ভ্রমণ

দেখে আসুন জলমহল

প্রাসাদ বললেই চোখে ভেসে ওঠে বিশাল কোনো স্থাপনা। যেখানে মানুষ বাস করে। তবে জলমহল আসলে এমন কিছু নয়। পানির মাঝখানে বিশাল প্রাসাদ। চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা। প্রাসাদে যেতে হয় নৌযানে। এটি ‘জলের প্রাসাদ’ নামে পরিচিত হলেও আসল নাম ‘জলমহল’। সুযোগ পেলে একবার দেখে আসুন প্রাসাদটি।অবস্থানজলমহল দেখতে চাইলে যেতে হবে ভারতের রাজস্থানের জয়পুরে অবস্থিত পিংক সিটিতে। ইতিহাসজলমহল ‘মান সাগর’ নামক লেকের মাঝখানে স্থাপিত। এলাকার মানুষের পানিসংকট দূর করতে লেকটি তৈরি করেছিলেন রাজা মান সিং। ১৬১০ সালে হঠাৎ ভয়ানক খরা আর দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে দ্রুত বারবতী নদীতে বাঁধ দিয়ে পানির ব্যবস্থা করেন মান সিং। তৈরি করা হয় বিশাল এক লেক। যার নাম দেন মান সাগর। লেকের ওপর জলমহল বানানোর পরও এর খুব বেশি রকমফের হয়নি।নির্মাতা১৮ শতকে জলমহল নির্মাণ করেছিলেন মহারাজ মাধো সিং। এই প্রাসাদের মালিকানা পরে পান মাধো সিংয়ের ছেলে দ্বিতীয় মাধো সিং। বাবার প্রাসাদকে অবশ্য খুব একটা বাড়াননি তিনি। প্রাসাদের সঙ্গে শুধু একটা বিচারালয় যোগ করেছিলেন। নির্মাণের কারণজলমহল তৈরি হয়েছিল মাধো সিংয়ের হাঁস শিকারের জন্য। মাঝেমধ্যে নৌকায় করে হাঁস শিকারে আসতেন তিনি। থাকার কামরা নেই, তবে বিশাল একটি চত্বর রয়েছে প্রাসাদে। আছে বাঁকানো সিঁড়িসহ বাগান।কারুকার্যচারপাশে পানি থাকায় একে একতলা মনে হয়। তবে জলমহল পাঁচতলা। নিচের চারটি তলাই বছরের বেশির ভাগ সময় পানির নিচে ডুবে থাকে। রাজপুত আর মোগল- এই দুই ঘরানার শিল্পেরই দুর্লভ ছোঁয়ার দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া জলমহলের ছাদে রয়েছে বিশাল এক চারকোনা ছাতা। সুন্দর কারুকার্যখচিত ছাতার পাশে বসে কেবল দিনেরই নয়, রাতের ঝলমলে জলমহলকেও উপভোগ করা যায়। সৌন্দর্যহানীএকসময় স্থানীয় শাসকদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে এই প্রাসাদ। ফলে অনাদর-অবহেলায় নষ্ট হতে থাকে এর সৌন্দর্য। পরবর্তীতে আশপাশে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক আর গৃহস্থালির আবর্জনা এসে জড়ো হতে থাকে পানিতে। বিকট গন্ধের কারণে একসময় পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দৃষ্টির আড়ালে চলে যায় জলমহল। পরের ২০০ বছরের বেশি সময় অবহেলিতই থাকে জলমহল আর মান সাগর।সংস্কার২০০৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থা দায়িত্ব নেয় জলমহল আর মান সাগরের। তাদের চেষ্টায় খুব দ্রুত আগের রূপ ফিরে পায়। সেইসঙ্গে মান সাগরও হয়ে ওঠে পরিষ্কার। জলমহলের কাছে গেলে এখন প্রাসাদই নয়, দেখতে পাবেন পরিষ্কার পানিতে মহলের মোহনীয় ছায়া!নিষেধাজ্ঞাএখনো জলমহলকে সাধারণ পর্যটকের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। তাই দূর থেকেই এর রূপ উপভোগ করা যায়।এসইউ/এমএস

Advertisement