বিশেষ প্রতিবেদন

ধানের শীষ হারলে কপাল পুড়বে তিন নেতার

রাত পোহালেই বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বিজয় ছিনিয়ে আনতে মরিয়া প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন পরাজিত হলে ‘অসহযোগিতার’ কারণে দলটির স্থানীয় তিন নেতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দলীয় সূত্রে এ আভাস পাওয়া গেছে।নির্বাচনের তিনদিন আগেই সোমবার রাতে ওই তিন নেতাকে নির্বাচনে তাদের অবস্থানের বিষয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া এমন খবরও প্রকাশ পেয়েছিল সংবাদমাধ্যমে।সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জে দ্বিতীয় সারির নেতা হিসেবে পরিচিত সাখাওয়াতকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার পর থেকেই আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে স্থানীয় তিন নেতার বিরুদ্ধে বিএনপির প্রার্থীকে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছিল। মাঝপথে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতির পরিবর্তন হলেও শেষ সময়ে এসে তাদের ভূমিকার হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতারাও। সবমিলিয়ে হিসাবের হেরফেরে ধানের শীষের প্রার্থী পরাজিত হলে কঠিন খেসারত দিতে হতে পারে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও গিয়াস উদ্দিনকে। এ তিন প্রভাবশালীর সঙ্গে আরও কয়েকজন স্থানীয় নেতার নামও যুক্ত হতে পারে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, সর্বশেষ সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় নেতাদের শেষবারের মতো সতর্ক করেন খালেদা। বিভেদ ভুলে সাখাওয়াতকে যেকোনো মূল্যে জয়ী করতে কঠোর নির্দেশনাও দেন তিনি। আর নির্দেশনা অমান্যের কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে ভয়াবহ খেসারত দিতে হতে পারে তাদের। এর বিপরীতে প্রচারণার সময় তৈমুর আলম ব্যস্ত ছিলেন ভাই কাউন্সিলর প্রার্থী খোরশেদ আলমকে নিয়ে। কালাম ও গিয়াসের ব্যস্ততা ছিল ছেলে আবুল কাউছার আশা ও মোহাম্মদ সাদরিলকে নিয়ে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী গণসংযোগে গেলে কালামের স্ত্রী তাকে অভ্যর্থনা জানান বলে অভিযোগ রয়েছে।নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিত সম্পর্কে জানতে চাইলে গিয়াস উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এখনো কোথাও হয়নি। সবার মধ্যে একটা আশঙ্কা বিরাজ করলেও এখন পর্যন্ত ভালো আছে। বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে যথেষ্ট পরিমাণ ওয়ার্ক করা হয়েছে। আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’বিএনপি প্রার্থীর বাইরে ‘কেবল’ ছেলের পক্ষে ভোট চাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বাইরে তো কোথাও যাই না, অন্য স্থানে কাজে অবহেলার বিষয়টি বলতে পারবো না। তবে আমার এলাকায় আগে সমস্যা ছিল, এখন কোনো সমস্যা নেই।’এদিকে সর্বশেষ খালেদা জিয়ার নির্দেশনার পর তাদের ভূমিকার বিষয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতারা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে। জেলা বিএনপি নেতাদের দাবি, নারায়ণগঞ্জে বিএনপির অতীত প্রভাব আর ভোটারদের মধ্যে সরকারবিরোধী মনোভাবের কারণে সুষ্ঠু ভোট হলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন সাখাওয়াত। স্থানীয় রাজনীতির মাঠে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখছেন অনেকে। ওয়ার্ড পর্যায়ে মেয়র নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব যেসব নেতার কাঁধে দেয়া হয়েছে তাদের অনেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে আশানুরূপ যোগাযোগ রক্ষা করছেন না। আবার অনেকে ইচ্ছে করে মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় নেতাকর্মীদের।রাজনীতির মাঠে নবীন একজন ধানের শীষের প্রার্থী, তার উপরে প্রভাবশালী স্থানীয় নেতাদের অসহযোগিতা- দুই মিলে বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে সাখাওয়াতের ভরাডুবিরই ইঙ্গিত মিলছে। প্রার্থীর সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের এমন দূরত্ব, বিরোধ ও অসহযোগিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে নির্বাচনে বিএনপির সমন্বয়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত গয়েশ্বের চন্দ্র রায়ের কথায়ও। বুধবার রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, এ পর্যন্ত নির্বাচনের যেমন পরিবেশ এমন পরিস্থিতিতে অন্য কোনো কথা বলার কোনো কারণ নেই। নির্বাচনীকালীন সময়েও যদি এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে তাহলে নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। বিএনপির প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। দায়িত্ব অবহেলার বিষয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে এসে এমন থাকেই। এ অভিযোগগুলো আমলে নিচ্ছি। তবে এসব অভিযোগের মাত্রাটা একটু কম। আর যারা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন ওয়ার্ডের দায়িত্বে ছিলেন তারা নির্বাচন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভূমিকা মনিটরিং করবেন। তবে এমন আশা-নিরাশার মাঝে শেষ মুহূর্তে বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠতে পারলে বিজয়ের দেখাও পেতে পারে টানা ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে বৃহস্পতিবার রাতে ভোট গণনা শেষ হওয়া পর্যন্ত।এমএম/জেএইচ/আরআইপি

Advertisement