দেশে আর কোনো বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (টিটিসি) স্থাপনের অনুমতি না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেসঙ্গে এমপিওপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সরকারি টিটিসি থেকে ডিগ্রি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করারও চিন্তাভাবনা চলছে। সরকার মনে করছে, বেসরকারি টিটিসিগুলো শিক্ষার যথাযথ মান নিশ্চিত করছে না। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে যে ডিগ্রি বিতরণ করা হচ্ছে, তাতে দক্ষ শিক্ষক তৈরি হচ্ছে না। বরং অনেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষার নামে সনদ বাণিজ্য করছে। ফলে সনদসর্বস্ব এমন একশ্রেণীর শিক্ষক তৈরি হচ্ছেন, যারা শিক্ষার্থীদের মানহীন পাঠদান করে ঠকিয়ে যাচ্ছেন।বিষয়টি নিশ্চিত করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সাধারণভাবে আমরা আর কোনো টিটিসি স্থাপনের অনুমতি দেব না। যেসব এলাকায় প্রয়োজন রয়েছে, কেবল সেইসব এলাকাতেই দেব; যেন পেশাগত শিক্ষা নিতে শিক্ষকদের কষ্ট না হয়। তবে এমন প্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি পেতে কঠোর শর্ত পূরণ করতে হবে। আর যেসব এলাকায় প্রতিষ্ঠান বেশি আছে, সেখানে শুধু মানসম্পন্নগুলো বহাল থাকবে। দুর্বল ও অযোগ্যগুলো বন্ধ করে দেব। এ জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি জাতীয় কমিটি তদারকির কাজ করবে। তারা পাঠদান ও ক্লাস পরিদর্শন করবে। যুগোপযোগী ও বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষক প্রশিক্ষণের সিলেবাস তৈরি করবে।সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বেসরকারি টিটিসির ওপর এই সরকারি তোপের প্রধান কারণ হচ্ছে মানসম্পন্ন শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ দিতে ব্যর্থতা। অভিযোগ রয়েছে, অনেক কলেজই শিক্ষক প্রশিক্ষণের নামে সনদ ব্যবসা করছে। স্কুল-কলেজ বা মাদ্রাসায় নিয়োগের পর একজন শিক্ষকের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিএড করতে হয়। নইলে চাকরিসহ বেতনভাতার ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়তে হয়। এই বাধ্যবাধকতার কারণে একশ্রেণীর শিক্ষক সহজে সনদ মেলে এমন কলেজ খুঁজে বের করেন।জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একশ্রেণীর প্রতিষ্ঠান থেকে সহজেই সনদ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, পড়তে হয় বলে সরকারি টিটিসি থাকা সত্ত্বেও অনেক শিক্ষক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকেই ডিগ্রি নিতে বেশি আগ্রহী। এমন সব অভিযোগের কারণেই আমরা শিক্ষক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের মানের ওপর জোর দিয়েছি।শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষক শিক্ষার মান নিশ্চিত এবং মানহীন কলেজ বন্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে সরকার শতাধিক উপবিধিসহ ৬টি প্রধান বিধি সংবলিত কঠোর শর্তযুক্ত একটি জাতীয় প্রমিতমান তৈরি করেছে। শিক্ষক শিক্ষা, টিটিসি স্থাপন, এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগ, পাঠদান এবং কারিকুলাম-সিলেবাস বিষয়ে জাতীয় প্রমিতমান নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত নতুন কোনো টিটিসির অনুমোদন দেয়া হবে না। এ সময়ে দুর্বল ও অযোগ্য টিটিসির অনুমতি বাতিল করা হবে। ভবিষ্যতে যখন নতুন টিটিসি অনুমোদন প্রয়োজন দেখা দেবে, তখন আগে দেশের অঞ্চলভিত্তিক প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করা হবে। এই কাজটি করবে মাউশির ৯টি আঞ্চলিক অফিসকে নিয়ে বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য পরিসংখ্যা ব্যুরো (ব্যানবেইস)।বেসরকারি টিটিসির ব্যাপারে সরকারের বিরূপ মনোভাব নতুন নয়। এর আগে ২০১২ সালে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে সরকারি টিটিসি থেকে শিক্ষকদের ডিগ্রি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে প্রথমবারের মতো শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৩৩টি বেসরকারি টিটিসিকে কালো তালিকাভুক্ত করে এবং বেশ কিছু কলেজকে বিভিন্ন সময় বেঁধে দিয়ে মানোন্নয়নের ব্যাপারে আলটিমেটাম দিয়েছিল। পরে অবশ্য উচ্চ আদালতে মামলা করে বেশ কয়েকটি কলেজ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পায়।জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ড. শামসুদ্দীন ইলিয়াস বলেন, এর আগে যখন কিছু কলেজকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল, তখন ১৩টি টিটিসি আদালতে মামলা দায়ের করে। এ কারণে এরা ছাড় পেয়েছে। তবে বর্তমানে কালো তালিকাভুক্তগুলোর মধ্যে ২০টি কলেজ বন্ধ রয়েছে। ওই তালিকার বাকি ১৩টিসহ ১২৮টি বর্তমানে চালু রয়েছে।সূত্র : যুগান্তরএসএইচএ/আরআইপি
Advertisement