নিয়মিত ফ্লাইট বিলম্ব, কাস্টমার কেয়ার নাম্বারে ফোন দিয়ে সহযোগিতা না পাওয়া, টিকেটের তারিখ পরিবর্তনে অবাস্তব ও আজগুবি ফি গ্রহণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে মালিন্দো এয়ারের বিরুদ্ধে। তাদের দীর্ঘদিনের বহুরূপী আচরণে অতিষ্ঠ বিমানযাত্রীরা। মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা শোনার কেউ নেই।অধিকাংশ সমস্যা সমাধানে সাড়া দেয় না বাংলাদেশে মালিন্দোর একমাত্র জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) টিউন এভিয়েশন লিমিটেড। টিউনের অনিয়ম ও গাফিলতিতে অতিষ্ঠ ট্যুর অপারেটররাও। ট্যুর অপারেটররা অভিযোগ করেন, আন্তর্জাতিক টিকেট ইস্যু করার সময় তারিখ পরিবর্তনে ৫০ ডলার চার্জ রাখার বিধান ঠিক করেছে খোদ মালিন্দো। তবে বাস্তবে এর চেয়ে কয়েকগুন বেশি টাকা আদায় করে জিএসএ টিউন এভিয়েশন। এ ঘটনায় প্রায়শই ট্রাভেল এজেন্ট ও ট্যুর অপারেটররা যাত্রীদের কাছে বিব্রত হন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ট্যুর অপারেটরের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ জাগো নিউজকে বলেন, ‘তারিখ পরিবর্তনের ফি নির্ধারিত থাকলেও মালিন্দো প্রতিবার ইচ্ছেমতো ফি আদায় করে। কোন তথ্য জানতে চাইলে গায়ে লাগায় না’। মোঃ শহীদুল ইসলাম নামে এক যাত্রী জাগো নিউজকে জানান, সম্প্রতি আমি টিকিট প্রতি ৩ হাজার ৯০০ টাকায় কুয়ায়ালালামপুর থেকে লাংকাউই পর্যন্ত বিমানের ৫টি টিকেট কিনি। তবে ফ্লাইটের সময় পরিবর্তন করতে মালিন্দোর বাংলাদেশ অফিসে গেলে তারা টিকেট প্রতি অতিরিক্ত ৪ হাজার টাকা দাবি করে। অথচ জাগো নিউজের পক্ষ থেকে মালিন্দো এয়ারের ফেসবুকে একই ফ্লাইটের সময় পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানায়, ওই তারিখে টিকেট পরিবর্তন করতে মালয়েশিয়ান ৭৫ রিঙ্গিত (প্রায় ১৩৫০ টাকা) লাগবে। শহীদুল বলেন, ‘মানুষকে বোকা বানিয়ে বাংলাদেশের অফিস থেকে তারা ইচ্ছামতো ফি আদায় করছে’।ট্রাভেল এজেন্সিরাও মালিন্দোর মর্জির শিকার। বিভিন্ন ধর্মীয় ও সার্বজনীন উৎসব এবং বিশেষ বিশেষ দিনের টিকেটগুলো আটকে রেখে উচ্চমূল্যে সেগুলো বিক্রি করার অভিযোগও রয়েছে মালিন্দোর বিরুদ্ধে। এক ট্রাভেল এজেন্ট জানান, আমি গত মার্চ মাস থেকে ডিসেম্বরের ২০ হতে জানুয়ারির ৫ তারিখ পর্যন্ত কুয়ালালামপুরের ইকোনমি টিকেট কেনার চেষ্টা করছি। তবে ওয়েবসাইটে তাদের টিকেট সোল্ড আউট দেখায়। অথচ তারা ব্লকে সাড়ে ২২ হাজার টাকার টিকেট ৩২ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। নিয়মিত ফ্লাইট বিলম্ববাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন রাতে দুইটি করে মালিন্দো এয়ারের ফ্লাইট কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। গত ১৪ দিনে তাদের একটি ফ্লাইটও নির্ধারিত সময়ে ছাড়েনি।আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট এয়ারপোর্টিয়া’র তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ দিনে মালিন্দোর ওডি-১৬৫ ফ্লাইট গড়ে প্রতিদিন ২৭ মিনিট দেরিতে ছেড়েছে। অপর ফ্লাইট ওডি-০১৬১ গড়ে ৩২ মিনিট বিলম্বে ছাড়ে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কারণ না দেখিয়ে প্রায়ই এক থেকে দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে ফ্লাইট। কোন আগাম নোটিস ছাড়াই গত ২৮ নভেম্বর ১২টা ৫০ মিনিটের একটি ফ্লাইট পৌনে ৩টায় রওনা হয়। এতে নানা ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। মোঃ কামালুর রহমান নামে এক যাত্রী জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফ্লাইট ডিলে করার কারণে কুয়ালামপুরে নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা পরে পোঁছাই। লাগেজ নিতে নিতে পেনাংগামী ফ্লাইট প্রায় মিস করেছিলাম। তবে খুব কষ্টে দুই নাম্বার টার্মিনাল থেকে ফ্লাইটটি ধরেছি। ফ্লাইটটি কেন বিলম্ব হলো এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে মালিন্দোর কেউ কোন কথা বলেনি’। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান জাগো নিউজকে জানায়, মালিন্দোর বিরুদ্ধে প্রায়ই আমাদের কাছে অভিযোগ আসে। অনেক সময় মালিন্দোর জিএসএ টিউন এভিয়েশন কোন সমাধান না দিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে কাজ করে। এ বছরের রমজান মাসে রাত ১২টা ৫০ মিনিটের বেশ কয়েকটি ফ্লাইট সকাল ৬টার সময় ঢাকা ছেড়ে যায়। রাতে যাত্রীদের সেহরি খাওয়ারও কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। মালিন্দোর এ অনিয়মের কারণে ট্যুর অপারেটরগুলোর সুনাম নষ্ট হচ্ছে। প্রমোশনে অসহযোগিতানিজেদের ব্যবসার বাইরে অন্য কিছুই বোঝে না মালিন্দো এয়ার বাংলাদেশ। এ বছরের ১ অক্টোবর বিশেষ মূল্যছাড়ে সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে টিকেট কেনার একটি অফার ছাড়ে মালিন্দো এয়ার। অফারে ১৫ হাজার ৬০০ টাকায় কুয়ালালামপুর এবং ২১ হাজার টাকায় ইন্দোনেশিয়ার বালিতে যাওয়ার সুযোগ দেয় তারা। তবে অফারের বিষয়ে জানতে মালিন্দো এয়ারে ফোন দিলে তারা অফারের বিষয়ে কিছুই জানে না বলে দাবি করে। এছাড়া অফারের দিন থেকে তারা গ্রাহকদের ফোন ধরা বন্ধ করে দেয়। মোবাইল বন্ধ রাখে। এমনকি ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুর অপারেটররাও ফোন দিয়ে তাদের পাননি। অথচ বাংলাদেশের জিএসএ হিসেবে অফার সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর দায়ভার তাদের উপরই বর্তায়।গোলাম মর্তুজা নামে এক যাত্রী জাগো নিউজকে বলেন, ‘মালিন্দোর অফার দেখে তাদের অফিসে ফোন দিয়ে লাগেজের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলে, পত্রিকায় যা দিয়েছে তাই। এর বেশি আমরা কিছু বলতে পারবো না’।এ বিষয়ে টিউন এভিয়েশনের ব্যবস্থাপক (অ্যাকাউন্টস) মোঃ মনির মালিন্দোর এমন অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ দুই কর্মকর্তাও মন্তব্য করতে রাজি হননি। সর্বশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর ১০টা ৫৩ মিনিটে মনিরের ব্যক্তিগত নাম্বারে এসএমএস করা হলেও ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি কোন ফিরতি উত্তর দেননি। যোগাযোগের জন্য তাদের ওয়েবসাইটে কোন ইমেইল অ্যাড্রেস দেয়া নেই। এ বিষয়ে জানতে সরাসরি মালিন্দোর মালয়েশিয়া অফিসে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোন উত্তর দেননি। এআর/ওআর/এমএস
Advertisement