অর্থনীতি

জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে ৬টি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে

বাংলাদেশে সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিরা বলেছেন, বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে যেতে চাইলে যে ধরনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা অর্জনে ৬টি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। আর চ্যালেঞ্জগুলো হলো, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় জমির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, আর্থিক খাতে ঝুঁকিমোকাবেলা ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, রাজস্ব আহরণ বাড়ানো, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংক্রান্ত কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবেলা করা। সেই সাথে বাংলাদেশ এমডিজি পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা কিভাবে মোকাবেলা করবে তার উপরই নির্ভর করছে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। শেরেবাংলা নগরস্থ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সাথে বুধবার বিকেলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠকে এসব পরামর্শ দেয়া হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। আইএমএফ-এর এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগারীয় অঞ্চলের ডেপুটি ডিভিশন প্রধান রড্রিগো কিউবেরোর নেতৃত্বে এ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন আইএমএফ-এর বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ষ্টেলা কেনদেরাসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সভায় পরিকল্পনা সচিব সফিকুল আজম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. সামছুল আলমসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিবৃন্দ এ সময় উল্লেখ করেন, নানা বাধা-বিঘ্ন সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগুচ্ছে তা প্রশংসাযোগ্য। বাংলাদেশের ডেট টু জিডিপি পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম কম। এটা একটি সরকারের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে নির্দেশ করে। এখন বাংলাদেশের প্রয়োজন উল্লিখিত ছয়টি বিষয়ে সার্বিক সফলতাকে আরও বাড়ানো। আমরা বিশ্বাস করি, তাহলেই বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ অনেক বেড়ে যাবে। বিশেষ করে জমির প্রাপ্যতা বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগে অন্যতম প্রধান বাধা। আমরা এটা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ অবকাঠামো খাতে যেভাবে এগুচ্ছে তা অচিরেই শিল্প বিনিয়োগকে আকর্ষণ করবে। তবে ভূমির প্রাপ্যতার বিষয়টিসহ আর্থিক খাতে সংস্কার সরকারকে প্রাধান্য দিয়ে দেখতে হবে।মন্ত্রী আইএমএফকে জানান, সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও টেকসই রাখতে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১ কোটি ৩২ লাখ কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। সরকার চাইছে ২০২৫ সালের মধ্যে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে শতভাগ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে। সরকার আশা করছে উল্লিখিত পরিমাণ কর্মসংস্থান তৈরি হলে জাতীয় পর্যায়ে দরিদ্র্যের হার ১৬ ভাগে নেমে আসবে।এক্ষেত্রে, কর্মসংস্থান তৈরিতে সরকার যে কাজ করবে তা হলো- কারিগরিভাবে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলা। এজন্য, প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে একটি করে কারিগরি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করবে সরকার। এছাড়াও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরিতে সরকার ব্যয় বাড়াবে যাতে করে বেসরকারি খাত বেশি মাত্রায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারে। সরকার ফাস্ট ট্রাক প্রকল্পগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়নে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। সবশেষে যে কাজটি সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে তাহলো অভ্যন্তরীণ সম্পদ অর্জনে দক্ষতা দেখানো। এটা ঠিক আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত এখনও কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তবে আমরা এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যবস্থা করবো।আইএমএফ প্রতিনিধিবৃন্দ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কেমন চলছে তা জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, আমার কাছে গত ছয় মাসের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার চলে এসেছে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আমি তা প্রকাশ না করলেও এতটুকু বলবো এই অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে জিডিপি’র যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তা গত বছরের প্রথম আট মাসের তুলনায় অনেক ভালো। এমএএস/পিআর

Advertisement