গত বছর স্কাইভিউ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস ২১ জন হজযাত্রী পাঠিয়েছিল সৌদি আরবে। প্রথমবারের মতো হজে অংশ নেয়া এ এজেন্সির ২০ জন হাজীই দেশে ফিরে আসেননি। এমনিভাবে গত বছর ২৪টি হজ এজেন্সির মোট ৯৪ জন হাজী দেশে ফেরেননি। উপরোক্ত বিষয়সহ কালো তালিকাভুক্ত বাংলাদেশের ৬৭টি হজ এজেন্সির বিভিন্ন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার চিত্র ওঠে আসে সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাজিদ হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস গত বছর মোট ৫৭ জন হজযাত্রী পাঠিয়েছিল। ১৩ অক্টোবর এসব হজযাত্রীকে মক্কার একটি বাড়িতে রেখে খাবার না দিয়ে পালিয়ে যায় এজেন্সি প্রতিনিধি (মোনাজ্জেম)। অভুক্ত ৫৭ হজযাত্রীকে পরে শুকনো খাবার দেয়া হয় মাঠ পর্যায়ের অফিস (মোয়াল্লেম) থেকে।চলতি বছর হজ কার্যক্রমে অভিযুক্ত এসব এজেন্সি নিষিদ্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়েছে সৌদি সরকার। তাদের চিঠি পাওয়ার পর ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে এসব এজেন্সিকে নিষিদ্ধ করে হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে (হাব) চিঠি দেয়া হয়েছে। প্রতারণা ঠেকাতে এ তালিকা পাঠানো হচ্ছে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) দফতরেও। যাতে সৌদি কালো তালিকাভুক্ত এসব এজেন্সি চলতি বছর হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করতে পারে। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।মক্কা হজ অফিস সূত্র জানায়, চিহ্নিত এসব এজেন্সি ২০১৫ সালের হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সৌদি সরকারের হজ মন্ত্রণালয় জেদ্দার বাংলাদেশী হজ মিশনকে চিঠি দেয়। জেদ্দা হজ মিশনের কনস্যুলার (হজ) মো. আসাদুজ্জামান অভিযুক্ত ৬৭টি এজেন্সিকে হজ কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের সুযোগ না দিতে ২২ ফেব্র“য়ারি বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠি পাওয়ার পরই সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে হজ কার্যক্রমে অংশ না করতে ধর্ম মন্ত্রণালয় হাবকে চিঠি দেয়।এ বিষয়ে উপসচিব (হজ) ফয়জুর রহমান ফারুকী জানান, সরকার হজের বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেবে না। নিষিদ্ধ ঘোষিত ৬৭টি হজ এজেন্সির তালিকাসহ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সব ডিসিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।হাবের সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহার নিজ দফতরে বলেন, ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোকে সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে চলতি বছর যারা হজযাত্রী সংগ্রহ করেছে ওইসব হজযাত্রীকে সরকার অনুমোদিত হজ এজেন্সিতে ট্রান্সফার করার নির্দেশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।সৌদি সরকারের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে ৯৮ হাজার ৭৬১ বাংলাদেশী হজ পালন করতে সৌদি আরবে যান। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় (ব্যালটি) গেছেন ১ হাজার ৫০০ এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় (নন-ব্যালটি) গেছেন ৯৭ হাজার ২৬১ জন। হজ পালন করতে গিয়ে বাংলাদেশীরা নানা দুর্ভোগের শিকার হন। বিষয়টি সৌদি সরকারের নজরে পড়লে দেশটির হজ মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন টিম বাংলাদেশী হজ অধ্যুষিত এলাকা পরিদর্শন করেন। তারা পরিদর্শনকালে অনেক বাংলাদেশী হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে হাজীদের ত্র“টিপূর্ণ বাড়িতে রাখা, চুক্তিহীন বাড়িতে রাখা, এক বাড়িতে অতিরিক্ত হাজী রাখা এবং মানব পাচারসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পায়। গত বছর হজের নামে সৌদি আরব গিয়ে পালিয়েছে ৯৪ জন হজযাত্রী। এর মধ্যে চাঁদপুর ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের ২১, স্কাইভিউ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের ২০, ইব্রাহিম ট্রাভেলসের ৭, আরশীনগর ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের ৬, রহমানিয়া ইন্টারন্যাশনালের ৬, স্মার্ট ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের ৫, সারাহ জান্নাহ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের ৫, কনওয়ে ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের ৪, শফিক ওভারসিজের ৩ এবং এমএস এয়ার সার্ভিসের ২ জন। এ ছাড়া আর বি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, মিসফালা ট্রাভেলস, ফাহিয়া ট্যুরস, সানরাইজ এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, আল-আরাফা ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, হাজী আল মুজিব কর্পোরেশন, এয়ার ওয়েব ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস, হুমায়ারা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, শতাব্দী এয়ার সার্ভিস, এমএস ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, নিউ এয়ার বাংলাদেশ, সামাদ ওভারসিজ সার্ভিস, জোনাকী ইন্টারন্যাশনাল প্রা. লিমিটেড, চ্যালেঞ্জার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড এবং আল-মদিনা ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ১ জন করে হজযাত্রী দেশে ফেরেনি বলে সৌদি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ১২টি হজ এজেন্সির কোনো মোনাজ্জেম (প্রতিনিধি) ছিল না উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, হজ এজেন্সির প্রতিনিধি না থাকায় যাতায়াত, আবাসন, খাবারসহ নানা হয়রানির শিকার হয়েছেন হজযাত্রীরা। এ ধরনের এজেন্সিগুলো হল-মাক্কী হজ্জ ট্রাভেলস, মোকাররম ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, এম আলী ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস, ম্যাগপাই ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, ফালগুনী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সাদ ওসয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, হিজল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, শাহী ইন্টারন্যাশনাল, সজিব হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, মাহদী ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, আল-আশফাক ইন্টারন্যাশনাল এবং আত তায়্যারা ইন্টারন্যাশনাল। আরেফিন ট্রাভেলস লিমিটেডের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই এজেন্সির ১১৬ হজযাত্রীর মধ্যে ১০০ জনকেই মানহীন ও চুক্তিহীন হোটেলে রাখার চেষ্টা করা হয়। পরে হজযাত্রীদের প্রতিবাদের মুখে মানসম্পন্ন হোটেলে রাখতে বাধ্য হয় তারা। একইভাবে আকবর ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালসহ প্রায় তিন ডজন এজেন্সি হাজীদের অনুমোদনহীন বাড়িতে রেখেছে। অন্য এজেন্সিগুলো হল- নিউ এয়ার বাংলাদেশ, আত তায়্যারা ইন্টারন্যাশনাল, আল-আশফাক ইন্টারন্যাশনাল, এমএস সাদেক ট্রাভেলস, ব্ল– স্কাই এয়ারওয়েজ, হিজল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রেডার্স, ফারুকী ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস প্রা. লিমিটেড, সরকার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, সেতুবন্ধন এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম, গ্রামীণ হলিডেজ, জোবায়ের এয়ার ট্রাভেলস, আকবর ওভারসিজ, এয়ার ফিলিস্তিন ইন্টারন্যাশনাল, আল-আমানাহ ওভারসিজ, মীম ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, ওহি ট্রাভেলস এজেন্ট, মনিরামপুর এয়ার ট্রাভেলস, আফতাব ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, গাজীপুর এয়ার ট্রাভেলস, জাবলী নূর ইন্টারন্যাশনাল, খাজা এয়ার লাইনার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, আল-কিবলা হজ কাফেলা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, গোল্ডেন বেঙ্গল ট্যুরস, এয়ার ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল, মহসিন ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, মোকাররম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, সুমায়াহ নাবিদ ট্রাভেলস, আল-রাইজান ট্রাভেল এজেন্সি লিমিটেড, হোয়াইট রোজ ইন্টারন্যাশনাল প্রা. লিমিটেড, ট্রাভেল ওয়ার্ল্ড, মাই ঢাকা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস এবং আল-সোবহানী ইন্টারন্যাশনাল। সূত্র : যুগান্তরএসএইচএ/আরআইপি
Advertisement