বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচন আগামীকাল। দীর্ঘ ৮ বছর পর নারায়ণগঞ্জে চলছে ভোটের লড়াই। এই নির্বাচনের ফলাফলের মধ্য দিয়েই জানা যাবে আগামী পাঁচ বছরের জন্য কে হচ্ছেন এই নগরীর অভিভাবক।নির্বাচন, ভোট আর প্রার্থীদের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় মশগুল নারায়ণগঞ্জবাসী। সর্বত্রই এখন ভোটের আলোচনা। আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে প্রার্থীদের দেয়া প্রতিশ্রিুতি। প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে দিয়েছেন প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি। বিষোদ্গারও করেছেন পরস্পরের। সবশেষে এখন জয়-পরাজয় বরণ করে নেয়ার পালা।নাসিক নির্বাচনে প্রচারণা শেষে এখন ভোটের হিসাব কষছেন নগরবাসী। তাদের মতে, ভোটের সমীকরণ পাল্টে দেবে নতুন ভোটারদের ভোট। নাসিকের ৭৫ হাজার নতুন ভোটার রয়েছে। এসব ভোটারের ভোট যার পক্ষে পড়বে সেই প্রার্থীই নির্বাচিত হতে পারেন।নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে একাধিক স্থানীয় সমাজসেবী, রাজনৈতিক, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নতুন ভোটারদের বিষয়ে কথা হলে তারা জানান, বড় দুই রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রতিশ্রুতি জানিয়েছেন। তাদের এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে নাসিকের ৭৫ হাজার নতুন ভোটারের মধ্যে। দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে চলা নাসিক নির্বাচনে এই নতুন ভোটাররা একটা ফ্যাক্টর।নাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নগর উন্নয়নে ২১টি পরিকল্পনাসহ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছেন।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চলমান উন্নয়ন কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন, সড়ক উন্নয়ন, সমন্বিত ড্রেনেজ সিস্টেম, পয়নিষ্কাশন ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তোলা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, সুশাসন নিশ্চিত করা, ক্ষুদ্রঋণ, নতুন বাস ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ, নারায়ণগঞ্জকে মেট্রোরেলের সঙ্গে সংযুক্ত করা ইত্যাদি। অন্যদিকে নাসিক নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান নগরবাসীর উন্নয়নে নির্বাচনী ইশতেহারে ২৫টি উন্নয়ন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সব ধর্মের লোকদের সমন্বয়ে উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠন, শীতলক্ষ্যা সেতু বাস্তবায়ন, যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস নির্মাণ, আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা নিরসন, শিক্ষা বৃত্তি চালু, পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। নিজেদের শহরের উন্নয়নে নতুন ভোটাররা চিন্তা করছেন একটু ভিন্নভাবে। এ বিষয়ে নতুন পুরুষ ভোটারদের প্রথম প্রত্যাশা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন, শহরের উন্নয়ন। আর নতুন নারী ভোটারদের প্রথম প্রত্যাশা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন।নগরীর একটি কলেজে স্নাতক পড়ছেন হাসিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলটল বুঝি না। আমি নতুন ভোটার হিসেবে এমন প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই যিনি আমাদের এই শহরের উন্নয়ন করবেন। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা নিরসন এবং পরিচ্ছন্ন নগরী আমাদেরকে যিনি উপহার দিতে পারবেন আমরা তাকেই ভোট দেবো।’শহরের শহীদ মিনারে বন্ধুদের সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন রোখসানা আক্তার নামের একজন নতুন ভোটার। এবারই প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন তিনি। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করলেও ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ভোট দিতেই নিজ শহর এসেছেন।রোখসানা বলেন, আমি প্রথম ভোট দেবো সে কারণে আমার মত নতুন ভোটারদের মধ্যে একটি আলাদা উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা চাই নারায়ণগঞ্জ শহরের উন্নয়ন হোক; পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব ভালো থাক। এসব বিষয় নিয়ে যে প্রার্থীই কাজ করবেন আমরা তরুণ ভোটাররা সেই প্রার্থীকেই ভোট দেবো।এএস/এমআরএম/আরআইপি
Advertisement