আন্তর্জাতিক

কাফালা পদ্ধতি বাতিল, শ্রমিকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা

কাতারে কাফালা পদ্ধতি বাতিল করে নতুন আইন কার্যকর শ্রমিকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। গত সপ্তাহে কাতারের এমন সিদ্ধান্ত সত্যিই বিস্ময়কর এবং স্বাগত পদক্ষেপ ছিল। কাতারের শ্রম আইন সংস্কার করে কাফালা পদ্ধতির পরিবর্তে এখন থেকে সব শ্রমিকের নিয়োগ হবে চুক্তিভিত্তিক। সেই সঙ্গে আগে থেকে সেখানে থাকা শ্রমিকদের চুক্তিও নতুন পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হবে। খবর সৌদি গ্যাজেটের। দেশে ফিরতে হলেও কাফিলের অনুমতি কিংবা অনাপত্তির প্রয়োজন হবে না। সেক্ষেত্রে একজন শ্রমিকের বিরুদ্ধে যদি কোনো আইনি অভিযোগ না থাকে, সে ইচ্ছা ও প্রয়োজন মত নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন।প্রশাসনিক শ্রম উন্নয়ন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংশোধিত নতুন আইনের ফলে শ্রমিকদের শ্রম অধিকার নিশ্চিত হবে। কাফালা পদ্ধতি বাতিল করে নতুন আইনের ফলে প্রায় ২১ লাখ শ্রমিকের কাজের নিশ্চয়তা, স্বাধীনতা এবং বেতন-ভাতার অধিকার নিশ্চিত হবে। কাতারে কাফালা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণায় নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না অনেক শ্রমিক। আসলে এই বিতর্কিত পদ্ধতি বাতিলের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বহু প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। অবশেষে গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিলভুক্ত (জিসিসি) দেশ কাতারে এটা সম্ভব হয়েছে। যেহেতু এ পদ্ধতি কাতারে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে সেহেতু জিসিসিভুক্ত অন্যান্য দেশেও তা কার্যকর হবে বলে আশা করা যায়। বিগত বছরগুলোতে কাফালা পদ্ধতি দুর্নাম ছাড়া কিছুই অর্জন করতে পারেনি। সে কারণে এ পদ্ধতি বাতিল করা খুবই দরকার ছিল। বহু বিদেশি শ্রমিকের কাছে কাফিল বা কাফালা একটি আতঙ্কের নাম। কারণ এই শব্দের সঙ্গে মিশে আছে নিগ্রহ, অত্যাচার আর দাসত্ব। সব বিদেশি শ্রমিকের নিয়ন্ত্রক তার কাফিল বা স্পন্সর। বেতন-ভাতা ঠিক সময়ে না পেলে কিংবা শোষণের শিকার হলেও কাফালা পদ্ধতির কারণে চাকরি ছাড়ার কোনো উপায় ছিল না শ্রমিকদের। অবশেষে কাফালা পদ্ধতি বাতিলের কারণে বহুদিনের শোষণ আর আধুনিক দাসত্বের অবসান ঘটবে। কোনো শ্রমিক চাকরি পরিবর্তন করতে চাইলে এখন খুব সহজেই চাকরি পরিবর্তন করতে পারবেন। জিসিসিভুক্ত দেশগুলোতে বহু বিদেশী শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই খুব বাজে অভিজ্ঞতা নিয়ে নিজের দেশে ফেরেন। এসব হয়েছে কাফালা পদ্ধতির কারণেই। সংশোধিত নতুন আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শ্রমিকের সম্পর্কেরও উন্নয়ন ঘটবে। শ্রমিকের প্রতি অত্যাচার এবং অনাচার বন্ধ হবে বলেও আশা করা হচ্ছে শ্রমিকরা নতুন আইন অনুযায়ী নিজের দেশে যেতে পারবেন এবং চাকরি পরিবর্তন করতে পারবেন। এ আইন শ্রমিকের পাশাপাশি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অধিকারও নিশ্চিত করবে। ইসলামে কাউকে ঠকিয়ে অর্থ উপার্জন করা হারাম। অথচ কাফিল বা স্পন্সররা এ বিষয়ে কোনো তোয়াক্কাই করে না। তারা দিনের পর দিন শ্রমিকদের ঠকিয়ে অর্থ উপার্জন করছে। শেষ নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। একজন আরেকজনের সঙ্গে কোনো অন্যায় বা একজন অপরজনকে শত্রুর হাতে সমর্পণ করা উচিত নয়। যে তার ভাইয়ের প্রয়োজন মেটাবে আল্লাহ তার সব প্রয়োজন মেটাবেন। যে মুসলমান অন্য মুসলমানের চিন্তা দূর করবেন শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তার চিন্তা দূর করবেন। যে অন্যের দোষ প্রকাশ করবে আল্লাহও তার দোষ প্রকাশ করবেন।’টিটিএন/পিআর

Advertisement