ফিচার

অতিথি পাখির কলতান

শীতের শুরুতে এ বছরও আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। এই পাখিও যেন এদেশের মানুষের আতিথেয়তার লোভে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে আসে। আমাদের দেশের জলাশয়ও যেন অতিথি পাখিদের জন্য অপেক্ষায় থাকে। এরই মধ্যে হাওড়, বাওড়, বিল, দীঘি, লেকসহ অসংখ্য জলাশয় অতিথি পাখির আগমনে নতুন রূপে সেজে উঠেছে। এখন চারিদিক অতিথি পাখির কলতানে মুখর। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতেই এ পাখিরা ছুটে আসে এ দেশে। শীতপ্রধান দেশ রাশিয়ার সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীনের জিনিজিয়াং ও ভারত মহাসাগরে তীব্র শীত পড়ে এই সময়ে। সেসব অঞ্চলে এ সময়ে তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দেয়। একদিকে তুষারপাত অন্যদিকে খাদ্যসংকট- এ দুইয়ের কারণে পাখিদের জীবন প্রায় বিপন্ন হয়ে পড়ে। তখন জীবন বাঁচানোর তাগিদে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম শীতের এই দেশটিকে অতিথি পাখিরা সাময়িক আবাসভূমি হিসেবে বেছে নেয়। শীত শেষ হলে আবার তারা নিজেদের দেশে ফিরে যায়। শীতের অতিথি পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- খয়রা চখাচখি, বালিহাঁস, কার্লিউ, বুনোহাঁস, ছোট সারস, বড় সারস, কাদাখোঁচা, হেরন, নিশাচর ডুবুরি, গায়ক রেন, রাজসরালি, পাতিকুট, গ্যাডওয়াল, পিনটেইল, নরদাম সুবেলার, কমন পোচার্ড, প্যালাস ফিস ঈগল, ধূসর ও গোলাপি রাজহাঁস, লেঞ্জা, চিতি প্রভৃতি।ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি যখন বিচিত্র স্বরে ডাকতে ডাকতে আকাশে উড়ে বেড়ায়; তখন মন নিমেষেই প্রফুল্ল হয়ে যায়। জলাশয়গুলোতে অতিথি পাখির অনাবিল সৌন্দর্য দেখতে পাখিপ্রেমীরা ভিড় করে। বিশেষ করে মিরপুরের চিড়িয়াখানা ও জাতীয় উদ্যান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জলাশয়, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, পুটিয়ার পচামাড়িয়া, হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওড়, দিনাজপুরের রামসাগর, বরিশালের দুর্গাসাগর ইত্যাদি জায়গায় পাখিপ্রেমীদের আগমনে সরগরম হয়ে ওঠে। এ সময় মনে হয়, যেন এক পর্যটনকেন্দ্র।তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে- অতিথি পাখির বিচরণভূমি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। মানুষের প্রয়োজনে বন-জঙ্গল কেটে উজাড় করে ফেলায় পাখিরা তাদের নিরাপদ আশ্রয় হারাচ্ছে। অন্যদিকে এই মৌসুমে কিছু অসাধুচক্র পাখি শিকারে মেতে ওঠে। এসব অতিথি পাখি নিধন করা খুবই অন্যায়। কারণ অতিথি পাখিরা এদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাছাড়া এরা প্রকৃতিরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই কেউ যেন অতিথি পাখি শিকার করতে না পারে, সেদিকে আমাদের সবার সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রকৃতিকে বাঁচাতে পাখিকে বাঁচাতে হবে। পাখি ও প্রকৃতি বাঁচলে আমরাও সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারবো।এসইউ/আরআইপি

Advertisement