প্রায়ই ধানমন্ডি লেকের রবীন্দ্র সরোবরের মুক্তমঞ্চের সামনে এসে দাঁড়াতে দেখা যায় এক তরুণীকে। সেটা কোন অস্বাভাবিক বিষয় নয়; কিন্তু সেই তরুণীকে দেখামাত্র হুড়মুড় করে ছুটে আসে অনেকগুলো কুকুর। সেই দৃশ্য হয়তো কিছুটা অস্বাভাবিক। কেননা কুকুরগুলো বেওয়ারিশ। কোন পোষা কুকুর নয়। অথচ রাস্তার সেই কুকুরগুলো তরুণীকে ঘিরে ধরে; এমন কি লাফিয়ে লাফিয়ে তাঁর গায়ে চড়ে। দেখলে মনে হবে, কুকুরগুলো যেন তার মনিবকে খুঁজে পেয়েছে।অন্যরকম এই ভালোবাসার গল্পের নায়কের নাম সাদিয়া আফরিন তন্বী। তিনি জাগো নিউজকে এই গল্পের পিছনের গল্প শুনিয়েছেন। বিস্তারিত জানাচ্ছে মাহবুবর রহমান সুমন।তন্বী থাকেন ফার্মগেট এলাকায়। ২০০৯ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে এক অদ্ভুত ভালোবাসার টানে তন্বী ছুটে আসেন রবীন্দ্র সরোবরে। ধানমন্ডি লেকের রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় যারা নতুন, তাদের কাছে এই দৃশ্যটা আতঙ্কের। কিন্তু যারা নিয়মিত; তাদের কাছে দৃশ্যটা অন্যরকম এক ভালোবাসার। শুরুটা ২০০৯ সালে; তখন তিনি কলেজে পড়ালেখা করেন। প্রায় প্রতিদিন বিকেলে নয় বন্ধু মিলে আড্ডা দিতেন রবীন্দ্র সরোবর এলাকায়। দেখতেন সেখানকার কতগুলো কুকুর এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। দু-একটাকে কাছে ডাকতেন মাঝে মাঝে। ব্যাগে যা থাকতো তাই খেতে দিতেন। এরপর একদিন দেখলেন যে সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছে। তন্বীর তখন টিফিন খরচ ছিল ১০০ টাকা। তন্বী প্রতিদিন ১০০ টাকা থেকে ৫০ টাকা আলাদা করে সেই টাকায় ধানমন্ডি লেকের কুকুরগুলোর খাবার জোগান দিতেন। কুকুরগুলো ধীরে ধীরে তন্বীর এতোটাই ভক্ত হয়ে গেল যে, তন্বীর গন্ধ পেলেই তারা সব বাঁধ ভেঙে চলে আসে। সেই থেকে এক অদ্ভুত টানে তিনি প্রতিদিনই কুকুরগুলোকে খাবার দিচ্ছেন। এভাবেই চলছে আজ পর্যন্ত।কীভাবে জন্ম নিলো এই প্রেম; সে গল্প জানতে চাওয়া হলে তন্বী জানালেন, ছোটবেলা থেকে দেখতাম বাবা-মা বাড়িতে বিড়াল পোষেন এবং বিড়াল-কুকুর ভালোবাসেন। বাসায় আমিও বিড়াল পুষি। ছোটবেলা থেকেই আমি খুব কষ্ট পেতাম- অহেতুক এদের নির্যাতন করলে। সেখান থেকেই এই প্রেমের জন্ম।বর্তমানে তন্বী ও তার নয় বন্ধু মিলে কাজ করছেন রাস্তার এসব বিড়াল-কুকুর নিয়ে। এই বিড়াল-কুকুর অসুস্থ হলে তারা সেবা করেন। সুস্থ করার পর যারা লালন-পালন করতে চান তাদের বাসায় দিয়ে আসেন। তন্বী সারা দেশব্যাপী এই কাজ ছড়িয়ে দিতে চান, তিনি চান এসব প্রাণির উপর অহেতুক নির্যাতন বন্ধ করা হোক।ধানমন্ডি লেকের মুক্তমঞ্চ ও এর আশপাশের প্রায় সব কুকুরের আলাদা আলাদা নাম রেখেছেন তন্বী। যেন কুকুরগুলো তার পোষা। তন্বীর প্রতি কুকুরের আনুগত্য বা তন্বীর কুকুরপ্রীতি দেখে লেকে আসা হাজারো মানুষ বিস্ময় প্রকাশ করেন। ফিরে যান এক অন্যরকম ভালবাসার সাক্ষী হয়ে।এসইউ/পিআর
Advertisement