আন্তর্জাতিক

প্রসব বেদনা নিয়ে লুকিয়ে ছিলেন মনোয়ারা

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে দেশটির সেনাবাহিনীর কঠোর অভিযানের মুখে পেটে সন্তান নিয়ে মনোয়ারা নামের এক রোহিঙ্গা নারী বসতভিটা ফেলে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। নাফ নদী পাড়ি দিয়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন টেকনাফে।মনোয়ারা বিবিসিকে বলেন, আগেই শুনেছিলাম পাশের গ্রামে যুদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু আমার শরীরের যে অবস্থা তাতে আমি আর কোথাও পালিয়ে যেতে পারিনি। এক পর্যায়ে মনোয়ারাদের গ্রামেও আক্রমণ হয়। তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিয়ে তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়।সন্তান-প্রসবের সময়ও ঘনিয়ে এসেছিল। তখন পেটের সন্তানকে বাঁচানোর তাগিদ তাকে তাড়া করে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে তিনি নিজের দেশ ছেড়ে পালান। কিন্তু পালিয়ে কোথায় যাবেন মনোয়ারা, এ নিয়ে তার মনে প্রশ্ন ছিল।তিনি জানতে পারেন, প্রতিবেশীদের অনেকে পালিয়ে টেকনাফে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। এমনই একটি দল তাকে পালাতে সাহায্য করে। সন্তান সম্ভবা মনোয়ারার বাড়ি মিয়ানমারের রাখাইনে।মংডুর পোয়াখালী এলাকার চাককাটা গ্রামে স্বামী নুর মোহাম্মদকে নিয়ে তার সংসার ছিল। অনাগত সন্তানের সুখ-স্বপ্নে যখন সে বিভোর তখন বুঝি নেমে এল তার জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম সময়। নভেম্বরের শেষ নাগাদ একদিন সকালে হঠাৎ তার বাড়ি-ঘরে ভাঙচুর চালানো হয়। মিয়ানমারের চলমান সহিংসতা থেকে রেহাই পান না মনোয়ারা এবং তার পরিবার।সে এক দীর্ঘ পথ- দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছিলেন তিনি। সাতদিন থেমে থেমে হেঁটে এসে পৌঁছান নাফ নদীর ধারে। গভীর রাতে পার হন নদী। কিন্তু অন্য সবাই নদী পাড়ি দিয়ে চলে গেলেও তিনি যেতে পারেননি। কারণ ততক্ষণে তার প্রসব বেদনা শুরু হয়ে যায়। একদিকে সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়; অন্যদিকে প্রসব বেদনা। চলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তিনি। সেই অবস্থায় টেকনাফ সীমান্তে প্যারাবনে দুদিন কাটান তিনি। আমার চিৎকার মনে হয় কিছু মানুষের কানে গিয়েছিল- থেমে থেমে বলছিলেন তিনি। তারাই মনোয়ারাকে উদ্ধার করেন। বাংলাদেশে এসে একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন মনোয়ারা।এসআইএস/পিআর

Advertisement