বিশেষ প্রতিবেদন

রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে আশাবাদী দেশবাসী

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগকে প্রথমেই স্বাগত জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। দেশের সুশীল সমাজও সাধুবাদ জানিয়েছে এ উদ্যোগকে। এছাড়া আশার আলো দেখছে দেশের সাধারণ মানুষও। বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার পর কয়েকদিন ধরে মাঠে-ময়দানে, গণপরিবহন, চায়ের স্টল বা রেস্টুরেন্টে এমনকি ঘরোয়া বৈঠকেও এ বিষয়টি আলোচনায় স্থান পাচ্ছে। সাধারণ মানুষের চাওয়া আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘সুবাতাস’ বইবে। দেশের মানুষ স্বস্তি পাবে। এর আগে গত ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। নির্বাচন বর্জনের আগে ও পরে দেশে শুরু হয় জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি। পেট্রলবোমায় দেশের মানুষ হয়ে ওঠে আতঙ্কিত। কয়েক মাস ধরে এমন অচলাবস্থা চলার পর আন্দোলন বন্ধ করে বিএনপি-জামায়াত। তারপরও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন না হওয়ায় মানুষের মধ্যে সব সময়ই একটা শঙ্কা রয়েই গেছে। এ সরকার কত দিন থাকবে, মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে কিনা, বিনিয়োগ হবে কিনা, শেয়ারবাজার পরিস্থিতি পূর্বের অবস্থায় ফিরবে কিনা নানা প্রশ্ন সাধারণ মাসুষের মনে। তাদের আশা, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হলে দেশের মানুষের অনেকটাই স্বস্তি মিলবে। সোমবার রাতে শাহবাগ মোড়ে নিয়মিত আড্ডা দিচ্ছিল একদল মানুষ। সেখানে সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার সবাই ছিলেন। তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিএনপির সংলাপ। আলোচনায় তারা বলছিলেন, রাষ্ট্রপতির এটা অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হলে এবং গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন হলে জাতি রাজনৈতিক হানাহানি থেকে মুক্তি পাবে। ওই রাতেই জিগাতলা কাঁচাবাজারের সামনে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আলোচনা করছিল ৭/৮ জনের একটি দল। পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই বোঝা গেল তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু। এখানেও নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ নিয়ে আলোচনা করছেন তারা। এখানে ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী শামসুল ইসলাম। জিগাতলা স্টাফ কোয়ার্টারে তিনি বসবাস করেন। এ বিষয়ে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। রাষ্ট্রপতি সফল হলে পুরো জাতি এর সুফল পাবে। আলোচনাকালে অন্য আরেকজন বলেন, আলোচনা করে কী কোনো সমাধান হবে? অপর কয়েকজন একসঙ্গে বলে উঠলেন রাষ্ট্রপতি একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। দেখা যাক না কি হয়। আরেকজন বলেন, এবার বিএনপির উচিত হবে নির্বাচনে অংশ নেয়া। এমনিভাবে রাস্তার মোড়, চায়ের স্টল, হোটেল-রেস্তোরাঁ, গণপরিবহনসহ বিভিন্ন স্থানে আলোচনা করছে সাধারণ মানুষ।সংলাপ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা চান রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে বিএনপি জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি থেকে সুস্থ ধারার রাজনীতিতে ফিরে আসবে। মানুষ হত্যার রাজনীতি পরিহার করে মানুষকে রক্ষার রাজনীতি করবে।এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম জাগো নিউজকে বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেছেন, হত্যার রাজনীতি বাদ দিয়ে জনকল্যাণের রাজনীতি করুন। অবৈধ পথে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ পরিহার করে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনা করুন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হবে। এর আগেই নতুন কমিশন গঠন করার বিধান রয়েছে। সার্চ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে পাঁচ সদস্যের নতুন ইসি নিয়োগের আভাস দিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এরপরই সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের তাগিদ দিয়েছিলেন।সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাষ্ট্রপতির এ উদ্যোগে সবার সম্মতিতে ইসি গঠিত হবে এবং ইসির হাতে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে।আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমরা মনে করি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার মাধ্যমে দেশে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে যাবে।সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক চারজন কমিশনার নিয়োগের বিষয়ে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে তিনি নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন। ২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। এফএইচএস/এসএইচএস/আরআইপি

Advertisement