গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার পাঁচ বছরের চক্র ভেঙ্গে ফেলা একান্ত আবশ্যক। বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেন সোমবার এ কথা বলেছেন।কূটনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ডি-ক্যাব টক কানাডার হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেন ‘বিশ্বে ও বাংলাদেশে কানাডা : শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্বাধীনতা’ শীর্ষক বিষয়ে বক্তব্য দেন। ডি-ক্যাব টক অনুষ্ঠানটি সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়।৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে হিদার ক্রুডেন বলেন, ‘যদিও আমরা মেনে নিয়েছি, এটি সংবিধানসম্মত ছিল। তবে ৬ জানুয়ারি কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন বেয়ার্ড বলেছেন, ‘মোট সংসদীয় আসনের অর্ধেকেরও বেশি আসনে অবাধ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হওয়ায় কানাডা অত্যন্ত হতাশ হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে বিনা ভোটে এ সব আসন পূরণ করা হয়ছে।’কানাডার হাইকমিশনার বলেন, ‘এর আগে বহুবার বলেছি, গণতন্ত্রের ব্যাপ্তি নির্বাচনের চেয়েও আরও অনেক বেশি বিস্তৃত। গণতন্ত্রের জন্য বিচার ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন শক্তিশালী ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন। গণতন্ত্র চর্চায় সংবাদমাধ্যম ও সুশীল সমাজের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগের প্রয়োজন যাতে তারা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারে এবং সরকারকে জবাবদিহিতায় বাধ্য করতে পারে। গণতন্ত্রের যথার্থ অনুশীলনে সুশাসন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বৈধ ভিত্তি সুসংহত ও সুদৃঢ়করণে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের একত্রে কাজ করা অপরিহার্য। গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার পাঁচ বছরের চক্র ভেঙ্গে ফেলা একান্ত আবশ্যক।’বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে হিদার ক্রুডেন বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। বিএনপি আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। আশা করবো, এই আন্দোলনে কোনো সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড থাকবে না। উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের স্বার্থে বড় দুইটি দলের অনতিবিলম্বে সংলাপে বসা উচিত।’বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন ও নারায়ণগঞ্জের সাত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কানাডার হাইকমিশনার বলেন, ‘আইনের শাসন বা সুশাসন থাকলে বিনা বিচারে হত্যা, গুম, খুনের মতো ঘটনা ঘটে না।’তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে, গত বছরের কিছু কিছু ঘটনাপ্রবাহ মোটেও ইতিবাচক ছিল না। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকেই দুঃখজনকভাবে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে এবং প্রতিনিয়তই তারা তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। গত বছরের শেষভাগের পুরো সময়জুড়ে সহিংসতা প্রাত্যহিক জীবনের মর্মান্তিক নিয়মিত অংশ হয়ে পড়ে। সংখ্যালঘুরা বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়কে এ ধরনের অনেক আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। একটি সমাজের মাপকাঠি নির্ভর করে, এটি কীভাবে তার সবচেয়ে নাজুক, অরক্ষিত বা সবচেয়ে আক্রমণযোগ্য সদস্যের প্রতি আচরণ করে, তার উপর।’‘গত বছরের ধ্বংসাত্মক ঘটনাপ্রবাহকালে এ দেশের জনগণের ভূমিকা তাদের এই দৃঢ়তার উজ্জ্বল সাক্ষ্য বহন করে; কেননা সকল প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও দেশব্যাপী বাংলাদেশিরা তাদের কাজ অব্যাহত রেখেছে, জীবন ও জীবিকা নিরন্তর সচল রেখেছে।’বঙ্গবন্ধুর খুনী নূর চৌধুরীকে ফেরত দেওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। কানাডা এই ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি কানাডায় থেকে থাকলে তাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি কানাডার আইন অনুসারেই হবে।’উন্নয়ন প্রসঙ্গে হিদার ক্রুডেন বলেন, ‘স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রেও ক্রমাগত ধারাবাহিক অগ্রগতি হচ্ছে। পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস এবং এইচআইভি/এইডস ও যক্ষ্মার বিস্তার প্রতিরোধের মাধ্যমে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৪ ও ৫ নং লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ সঠিক পথেই এগোচ্ছে। বাল্যবিবাহ, অল্পবয়সে ও জোরপূর্বক বিয়ে বন্ধ করার লক্ষ্যে সম্প্রতি কানাডার পররাষ্টমন্ত্রী জন বেয়ার্ড দুই বছরে ২০ মিলিয়ন ডলার অনুদান প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। আমি এটা জানাতে পেরে খুবই আনন্দিত যে, এই কর্মসূচির আওতায় সহায়তা পাবে এ ধরনের ৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও অন্তর্ভুক্ত।’
Advertisement