বাংলাদেশের বিখ্যাত আহছানিয়া মিশন। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন বিষয়ের উপর বহু গ্রন্থ রচনা করে গেছেন।ইতিহাসখানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) সবাইকে কাঁদিয়ে ১৯৬৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৯২ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি এই নলতা শরীফে পরলোক গমন করেন। তাকে তার জন্মস্থান নলতায় সমাহিত করা হয়। পরে তার সমাধিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে আজকের খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা সমাধি কমপ্লেক্স বা নলতা শরীফ।এখানে যা আছেপ্রায় ৪০ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা এই কমপ্লেক্সের মধ্যে আছে মাজার, মসজিদ, অফিস, লাইব্রেরি, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, অতিথিশালা, পুকুর ও বেশকিছু উন্মুক্ত জায়গা। প্রায় ৪ বিঘা জমির ওপর একটি উঁচু ঢিবির মতো দেখতে, যার চারদিকের ঢালে রয়েছে নজরকাড়া ফুলের বাগান। এ বাগানের শীর্ষে রয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন সমাধিসৌধ। এর নির্মাণশৈলী ও নির্মাণ উপকরণ অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও মূল্যবান। সমাধিসৌধে ওঠার জন্য রয়েছে তিন দিকে ৩টি সিঁড়ি। তবে দক্ষিণের সিঁড়িটি বেশ প্রশস্ত এবং আকর্ষণীয়। মোট ৯টি গম্বুজ দ্বারা সৌধটি সুশোভিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় গম্বুজটি বেশ বড় এবং দর্শনীয়। এছাড়া নলতা শরীফে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) ও তার পরিবারের ব্যবহৃত জিনিস নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে একটি জাদুঘর। তাছাড়া এখানে তৈরি করা হচ্ছে ২০ হাজার জনের ধারণ ক্ষমতার একটি অত্যাধুনিক মসজিদ।বার্ষিক ওরসতার তিরোধান উপলক্ষে প্রতিবছর ৮, ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি বার্ষিক ওরস মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এসময় নলতা শরীফকে সাজানো হয় ভিন্নভাবে। ওরস মাহফিলের সময় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত-অনুরাগীরা ছুটে আসেন। এছাড়া প্রতি রমজানে নলতা শরীফে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।পরিদর্শনের সময়সূচিনলতা শরীফ দর্শকদের জন্য সব সময়ই উন্মুক্ত থাকে। তবে জাদুঘরটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে।যেভাবে যাবেন ঢাকার কল্যাণপুর, মালিবাগ ও গাবতলীসহ প্রায় সব বাসস্ট্যান্ড থেকে এসি-নন এসি পরিবহনে সাতক্ষীরা যাওয়া যায়। সাতক্ষীরা থেকে কালীগঞ্জগামী যেকোনো যানবাহনে নলতা শরীফ যাওয়া যায়। সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের পাশে নলতা শরীফের অবস্থান। কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে নলতা শরীফ ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।এসইউ/জেআই

Advertisement