সোমবার বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪টা। পশ্চিমাকাশে সূর্য ক্রমেই হেলে পড়ছে। পড়ন্ত বিকেলে কোলের শিশু আরমান মিয়াকে নিয়ে হাতিরঝিলের ফুটপাতে বসে আছেন তেজগাঁও এলাকার ক্ষুদে ব্যবসায়ী আকরাম মিয়া। লাল-সবুজ পতাকা সামনে টানিয়ে ঝিলের পানিতে ঢেউ তুলে ছুটে আসা ওয়াটার ট্যাক্সির দিকে আঙুল তুলে শিশুটিকে দেখাচ্ছিলেন। অদূরেই কাঠ দিয়ে তৈরি এবড়ো-থেবড়ো ব্যাট দিয়ে ক্রিকেট খেলছিল কয়েকটি শিশু। মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোক প্রাইভেট কার থামিয়ে ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে এক কিশোরীর ছবি তুলছিলেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আকরাম মিয়া বলেন, প্রতিদিন বিকেলেই তিনি হাতিরঝিলে ঘুরতে আসেন। চারদিকে অসংখ্য সবুজ গাছপালার সমারোহ, গাছে গাছে ফুটে থাকা রং বেরংয়ের নানান ফুল, চারদিকে ঝকঝকে রাস্তাঘাট থাকায় ফুটপাতে ঘুরে বেরাতে তার খুবই ভালো লাগে। শুধু আকরাম আলীই নন, হাতিরঝিল রাজধানীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। ইট-পাথরের যান্ত্রিক এ নগরীতে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে শত শত মানুষ হাতিরঝিলের চারপাশে ছুটে আসছেন। হাতিরঝিলে আগে থেকেই বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে এসে বাসের টিকিট কেটে হাতিরঝিলের চারপাশ ঘুরে দেখে আনন্দিত হচ্ছে। এ আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বিজয় দিবস থেকে চালু হওয়া ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’। এফডিসি মোড়ের টার্মিনাল থেকে রামপুরার মহানগর প্রোজেক্ট গেট, বেগুনবাড়ি ও মেরুল বাড্ডা রুটে তিনটি করে ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’ চলছে। প্রতিটি ট্যাক্সি তৈরিতে প্রায় ৮৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিটিতে ৪৫ জন যাত্রী উঠতে পারবে। যদিও এখন ৩০ জন যাত্রী তোলা হচ্ছে। অস্থায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫-৩০ টাকা।সকাল থেকে রাত অবধি ঝিলের পানিতে ঢেউ তুলে ছুটে চলেছে একাধিক ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’। সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’ চড়তে ছুটে আসছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ২০০৭ সালে ৩০২ একর জমির ওপর হাতিরঝিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হয়।এরপর প্রায় তিন বছর হাতিরঝিলে কোনো গণপরিবহন ছিল না। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে হাতিরঝিলে চালু হয় চক্রাকার বাস সার্ভিস। কিন্তু বাসের সংখ্যা কম হওয়ায় ভোগান্তি কমছিল না । তাই জনভোগান্তি কমাতে প্রকল্প এলাকায় এই ট্যাক্সি সার্ভিস চালু করা হয়। এ সার্ভিসের মাধ্যমে যাতায়াতের পাশাপাশি নগরবাসী নৌ-ভ্রমণের আনন্দও নিতে পারবেন।এমইউ/এসএইচএস/পিআর
Advertisement