ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মরদেহ তিন সপ্তাহ পর কবর থেকে উত্তোলন করায় দ্বিতীয় দফার ময়নাতদন্তে সঠিক মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করা হবে ‘পারিপার্শ্বিক বিবেচনায়’। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ময়নাতদন্তকারী তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য সোমবার জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান। ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, প্রথম দফার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পুলিশ ও ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও সর্বশেষ ময়নাতদন্তের ভিসেরা এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল প্রতিবেদন বিবেচনাসহ সার্বিক পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। জানা গেছে, ঢামেক মর্গে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করা মরদেহটি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীরই কিনা সেটা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ডিএনএ নমুনা হিসেবে মরদেহ থেকে দাঁত সংগ্রহ করেছে ময়নাতদন্তে গঠিত মেডিকেল বোর্ড। পাশাপাশি কোনো ধরনের বিষ প্রয়োগে তার মৃত্যু হয়েছে কিনা তা জানতে ভিসেরা নমুনা হিসেবে স্টমাক, কিডনি ও লিভারের নমুনা সংগ্রহ করে মহাখালী সিআইডি রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গলার টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢামেকের হিস্টোপ্যাথলিজ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। রোববার ময়নাতদন্তের আগে দিয়াজের মরদেহ দেখতে চেয়েছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু আইনানুসারে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার আগে মরদেহ দেখতে দেয়া হয়নি। ভবিষ্যতে যে কোনো ধরনের ঝামেলা এড়াতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী এক চিকিৎসক। তবে দিয়াজের বোন অ্যাডভোকেট জুবাইদা সরোয়ার চৌধুরী নিপা বলেন, অন্য কোনো কারণে নয়, ভাইয়ের মরদেহটি দেখতেই ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে অনুরোধ করেছিলাম।তিনি বলেন, শনিবার মরদেহটি মর্গে পাঠানো হলেও একজন বহিরাগত বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ডে উপস্থিত থাকবেন এমন কথা জানিয়েছিলেন ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ। পরদিন বিশেষজ্ঞ ছাড়াই তিনি দুই সহকর্মীকে নিয়ে ময়নাতদন্ত করেন। বহিরাগত একজন বিশেষজ্ঞ থাকলে তারা মানসিকভাবে শান্তি পেতেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গত ২০ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দিয়াজের মরদেহ দেখা যায়। রাত সাড়ে ১২টায় পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। ২৩ নভেম্বর দিয়াজের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে দিয়াজের মৃত্যু আত্মহত্যাজনিত কারণে হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে দিয়াজের পরিবার তা প্রত্যাখ্যান করে দিয়াজকে হত্যা করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করে।পরবর্তীতে গত ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিবলু কুমার দের আদালতে দিয়াজের মা জাহেদা আমিন বাদী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার চৌধুরী ও চবি ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুসহ ১০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তিন সপ্তাহে আগের মরদেহ পচে গলে যাওয়ায় পুনঃময়নাতদন্তে নতুন কতটুকু তথ্য পাওয়া যাবে তা নিয়ে তারা সন্দিহান। এ ব্যাপারে ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও দিয়াজের ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত বোর্ডের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদও একই সুরে বলেন, প্রথম দফায় ময়নাতদন্তেও গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। রোববারও তারা গলায় আঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন। আঘাতটি কি ধরনের সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে তারা নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন। তিনি বলেন, শুধু পুনঃময়নাতদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন দেয়া যাবে না। তারা সরেজমিন মরদেহ উদ্ধারের স্থান পরিদর্শন, কি অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছিল, প্রথম দফায় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা কি পেয়েছিলেন ইত্যাদি সম্পর্কে আলাপ আলোচনার পর পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনা করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পরিবারকে মরদেহ দেখানো ও সেটি দিয়াজের কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ফরেনসিক মেডিসিন জুরিসপ্রুডেন্স অনুসারে ময়নাতদন্তের আগে মরদেহ দেখানোর নিয়ম নেই। তারা মরদেহ দেখতে চেয়েছেন শুনে তিনি ময়নাতদন্তের পর দেখার কথা জানিয়েছিলেন। দিয়াজের পরিবারের কেউ সরাসরি মরদেহটি দিয়াজের নয় এমন কথা না জানালেও মর্গ সহকারীদের মুখে এমন সন্দেহের কথা জানার পর তারা অদূর ভবিষ্যতে যে কোনো ধরনের ঝামেলা এড়াতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে রেখেছেন বলে জানান। এমইউ/জেএইচ/এসএইচএস/পিআর
Advertisement