খেলাধুলা

চারে চার হলো না মাশরাফির

বিপিএলটা কেন যেন এবার রঙ হারিয়ে ফেললো। এই কথাটার সঙ্গে কেউ কেউ দ্বিমত করতে পারেন। সেটা ব্যক্তিগত বিষয়। তবে বিপিএলে গত তিন আসরের দিকে যদি তাকান, তাহলে রঙ হারিয়ে ফেলার বিষয়টা সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন যে কেউ। বিপিএলের ফাইনাল। তার আগেরদিন ফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বী দু’দলের অনুশীলন, তার আগে কিংবা পরে সংবাদ সম্মেলন। যেখানে অবধারিতভাবেই একটি মুখের উপস্থিতি সবাইকে পুলকিত করে তুলতো, সে মিডিয়া পারসন হোক কিংবা অন্য কেউ। সেই মুখটি মাশরাফি বিন মর্তুজা। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের রঙিন জার্সির অধিনায়ক। এবার তিনি নেই। তার উপস্থিতি এবার প্রাণবন্ত করে তুলবে না বিপিএলের প্রেস কনফারেন্স। ফাইনালের আগে খুনসুটিতে মেতে উঠবেন না মাশরাফি। কারণ, এবার তার দল যে গ্রুপ পর্বের গণ্ডিই পার হতে পারেনি! সাত দলের মধ্যে ৬ষ্ঠ হয়ে বিদায় নিয়েছে প্লে-অফ রাউন্ডের আগেই।মাশরাফি মানেই বিপিএল কিংবা বিপিএল মানেই যে মাশরাফি ছিল- সে ধ্রুব সত্যটা ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে বিপিএলের এবারের আসরের মাঝপথ থেকেই। মাশরাফির দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স টানা হারতে হারতে বিধ্বস্ত। টানা ৫ ম্যাচ হারের পর অবশেষে ৬ষ্ঠ ম্যাচে জয়ের দেখা পেয়েছিল। এরপরও যদি ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারতো, তবুও একটা সম্ভাবনা ছিল; কিন্তু এক জয়ের পর আবারও হারিয়ে গিয়েছিল যেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। শেষ মুহূর্তে অসময়ে জ্বলে উঠেছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। টানা চারটি ম্যাচও জিতেছিল। তবে সে সব শুধুই পরিসংখ্যানকেই সমৃদ্ধ করার জন্য কিংবা পয়েন্ট টেবিলটা জমিয়ে তোলার জন্য; কিন্তু নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন তাতে বিন্দুমাত্রও হয়নি। সুতরাং, বিপিএলটা আর মাশরাফির হাতে থাকলো না। হারিয়ে গেলো অন্য জগতে।মানুষ ভাগ্যে বিশ্বাস করে। তবে, সেই ভাগ্য তৈরিও করে নিতে হয়। সব আয়োজন সম্পন্ন করার পরই কেবল ভাগ্যের আশা করা যায়। কারণ, একটি প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত ফল আসতে পারে ভাগ্যের ওপর নির্ভর করেই। শুধু সেরা আয়োজন করলেই সাফল্য শতভাগ নিশ্চিত হয়ে যায় না। না হলে, ফুটবল বিশ্বকাপে ৫ বার নয়, আরও অনেক বেশিবার শিরোপা জিততো ব্রাজিল। আর্জেন্টিনা দু’বার নয়, আরও বেশ কয়েকবার শিরোপা জিততে পারতো। বেশি দুরে যাওয়ার দরকার নেই। এবারের বিপিএলেই ঢাকা ডায়নামাইটস সবগুলো ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠে যেতো; কিন্তু তারা জিততে পেরেছে ১৩টির (এখনও পর্যন্ত) মধ্যে ৯টি। ‘ভাগ্য’ ফ্যাক্টর তাই অনেক বড় একটি বিষয়। সেখানে মাশরাফি দলে থাকলেই যে ভাগ্য হুমড়ি খেয়ে পড়বে, সে বিশ্বাসটা ভাঙারও কী দরকার ছিল? আয়োজন সম্পন্ন না করে কোনোমতে একটি দল মাশরাফির ঘাড়ে তুলে দেয়া হলো আর তিনি দলটাকে চ্যাম্পিয়ন করে নিয়ে আসবেন- এই ধরনায় দিবাস্বপ্ন দেখছিলেন কুমিল্লার ফ্রাঞ্চাইজি এবং সমর্থকরা। যেমনটা পেরেছিলেন গত আসরে।