বিশেষ প্রতিবেদন

এবার হয়তো বেঁচে যাবে ময়না

কাজের সন্ধানে এক নারীর হাত ধরে নিজ জেলা ভোলা থেকে ঢাকায় আসেন ময়না নামে এক তরুণী। ঢাকায় এসে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও অফিসে ঘুরলেও কোথাও কাজ জুটেনি তার কপালে। অভাব অনটনের মাঝে কিছুদিন সময় কাটান ময়না ও তার সঙ্গে থাকা নারী। এক সময় তার ডান পায়ে ছোট একটা ঘা হয়। চিকিৎসা না করার কারণে একপর্যায়ে সেই ঘা ক্ষতস্থানে পরিণত হয়। আর এই সুযোগটি কাজে লাগান সেই নারী। টাকা আয়ের বুদ্ধি দিয়ে ময়নাকে নিয়ে তিনি ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে পড়েন। দৈনিক ভালোই রোজগার হচ্ছিল তাদের। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে ময়নার চিকিৎসা করতো না সেই নারী। এতে দিন দিন তার পায়ের ঘায়ের ক্ষত স্থানটি বড় হতে থাকে। একপর্যায়ে সেই ক্ষত স্থানে পচন ধরে এবং সেখান থেকে গন্ধ বের হতে থাকে। আর এ অসহায় অবস্থায় ময়নাকে ফেলে পালিয়ে যায় ওই নারী। এরপর একা একা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে কাটান ময়না।অবশেষে তিন মাস আগে ময়নার ঠাঁই হয় দৈনিক বাংলা মোড়ের পাশে বহুতল ভবন সুরমা টাওয়ারের রাস্তার ধারে। অথচ ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষ চলাচল করলেও অসহায় ময়নার দিকে কারো চোখ পড়েনি। তার পায়ের পচন ধরা অংশের গন্ধ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সবাই নাক চেপে চলাফেরা করলেও ময়নাকে নিয়ে ভাবার সময় হয়নি কারোই।এবার হয়তো সুস্থ হবে ময়না? কারণ ময়নার ওপর সুদৃষ্টি পড়েছে সেই মানবসেবকের। যিনি এর আগে বান্দরবান, পল্টন ও মানিকগঞ্জ থেকে তিনজন মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে রাস্তা থেকে তুলে এনে চিকিৎসার মাধ্যমে সু্স্থ করে তাদের স্বজনদের কাছে ফেরত দিয়েছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন : ভারসাম্যহীন জবার স্মৃতি ও পরিবার ফিরিয়ে দিলেন শামীমপাঠক একটু ভাবুন তো কে সেই মানব সেবক? কি মনে পড়ে? আরও একটু ভাবুন। ঠিক ধরেছেন। তিনি হলেন যমুনা ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ শামীম আহমেদ।গত তিন মাস ধরে এক পায়ে পচন নিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা ময়নাকে এবার হাসপাতালে ভর্তি করলেন সেই মানবসেবক ব্যাকং কর্মকর্তা শামীম আহমেদ। গত ৭ ডিসেম্বর তিনি মতিঝিলের অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে ময়নাকে ওই রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখেন। সেদিন ময়নাকে বিনা চিকিৎসায় দুর্গন্ধ পা নিয়ে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে প্রতিবারের মতো এবারো কষ্ট পান তিনি।আরও পড়ুন : মানসিক ভারসাম্যহীনদের অভিভাবকে পরিণত হয়েছেন শামীম আহমেদসিদ্ধান্ত নেন ময়নার চিকিৎসা করাবেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি তার বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গেও আলোচনা করেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরদিন ৮ ডিসেম্বর ময়নাকে পল্টনের সেই রাস্তা থেকে তুলে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন শামীম আহমেদ।আরও পড়ুন :  রাস্তা থেকে তুলে এনে সুস্থ করছেন তিনিগতকাল ৯ ডিসেম্বর ময়নার পচন ধরা সেই পায়ের অপারেশন করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের ১০৯ নম্বর রুমে চিকিৎসাধীন। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তিন মাস ময়নাকে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে। তাহলেই সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে।এ ব্যাপারে কথা হয় ব্যাংকার শামীম আহমেদের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে জানান, ময়না অন্য সবার মতোই সু্স্থ ও স্বাভাবিক। শুধু তার পায়ের সমস্যা। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, সঠিক চিকিৎসা পেলে ময়না পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন।তিনি বলেন, তাকে অন্য সবার মতো পুরোপুরি সুস্থ করে তার পরিবারের হাতে তুলে দেব। এর আগে তিনজনের পাশে যেভাবে ছিলাম একইভাবে ময়নার পাশেও থাকবো।শামীম আহমেদ বলেন, একজন মানুষ হয়ে আরেকজন মানুষকে দেখে আমরা কীভাবে নাক চেপে ধরে চলতে পারি। এটা কেমন মানবিকতা। ক্ষণিকের জন্য কিছু মানুষ অসহায় ও গরিব হতেই পারে। কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়েও থাকতে পারে। তাই বলে সমাজ থেকে তারা আলাদা হয়ে যাবে। এ কেমন সমাজ ব্যবস্থা আমাদের।আরও পড়ুন :  আসুন পারুলকে পরিবারে ফিরতে সাহায্য করিতিনি বলেন, আসুন মানবিক হই। মানবিকতা বৃদ্ধি করি। মানুষের পাশে দাঁড়ানো অভ্যাস তৈরি করি। পরবর্তী প্রজন্ম যেন আমাদের কর্ম থেকে কিছু শিখতে পারে।এমএএস/আরআইপি