ফিচার

শীত হোক উপভোগ্য

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিজের মতো ছুটে চলা সব মানুষের কাজ। তবে এর মধ্যে নগরজীবন পুরোটাই যান্ত্রিক। আর ছাত্রজীবনকে বলা চলে আরেক যুদ্ধজীবন। কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে ওঠা। ফ্রেশ হয়ে ক্লাসে যাওয়া, মাঝে-মধ্যে একটু গল্প-আড্ডা। সন্ধ্যায় পড়ার টেবিলে বসা, রাতের খাবার খেয়ে আবার ঘুমোতে যাওয়া। শহরে লেখাপড়া করার কারণে প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়ার সৌভাগ্য কম হয়। শহরের কংক্রিটে শীতের আমেজ উপভোগ করা যায় না। প্রকৃত শীত উপভোগের জন্য প্রয়োজন গ্রামীণ জনপদ।শীতের কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা সকালে ঘুম থেকে উঠে শিশিরভেজা ঘাসের কোমল পরশ আর সঙ্গে শীতের গরম পিঠাঅথবা গাছ থেকে নামানো খেজুরের রস খাওয়া যেন একটু ভিন্নতা এনে দেয়। শীত বাংলার গ্রামীণ জীবনে সত্যিকারার্থে বৈচিত্র্য নিয়ে আগমন করে। শীতে বাজারে পাওয়া যায় নানা রকম সবজি। রাতে আগুনের তাপ নেয়ার মজাই আলাদা। সকালে সূর্যের লুকোচুরি, একটু উঁকি-ঝুকি। অবশেষে সূর্যমামাকে দেখার প্রতীক্ষার অবসান। সবমিলিয়ে অন্যরকম অনুভূতি। তাই তো শীতের প্রকৃত আমেজ উপভোগের জন্য অনেকেই গ্রামের ঠিকানা খুঁজে নেন।গ্রামের বাড়িতে এমনিতেই সবার অনেক ভালো লাগে। তার উপর শীতের আমেজ যদি থাকে তাহলে তো সোনায় সোহাগা। কুয়াশার চাদর জড়ানো সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্রাম ঘুরে দেখতে কার না ভালো লাগে। সকালে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই চলে পিঠা-পুলি খাওয়ার উৎসব। বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা উঠানে খেলা করে। গাছি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে। গৃহিণী ঘরের কাজগুলো গুছিয়ে নেন। গ্রামের চায়ের দোকানগুলোতে চলে চায়ের আড্ডা। সবচেয়ে মজার বিষয় পিঁড়িতে বসে খেঁজুরের রস খাওয়া। মাঝে-মধ্যে দলবেঁধে খেঁজুরের রস চুরি করে খেতেও মন্দ লাগে না। প্রতিদিন নতুন নতুন পিঠা আর শীতের তাজা সবজি খাওয়ার মজাও কম নয়। এককথায় গ্রামীণ জীবনযাত্রার প্রতিটি বিষয় উপভোগ্য।তবে কিছু দৃশ্য হয়তো হৃদয়ে রেখাপাত করে। যখন শীতের সকালে শীতবস্ত্রের অভাবে একজনকে কাঁপতে দেখা যায়। তারা গরম কাপড় না থাকায় ঠিকমতো ঘুমোতে পারেন না। নগরজীবনেও আমরা সচরাচর দেখতে পাই, রাস্তার পাশে অনেক মানুষ খোলা আকাশের নিচে রাত কাটায়। তাদের শীত নিবারণের পর্যাপ্ত কাপড় নেই। শহরের মতো গ্রামীণ জীবনেও এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে ভাবতে একসময় কুয়াশা কেঁটে যায়। সোনালি সূর্যের আলোর পরশ আমাদের উষ্ণ করে তোলে। শীতার্তরা হয়তো ভাবছে আমরা তাদের কাছে শীতের কাপড় পৌঁছে দেবো। এমনটি তারা ভাবতেই পারে, ভাবতে তো আর ক্ষতি নেই। আমরা ভাবতে পারি, আমাদের করণীয় কী? যদি ভাবি, তবেই শীত হবে উপভোগ্য।লেখক: শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।এসইউ/জেআই

Advertisement