সুতরাং, ফল যা হওয়ার তাই হলো। বিপিএল খেললেই মাশরাফি চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবেন না। তার হাতে সে পরিমাণ রসদ থাকতে হবে। যুদ্ধ জয়ের রসদ তার হাতে ছিল না বলেই স্রেফ ভাগ্যের ওপর নির্ভর করা দলটির ভরাডুবি ঘটেছে। টানা পরাজিত হতে হতে শেষ পর্যন্ত গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে। আর এটাও সত্য যে ভাগ্য বিষয়টা এবার মাশরাফি কিংবা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স- কারো সঙ্গেই ছিল না। না হয়, গত আসরের সেরা পারফরমার আসহার জাইদির নাম কেন এবার উচ্চারিতই হলো না। গত আসরের সেরা ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস, মারলন স্যামুয়েলস, লিটন কুমার দাসরা কেন পুরোপুরি নিষ্প্রভ হয়ে যাবেন! কেন কুমিল্লার কোন বোলারই ঠিকমত জ্বলে উঠতে পারলেন না! সত্যিই ভাগ্য সঙ্গে ছিল না মাশরাফি এবং কুমিল্লার। না হয়, অন্তত প্লে-অফটা তো খেলতে পারতো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স!বিপিএলের প্রথম দুই আসরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। একবার সাকিব আল হাসান ছিলেন সঙ্গে। আশরাফুল ছিলেন দু’বার। শক্তিশালি দলও ছিল তার হাতে। অবধারিতভাবেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মত দল। মাশরাফির হাতেই তাই উঠেছিল ওই দুই আসরের শিরোপা। মাশরাফির হাত ধরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স চ্যাম্পিয়ন। এরপর তো ফিক্সিং কেলেঙ্কারি। বিপিএল নিজেই দু’বছর নির্বাসিত। ২০১৫ সালে আবার গড়ালো মাঠে। পুরনো মদ নতুন বোতলে করে পরিবেশন করা হলো দর্শকদের সামনে। দর্শক তো এই মদ পেলেই গেলে। সে কী পুরনো না নতুন বোতল- তা ভাবার কী সময় তাদের আছে? পেলেই হলো। সুতরাং, ফ্রাঞ্চাইজি পরিবর্তন হলো, দল পরিবর্তন হলো। খেলোয়াড় ভাগ-বাটোয়ারা হলো। মাশরাফি গেলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে। যে ফ্রাঞ্চাইজিটি কুমিল্লা হলো, তারা আগে ছিল সিলেট। বরিশাল হলো সিলেট। এভাবেই পরিবর্তন হয়ে বিপিএল আবার মাঠে গড়ালো। সাদা-মাটা একটি দল নিয়ে মাশরাফি এবারও চ্যাম্পিয়ন। টানা তিন আসরে তিনবার বিপিএল শিরোপা উঠে গেলো মাশরাফির হাতে। সেটা একই দলে থেকে হোক কিংবা দল পরিবর্তন করে। বিপিএল শিরোপা যেন অবধারিতভাবে মাশরাফির হাতে উঠবেই। পুরনো ফ্রাঞ্চাইজি, নতুন নাম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ধারণ করেই মাশরাফির ক্যারিশমায় চ্যাম্পিয়ন।এবারও কুমিল্লা ভেবেছিল, মাশরাফির ছোঁয়ায় ঢাকার মত টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হবে ভিক্টোরিয়ান্সই; কিন্তু ভাগ্যের ছোঁয়া আর পাওয়া হলো না। সাদামাটা দল নিয়ে আর বাজিমাতও হলো না। চারে চার হলো না মাশরাফিরও।জাগো চ্যাম্পিয়নের ১৮তম সংখ্যা সম্পূর্ণ পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে…আইএইচএস/এমএস

Advertisement