ক্যারিয়ারটা শুরু করেছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তবে নিজের জাতটা চিনিয়েছিলেন ভারতের বিপক্ষে ২০০৭ বিশ্বকাপের সে ম্যাচেই। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি দেশসেরা ওপেনার তামিমকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের হয়ে ব্যাটিং রেকর্ডের প্রায় সবই নিজের করে নেওয়া তামিম নিজের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন বিপিএলের চলতি আসরেও। ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে এক আসরে সর্বাধিক হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি বিপিএলে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে হাজারী ক্লাবেও নাম লিখিয়েছেন।ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ সিরিজে ইংলিশ-বধের জন্য এবার স্লো উইকেট বানিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই সিরিজ শেষ হওয়ার চার দিন পরই শুরু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। আর এই স্লো পিচের কারণেই প্রথম দিকে রান পেতে সংগ্রাম করতে হয়েছে ব্যাটসম্যানদের। তবে এর মধ্যেও উজ্জ্বল টাইগার ব্যাটসম্যান তামিম। আসরের প্রথম ম্যাচেই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার বিপক্ষে তুলে নেন বিপিএলের ক্যারিয়ারে নিজের সপ্তম অর্ধশত। স্লো উইকেটে মাত্র ৩৮ বলে ৬ চার ২ ছয়ে খেলেন ৫৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। তার ব্যাটে ভর করেই ২৯ রানের বড় জয় পায় চিটাগাং। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হন টাইগার এই ওপেনার। ১০ বল মোকাবেলা করে ২ চারে তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১১ রান। তার এই ব্যর্থতার প্রভাবও পরে দলে। রংপুরের কাছে দল হেরে যায় ৯ উইকেটে। নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে আবারো ব্যর্থ তামিম। ব্যাট হাতে করেন ৩ রান। খুলনার কাছে দলও হেরে যায় ৪ রানে। পরের ম্যাচেই বরিশালের বিপক্ষে আবারো জ্বলে ওঠে তামিমের ব্যাট। তুলে নেন বিপিএলে নিজের সপ্তম অর্ধশত। ৫১ বলে ১০ চার ২ ছয়ে সাজানো ৭৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের পরও তার দল হেরে যায় ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে। নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে ঢাকার বিপক্ষে মাঠ নামে তামিমের দল। ব্যাট হাতে ৩৫ বলে করে ২৬ রান। আর দলও হেরে যায় ১৯ রানে। টানা চার ম্যাচ হারের পর রাজশাহীর পর জয় পায় চিটাগাং। তবে এ ম্যাচে মাত্র ৫ আসে তামিমের ব্যাট থেকে। পরের ম্যাচে কুমিল্লার বিপক্ষে জয়ের ধারা ধরে রাখে তামিমের চিটাগাং। নিজে ব্যাট হাতে করেন ৩০ রান। বরিশালের বিপক্ষে আগের বার অর্ধশত করা তামিমের ব্যাট থেকে এ ম্যাচে আসে মাত্র ১৯ রান। তবে পরের ম্যাচে রংপুরের বিপক্ষে ৯ উইকেটের জয় দিয়ে আগের বার হারের প্রতিশোধ নেয় চিটাগাং। আর ব্যাট হাতে নেতৃত্ব দেন তামিম। ৪৮ বলে ৯ চার ১ ছয়ে ৬২ রান নিয়ে অপরাজিত থেকেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। পরের ম্যাচে আরও বিধ্বংসী তামিম। খুলনার বিপক্ষে মাত্র ৫৯ বলে ৮ চার ১ ছয়ে ৬৬ রান নিয়ে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন তামিম। পরের ম্যাচে ঢাকার বিপক্ষে তামিমের ব্যাট থেকে আসে আসরের পঞ্চম অর্ধশত। ৫৯ বলে ৬ চার ৩ ছয়ে করেন ৭৪ রান। তবে দলকে জেতাতে ব্যর্থ হন। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে প্রথমবারের মত গোল্ডেন ডাক মারেন তামিম। আর দলও হেরে যায়। তবে এর আগেই শেষ চারে জায়গা পায় তামিমের চিটাগাং। কোয়ালিফায়ারের প্রথম ম্যাচে আবারো রাজশাহীকে সামনে পেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন চিটাগাং ভাইকিংসের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। এবারের আসরে ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে এক আসরে সর্বাধিক হাফ সেঞ্চুরি করার অনন্য রেকর্ড গড়েন এ ড্যাশিং ওপেনার। পাশাপাশি বিপিএলে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে হাজারী ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন তিনি। ড্যারেন স্যামির করা দশম ওভারের প্রথম বলে লং অফ দিয়ে চার মেরে নিজের এক হাজার রান পূরণ করেন অধিনায়ক। ক্যাসরিক উইলিয়ামসের বলে সামিত প্যাটেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তামিমের ইনিংস। তবে আউট হবার আগে ৪৬ বল মোকাবেলা করে ৬টি চারের সাহায্যে ৫১ রান করেন তিনি।চলতি আসরে এটা তামিমের ষষ্ঠ হাফসেঞ্চুরি। যা বিপিএলের এক আসরে কোন ব্যাটসম্যানদের সর্বাধিক হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড। এর আগে বিপিএলের প্রথম আসরে সিলেট রয়্যালসের হয়ে পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান কামরান আকমল। আর দ্বিতীয় আসরে পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন শামসুর রহমান শুভ। এছাড়াও এদিন এক আসরে সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ডটি গড়ার খুব কাছে গিয়েছিলেন তামিম। আর ১০ রান করতে পারলেই ছুঁতে পারতেন আহমেদ শেহজাদের রেকর্ড। ২০১২ সালে বরিশাল বার্নার্সের হয়ে ৪৮৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন এ পাকিস্তানি। তবে ২০১৩ সালে সিলেট রয়্যালসের হয়ে মুশফিকুর রহিম করা ৪৪০ রানের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আসেন এ ওপেনার।এবারের আসরে সর্বোচ্চ সংগ্রহকারী এ ব্যাটসম্যান। ১৩ ম্যাচে তার সংগ্রহ ৪৭৬ রান। বিপিএলে এখন পর্যন্ত তামিমের মোট সংগ্রহ ১০২৬ রান। তার উপরে রয়েছেন জাতীয় দলের সতীর্থ মাহমুদউল্লাহ (১০৮৮) ও মুশফিকুর রহীম (১১৭২)। বিপিএলের ফাইনালটা খেলতে পারলে হয়তো মাহমুদউল্লাহকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয়স্থানে উঠে যেতে পারতেন তিনি। ৯৪১ রান করে চতুর্থ অবস্থানে আছেন সাকিব আল হাসান। জাগো চ্যাম্পিয়নের ১৮তম সংখ্যা সম্পূর্ণ পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে…আইএইচএস/এমএস
Advertisement