আন্তর্জাতিক

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আসিয়ানের জরুরি বৈঠক ডেকেছে মিয়ানমার

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য আসিয়ানের জরুরি বৈঠক ডেকেছে মিয়ানমার। দেশটিতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর কঠোর অভিযান নিয়ে তীব্র আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়ার জেরে ওই বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। সোমবার কূটনৈতিক একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা এপি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইনে গত দুই মাসের রক্তাক্ত সেনা অভিযানের মুখে ২১ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে। সেখানে নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে গণধর্ষণ, হত্যা ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমার প্রতিবেশি দেশগুলোর কূটনৈতিক চাপের মুখে পড়েছে। গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের নেতৃত্বে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ সমাবেশ করে। ওই সমাবেশে নাজিব রাজাক মিয়ানমারের নেত্রী সু চির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সু চির নেতৃত্বে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় অংশ নিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। তবে মিয়ানমার এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক মিয়ানমারের নেত্রী সু চির সমালোচনা করায় কুয়ালালামপুরের রাষ্ট্রদূতকে তলব করায়। পরে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো স্থগিত করে মিয়ানমার। ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্র। চ্যানেল নিউজ এশিয়া বলছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার জন্য জরুরি বৈঠকে ফিলিপাইনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে মিয়ানমার। দেশটির একটি কূটনৈতিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি সূত্রটি। আগামী ১৯ ডিসেম্বর ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। এদিকে, বৈঠকের বিষয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। দীর্ঘদিনের সামরিক শাসনের অধীনে থাকা মিয়ানমারে গত বছর দেশটির নোবেল বিজয়ী নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাগ্রহণ করেছে। রাখাইনের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত সেনা অভিযান সু চিকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। গত সপ্তাহে দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় সু চির ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সংকট মোকাবেলায় সু চির ব্যর্থতা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হতাশা তৈরি করেছে। এদিকে, গত নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়া সফরে যাওয়ার কথা থাকলেও সেদেশে তীব্র প্রতিবাদের মুখে শেষ পর্যন্ত ওই সফর বাতিল করতে বাধ্য হয় সু চি। পরে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন মিয়ানমারের এই নেত্রী। ৯ অক্টোবর দেশটির সীমান্তে নিরাপত্তাবাহিনীর চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলায় ৯ পুলিশের মৃত্যুর পর রাখাইনে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে, অভিযানে ১৭ সেনাসদস্য, ৭৬ সন্দেহভাজন নিহত হয়েছে। মিয়ানমারের সরকারি গণমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার বলছে, শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে অন্তত ৫৭৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এসআইএস/আরআইপি

Advertisement