শেষ দিনের প্রচারণায় বিশেষ বার্তা দেয়ার কথা ছিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের। সর্বশেষ প্রচারণার অংশ হিসেবে আদাজল খেয়ে মিছিলে অংশ নেবেন এমন ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন তার অনুসারীরা। কিন্তু স্থানীয় নেতাদের অসহযোগিতা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুপস্থিতির কারণে শেষ দিনে জমল না ধানের শীষের প্রচারণা।অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমর্থনে অনুসারীদের মুহুর্মুহু মিছিলে নারায়ণগঞ্জ কেঁপে উঠলেও ধানের শীষে ছিল হাহাকার। মঙ্গলবার সরেজমিনে এই চিত্র দেখা গেছে। সকাল থেকেই ধানের শীষের প্রার্থী ১৭, ১৮ ও ১৯ নং ওয়ার্ডের নিতাইগঞ্জ, কাছারিগলি, বেপারিপাড়া, মাঝধাইর, ইজদা, জামতলা, তামাকপট্টি, শহীদনগর ও শীতলক্ষ্যা এলাকায় শেষ মুহূর্তের প্রচারণা শেষ করেছেন। সকাল ৯টা থেকে শুরু করে মধাহ্নের এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণার ইতি টানেন সাখাওয়াত।তবে শেষ দিনের আকর্ষণ তথা মিছিলের মাধ্যমে প্রচারণা শেষ করার ঘোষণা দেয়া হলেও স্থানীয় নেতাদের অসহযোগিতার কারণে মোট ২৭ ওয়ার্ডের কোথাও মিছিল করতে পারেনি ধানের শীষের সমর্থকরা।এদিকে বহিরাগতদের অবস্থানে নিষেধাজ্ঞার কারণে সোমবার রাতেই নারায়ণগঞ্জ ছেড়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের শূন্যতায় নারায়ণগঞ্জে বিএনপির বিভক্তি যেন আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর গুঞ্জন ছিল স্থানীয় নেতারা সাখাওয়াতের পক্ষে কাজ করবেন না। মাঝপথে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বিভক্তি চোখে না পড়লেও শেষ মুহূর্তে কেন্দ্রীয় নেতারা নারায়ণগঞ্জ ত্যাগ করার পর গুঞ্জনই যেন সত্যে পরিণত হলো!অবশ্য অাধিপত্যের লড়াইয়ে স্থানীয় নেতাদের বিভক্তি যাতে দৃশ্যমান না হয় সেজন্য কেন্দ্রীয় নেতারা গোপন বৈঠক করেছিলেন একাধিকবার।সূত্র মতে, সাখাওয়াতের পক্ষে কাজ না করলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে এমন হুমকিও দেয়া হয়েছিল। তবে শীর্ষ নেতাদের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে যেন শেষ মুহূর্তে এসে মাটি চাপা পড়েছে!জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী তিন নেতার নিকটাত্মীয়রা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করায় দলীয় মেয়র প্রার্থীর বিজয়ে অনেকটা দায়সাড়া প্রচারণা করেছেন তারা। এদের মধ্যে গতবার নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সরে যাওয়া প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকারের ভাই কাউন্সিলর প্রার্থী। তিনি তার ভাইকে জয়ী করতেই মাঠে কাজ করছেন। পাশাপাশি ২৯ ডিসেম্বর মেয়ের বিয়ে নিয়েও ব্যস্ত তিনি।অন্যদিকে নাসিক নির্বাচনে বিএনপির সাবেক দুই সংসদ সদস্যের ছেলে কাউন্সিলর প্রার্থী। এদের মধ্যে শহরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালামের ছেলে আবুল কাউছার আশা এবং সিদ্ধিরগঞ্জের ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ সাদরিল।অভিযোগ ছিল, ধানের শীষের মেয়র পদপ্রার্থীর চেয়ে দুই ছেলেকে বিজয়ী করাই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে তাদের কাছে। অন্যদিকে তৈমুর আলম চাচ্ছেন কাউন্সিলর পদে ভাইয়ের গলায় বিজয়ের মালা পরাতে। আর এমন অভিযোগ অনেকটাই যেন স্পষ্ট হলো নির্বাচনের এক দিন আগেই।নারায়ণগঞ্জ সদরে বিএনপির মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা এম আর কামাল জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচনের শেষ দিন ২৭টি ওয়ার্ডে মিছিল হওয়ার কথা থাকলেও কোথাও প্রচারণা করতে পারেননি ধানের শীষের সমর্থকরা। বিশেষ প্রচারণার ঘোষণা দেয়ার পরও কেন মিছিল অনুষ্ঠিত হয়নি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।নাসিক নির্বাচনে বিএনপির সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব ও দলটির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বলেন, মিছিল হয়নি এমন সংবাদ শুনিনি, তবে কয়েক জায়গায় হয়েছে মনে হয়।স্থানীয় নেতাদের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এটা সত্য যে, কেন্দ্রীয় নেতারা যখন নারায়ণগঞ্জে ছিলেন তখন একটু বেশি উৎফুল্ল ছিলেন দলের নেতাকর্মীরা। তবে একেবারেই শেষ সময় তো তাই হয়তো উপস্থিতি কম দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় নেতারা এখনও সাখাওয়াতের পক্ষেই কাজ করছেন।তবে শেষ প্রচারণার কর্মসূচি পরিবর্তন করা হয়েছে উল্লেখ করে সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের আজ নারায়ণগঞ্জে আসার কথা ছিল। কিন্তু সরকার পরিপত্র জারি করে খালেদা জিয়াকে আসতে দেয়নি। তবে ২৭ নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ হয়েছে বলে জানান বিএনপির এই প্রার্থী।এমএম/জেএইচ/আরআইপি
Advertisement